ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

ভ্রমণ: আল্পসের কোলে ছোট্ট গ্রাম শ্যামুনি -- রাহুল নাগ


ছোটবেলায় গ্রীষ্মের ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার স্মৃতি আমাদের সকলের মনেই এখনও উজ্জ্বল তবে এই গরমের ছুটির মহিমা কিন্তু দেশ-মহাদেশ হিসেবে অনেকটাই আলাদা  আমরা যেমন গরমের ছুটিতে তাপ্প্রবাহের দাবদাহে জেরবার হয়ে উঠি, সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারের দেশ ফ্রান্সে কিন্তু ঠিক এর উল্টো প্রায় সারা বছর শীতের প্রকোপ কমে গিয়ে ঝলমলে রোদ মনোরম পরিবেশ বেড়ানোর পক্ষে একেবারে উপযুক্ত ভাবছেন, কেন হঠাৎ ফরাসী দেশের কথা নিয়ে পড়লাম কর্মসূত্রে ফ্রান্সে থাকার জন্য এবারের গরমের  ছুটি ইউরোপেই কাটানোর সুযোগ হয়েছে তবে আরও একটা তফাত রয়েছে, জুন-জুলাই নয়, এখানে আগস্ট মাসে গরমের ছুটি শুধু যে ছোটদের স্কুল ছুটি থাকে তা নয়, বড়রাও নিয়ম করে গরমের ছুটি উপভোগ করেন আর ঠিক আমরা যেমন গরমের সময় ঠাণ্ডা জায়গা দার্জিলিং, গ্যাংটক, হিমাচল প্রদেশ আরও কত এমন জায়গায় যেতে ভালোবাসি, তেমনি এক জায়গা যেটি ফ্রান্সে রয়েছে,সেখানে ঘুরতে যাওয়ার গল্প বলবো

  ফ্রান্সের উত্তর-পূর্ব দিকে আল্পস পর্বতশ্রেণীর পাদদেশে এক ছোট্ট গ্রাম শ্যামুনি ফ্রান্স, ইতালি সুইজারল্যান্ড তিন দিকে ঘিরে রয়েছে এই ছোট গ্রামকে আমি ফ্রান্সের দক্ষিণ  পশ্চিমের বোর্দোতে থাকায়, ফ্লিক্সবাসে প্রথমে প্যারিসে দুদিন অ্যান্সিতে(প্যারিস থেকে ৫৬০ কিমি) একদিন কাটিয়ে শ্যামুনিতে হাজির হয়েছিলাম আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে অ্যান্সিতে থাকার সময় খবর পাই যে অ্যান্সি-শ্যামুনি-জেনেভাতে প্রবল ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে তখন মনে হচ্ছিলো, যদি আটকে পড়ি তড়িঘড়ি বাস পাল্টে তিন ঘণ্টা আগেই শ্যামুনি পোঁছে গেলাম অ্যান্সি থেকে, মাত্র দেড় ঘণ্টার পথ পেরিয়ে শ্যামুনির  সমুদ্র্তট থেকে উচ্চতা ১০৩৫ মি যেদিকেই তাকাই, আল্পস পর্বতের হাতছানি শ্যামুনির ভিতরে যে বাস চলে, তাতে কোন ভাড়া লাগে না যে হোটেলে রয়েছি ওদের একটা বাসকার্ড বিনামূল্যে পরিষেবার জন্য যথেষ্ট আগে যাওয়ার সুবাদে, বৃষ্টি পথে দেখতে হয়নি

আমি ওখানে এক হোস্টেলে(শ্যামুনি -ব্লা যুব ছাত্রাবাস) ছিলাম যাতে একই ঘরে চারজনের থাকার ব্যবস্থা জানলা খুললে ঠাণ্ডা হাওয়া্র পরশ, কুয়াশার প্রলেপ আকাশ ছোঁয়া বরফে ঢাকা পর্ব্তের দৃশ্য বৃষ্টির জন্য প্রথমদিন কুয়াশাতে পাহাড়ের অনেকটাই দেখা যাচ্ছিলো না তবে পরদিন ,সকাল হতেই ঝলমলে রোদে চারদিকে এক অপরূপ দৃশ্য দেখতে পেলাম রোপওয়ে চলছে, অনেকে প্যারাগ্লাইডিং করছেন এইসব দেখে মন উড়ুউড়ু হোস্টেলে থাকার সুবাদে রোপওয়ে চড়ার ব্যাবস্থা সুলভে হয়ে গেল একটি কার্ডের মাধ্যমে যাতে করে ওখানে যেকয়টি রোপওয়ে, টয়ট্রেন রয়েছে, সবেতে চড়া যাবে প্রথমেই গেলাম আইগুইলে-ডু-মিডি যেখানে রোপওয়ে চড়ে  আল্পসের উচ্চতম শৃঙ্গ -ব্লা দেখতে পাওয়া যায় রোপওয়ে প্রথমে ২৩০০ মি ওঠে রোপওয়ে চড়ার সময় শ্যামুনি গ্রামটা ছবির মত দেখতে লাগে দ্বিতীয় রোপওয়ে ৩৮৪২ মি নিয়ে যায় প্রথম রোপওয়ে থেকে নামার পর কুয়াশা ঘেরা চারপাশ প্রচণ্ড ঠাণ্ডার শিহরণ এই দুই মিলিয়ে এক দারুন অনুভূতি দ্বিতীয় রোপওয়ে থেকে নেমে লিফটে চড়ে কাঁচে ঘেরা ঘরে বরফের দেশ আল্পসের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে ঠিক কেমন লাগছিলো  তা ভাষায় বোঝানো যাবে না সেখানে  রয়েছে  রেঁস্তোরা, সংগ্রহশালা ও বিপণী ওই অংশটি তিনদিকে ফ্রান্স,ইতালি ও সুইজারল্যান্ডকে যুক্ত করে রেখেছে অত উঁচুতে বরফ পড়ার দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো ওই প্রথম ওর পর গেলাম মন্টেনভার্স হিমবাহ দেখতে সেও আরেক চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা প্রথমে টয়ট্রেনে করে ঘণ্টা দেড়েক চড়ে পৌঁছে যাওয়া যায় ১৯১০ মি, উপত্যকার নিসর্গ দেখতে দেখতে তারপর ফের এক রোপওয়েতে কিছুটা নিচে নামতে হল এরপর প্রায় সাততলা সমান সিঁড়ি ভেঙ্গে নেমে হিমবাহের দর্শন হল পাহাড়ের
গায়ে কত সালে হিমবাহের উচ্চতা কত ছিল, তার পরিসংখ্যান দেওয়া রয়েছে নিচে নামার সময়  হিমবাহের মধ্যে গুহা  তৈরি করে সকলের দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে সাথে বরফের ঘর, বেঞ্চি,পুতুল বানিয়ে রাখা রয়েছে এই দুই দেখে ফিরতে  ফিরতে প্রায় বিকেল সকালে যাওয়ার সময় এক বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে  ছিল, শ্যামুনির গির্জায় এক বাঁশির অনুষ্ঠান ভাগ্যক্রমে সেই গির্জা ছিল কাছেই,হেঁটেই পৌঁছে গেলাম টয়ট্রেন থেকে নেমে  হিমবাহ দর্শন সেরে পাহাড়ের কোলে বাঁশির মূর্ছনা শোনা এক কথায় অপূর্ব শ্যামু্নির  ঠিক মাঝে রয়েছে অনেক বিপণী যা দার্জিলিঙের ম্যালের কথা মনে করায় হোস্টেলে ফিরে এক বেলজিয়ান পর্যটকের সাথে টেবল টেনিস খেলে সন্ধে হল আমার ঘরে এক জার্মান পর্যটক ছিলেন যিনি দুদিন পাহাড়ের ওপর খোলা আকাশের নিচে কাটিয়ে এসেছেন ওনার অভিজ্ঞতা শুনতে শুনতে আমার শ্যামুনি ভ্রমণের কথা ভাবছিলামপরদিন সকালের বাসে শ্যামুনি ছেড়ে বেরোনোর সময় চোখ ফিরে ফিরে যাচ্ছিলো বরফে ঢাকা শৃঙ্গের দিকে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ