শ্রীচরণকমলেষু কবিরত্ন
রবীন্দ্রনাথ-দাদাই,
ঠাকুর বাড়ি, কোলকাতা।
শ্রদ্ধাস্পদেষু দাদাই,
আমার জন্মদিন,আগামী ২রা অক্টোবর ২০২২।বাবা আমাকেই, নিমন্ত্রণ জানিয়ে
লিখতে বললো।বললো শেখো,কেমন করে বড়োদের প্রণাম জানাতে হয়।ঐদিন তোমার
উপস্থিতি,আমার কাছে খুবই
দরকার।তোমার পায়ে প্রণতি রেখে, নতুন একটা বয়:ক্রমে পা বাড়াবো।তুমি আসবেই সেদিন।
দাদাই, ভোরের প্রথম ট্রেন ধরে সকাল সকাল চলে
আসবে। আসার সময় পারলে অবশ্যই কোলকাতার রসগোল্লা এনো।না না গুড়ের রসগোল্লা নিয়ো
না।সাদা ধবধবে নরম তুলতুলে রসগোল্লা নেবে নিশ্চয়। শোনো, পিসির বাড়ীতে বিকেলের দিকে যেও।ঐদিনের
প্রথম পায়েস আমি তোমার হাতে খেতে চাই। তোমার জন্য গাঁয়ের গরুর দুধের ঘরেপাতা
মিস্টিদই,মা করে
রাখবে।
বাবা-মার
কথাগুলো সব তোমাকে বলা হয়ে গেলো
ব্যাস্।
এবার কিছু কথা বলি মনদিয়ে শোনো, গতসপ্তায়,দাদাই, স্কুলের বাংলা-শিক্ষক ম'শায়, তোমার লেখা একটি কবিতা " প্রথম
দিনের
সূর্য
" , শুরুর
প্রথম দিনে,একটা
প্রশ্ন করেছিলেন--
" আমি কে!" বা
" কে তুমি "। এমন প্রশ্নে,আমরা সব্বাই একে অপরের দিকে অবাক চোখে তাকালাম।স্যারের
দিকে তাকাবো কি, পাওয়ারফুল চশমার মাঝদিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন,যেনো আমার সবটাই জানা! উনি জানতেন আমি
তোমার আদরের একমাত্র নাতী। জানতো, স্যার কী সুন্দর
কবিতাটি আবৃত্তি করলেন—সবশেষে মনে হলো, একটা প্রচ্ছন্ন হতাশা বেরিয়ে আসছে।কেন
যে এতো হতাশার কথা লেখো!--আমরা সকলে কাছাকাছিইতো থাকি নাকি! হতাশা কে ভালোবাসো তাই
না!" প্রথম দিনের সূর্য/প্রশ্ন করেছিল/সত্তার নতুন আবির্ভাবে/কে তুমি!/মেলেনি
উত্তর।/বৎসর বৎসর চলে
গেলো/দিবসের শেষ সূর্য/ শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল পশ্চিমসাগর
তীরে/ কে তুমি! পেল না উত্তর! "
স্যার কী
সুন্দর করে বললেন জানো, মেলেনি
উত্তর আর পেলো
না উত্তর--কবি এই প্রশ্ন সংগে নিয়েই গোটা জীবনটাই কাটিয়ে ফেললেন।কতো
বিচিত্রসৃষ্টি,উনি
প্রকৃতির কবি। প্রকৃতি যে কথা বলে, তা কবির কাছে কতো নান্দনিক।কিন্তু, অবাক হই, কবি তাঁর দীর্ঘ- জীবনপরিক্রমায়, "আমি কে!" প্রশ্নের উত্তর,বোধকরি, আজো খুঁজে পাননি।পেতেন যদি,তাহলে আরো এক অসামান্য কবিতা-উপহার বাঙলা সাহিত্য পেতো। ঠিক
সেই মূহুর্তে,তোমার ঐ
ঋজু চেহারার দীপ্তি আমার সামনে ফুটে উঠলো।মনে মনে বলে উঠলাম "দাদাই তুমি
এখানে!"
তুমি এলে,সামনে বসেই জিজ্ঞেস করবো তোমাকে, সত্যিই কি আশা পূর্ণ হয়নি! মেলেনি
উত্তর! আরেক
সুন্দরের
হদিশ দিলেন স্যার, "এ এক
নিরুপম বিস্ময়; ধ্রুবালোক"। খুব জানতে ইচ্ছে করে,তুমি কেমন করে
অসামান্য বিস্ময়কর ধ্রুবালোক দেখলে! আরেকটু বড়ো হই "তোমার কাছে
নিয়মকরে কবিতা লিখতে শিখবো।আমি তোমার মতো কবিতা লিখবো"।
বাতাসের
এই নৈমিত্তিক বয়ে যাওয়া ছন্দেছন্দে অন্বিত।আমাদের জীবনটাও ঠিক এমন অন্বয়ে স্পন্দিত। জীবনের
কতো প্রশ্ন যে নিরুত্তর থেকে যায়।কতো কাটাছেঁড়া চলে,মন রক্তাক্ত যে হয়, তার ইয়ত্তা নেই।অবশেষে জীবন থেমে
দাঁড়ায় শেষের সিঁড়ি ধাপে। সকলকে এসে দাঁড়াতেই হয়।অবসান যে চির
ঋত্বিক।--কথাগুলো সব অজানা
গাম্ভীর্যে ঢাকা, বলছিলেন
মাস্টার ম'শায়।কিছু
বুঝেছি, কিছুকিছু বুঝতেই
পারিনি।
যাইহোক, তোমার সামনে বসে সব শুনবো। উত্তর চাইবো নিশ্চিত, "তুমি কে! " তোমার থেকে বেশি ভালো কে
আর বলতে পারবে বলো, তুমিই যে
এই কবিতার
স্রষ্টা।"তোমার আদি বাণী বহিছে তব আনন্দ।"
অনেকটা লিখেছি। আজ এখানেই রাখছি।ভালো থেকো,সুস্থ থেকো।নিয়ম করে নিম-করোলার রস
সেবন
কোরো।আর প্রত্যহ ভোরের বেলায় একটু মর্ণিং ওয়াক কোরো। প্রণাম নিও।আজ আসি কেমন।ইতি,
তোমার
আদরের মানু।
চিরদিনের
মহার্ঘ প্রশ্ন,কে
তুমি।গণ্যমান্য পন্ডিতবর্গ আজ পর্যন্ত এ
প্রশ্নের যথার্থ উত্তর পাননি।রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন ধরে ঐ একই
প্রশ্নের উত্তর পাননি।" প্রথম দিনের সূর্য" আজো তাই সমানে টেনে নিয়ে
চলেছে পাঠককে। এখানেই কবিতাটির স্বমাধুর্য প্রতিষ্ঠিত।এক বিশিষ্ট
ধ্রুবালোক।অনুসন্ধান নিরন্তর।কবিতাটি কী বিপুল সৌন্দর্যকে যে বুকে ধরে আছে!
0 মন্তব্যসমূহ