
তিহাসিক সত্তরের দশক। তখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ি। আমার দাদা কলকাতায় খুব সস্তার
এক ভাড়া বাড়িতে থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ. করছে। দাদার সঙ্গে তার এক বন্ধুও
একই উদ্দেশ্যে থাকে সেই ঘরে। দু’জনেই গরীব ঘরের সন্তান। প্রাইভেট টিউশন করে
কোনোমতে নিজেদের থাকা-খাওয়া আর পড়ার খরচ অতি দীনভাবে চালায়।
ঘরটা খুব পুরনো আর হতশ্রী। একটা ভাঙাচোরা বাড়ির দোতলায়। ঘরের দেওয়ালের
প্লাস্টার এখানে ওখানে খসে পড়েছে। মেঝের সিমেন্টের পুরনো আস্তরণ চটে ফেটে গেছে।
দোতলায় ওপাশে আরো অন্য একটা ছোটো ঘর আছে। দোতলায় ওঠার জন্য এ বাড়িতে কোনো
কংক্রিটের বা লোহার সিঁড়ি নেই।
খুব সেকেলে কেঠো নড়বড়ে একটা সংকীর্ণ সিঁড়ি আছে। সেটা বেয়ে সাবধানে উপরে উঠতে
হয়। উপরে উঠতে বা নিচে নামতে গেলেই অসুস্থ বয়স্ক সিঁড়িটা প্রত্যেকবারই দুলে উঠে
তার দুঃখ-কষ্টের সাতকাহন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে জানাতে থাকে। সেজন্য এই সিঁড়িটা দিয়ে
ওঠানামা করতে আমার একটুও ভালো লাগে না, ভয় লাগে, বিরক্তও লাগে। কিন্তু ওই সিঁড়ি
বেয়ে না উঠে আমার উপায় নেই। গ্রীষ্মের ছুটির সময়টা দাদার কাছে থেকে ইংরেজি পড়ব
বলে আমি কলকাতায় ওই বাড়িতে তখন গিয়েছি।
কলকাতার তখন বড়ো অ-সুখ, সে গভীর যন্ত্রণাদিগ্ধ, সর্বাঙ্গে তার রক্তাক্ত ক্ষত।
কলকাতার বাতাসে তখন বারুদের গন্ধ ছাপিয়ে উঠছে মানুষের রক্তের তীব্র আঁশটে গন্ধ।
সাধারণ মানুষের টাকায় কেনা বুলেট রক্তপান করছে তাদেরই সন্তানদের। পড়াশোনায়
সোনার টুকরো, মা-বাবার বুকের মানিক ভীষণ নিঃশব্দে বুদবুদের মতো বিলীন হয়ে
যাচ্ছে। পিছনে রেখে যাচ্ছে করুণ দীর্ঘ প্রলম্বিত হা হা শূন্যতা।
সপ্তাখানেক হয়ে গেল দরকারী বইপত্র নিয়ে দাদার কাছে এসেছি। কলকাতার পথঘাট আমার
কাছে সবই একরকমের মনে হয় বলে একা একা বিশেষ বেরোতাম না। বাইরে বেরোলেই আনাড়ি
আমি হাস্যকরভাবে ফেরার পথ গুলিয়ে ফেলতাম। তাছাড়া এখন তো সন্ধ্যার পর বাইরে একা
একা ঘোরাঘুরি করা তেমন নিরাপদও নয়।
তিনদিন আগে এখান থেকে পাঁচটা বাড়ি পরে একটা সরু গলির ভিতর একটা কুড়ি-একুশের
ছেলে মাঝরাত থেকে সকাল হওয়া পর্যন্ত শুয়েছিল। তার নগ্ন কচি পিঠের বাঁদিকে বুলেট
ভরা ছিল। সকাল হবার অনেক পরে পুলিশের গাড়ি এসে তাকে নিয়ে গিয়েছিল। না, সে এই
এলাকার কোনো ছেলে নয়। কিন্তু তার পর থেকে এই পাড়াটা একটু বেশি থমথমে হয়ে
গেছে।
এক সন্ধেবেলা মেঝেতে বসে আমরা তিনজনে তেল-লঙ্কা মাখা মুড়ির টিফিন খাচ্ছি।
খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এমনসময় হঠাৎ বাইরে রাস্তার কোথাও পুলিশের হিংস্র
হুইসিল তীব্রস্বরে বেজে উঠল। তার পরই অনেকগুলো ভারী বুটের শব্দ কাছাকাছি দাপিয়ে
বেড়াতে লাগল। এবার অবধারিত ভাবে এখানকার প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে পুলিশের
চিরুণিতল্লাশি চলবে।
বয়স্ক বা মহিলাদের তেমন ভয় নেই। কিন্তু কমবয়সিদের মধ্যে যাকেই সন্দেহজনক বলে
মনে ওরা করবে তাকেই বিনা প্রশ্নে তুলে নিয়ে যাবে। সবাই জানে একবার কাউকে পুলিশ
তুলে নিয়ে গেলে সে কবে ফিরবে অথবা ফিরবে কিনা তা বলা যাবে না।
হঠাৎ বাড়ির একতলায় পুলিশী বুটের শব্দ হল। তিনজনেই চমকে উঠলাম। নীচের ঘরে
পুলিশের তল্লাশি শুরু হল। তাহলে এর পরেই উপরেও অবশ্যই তল্লাশি হবে। নিজেকে
নিশ্চিন্ত ও ব্যস্ত দেখাবার জন্য দাদার বন্ধু হাতের কাছে একটা অভিধান পেয়ে
সেটাই খুলে মেঝেতেই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে তাতে ডুবে গেল। দাদা তীব্র চাপা স্বরে
বলে উঠল -
‘ভাই! কিছু না কিছু একটা কর্। মেক বিজি ইওরসেল্ফ এনি হাউ!’
তারপর সে লাফিয়ে তক্তাপোশে উঠে একটা পুরনো ম্যাপের বই পেয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে সেটাই
খুব মন দিয়ে পড়তে লাগল। আমি কী যে করব, কীভাবে নিজেকে ব্যস্ত দেখাব তা ভেবেই
পেলাম না। শুধু আমার কচি বুকটার মধ্যে দুম দুম করে হাতুড়ির ঘা পড়তে লাগল।
এবার কাঠের সিঁড়িটা ভারী বুটের শব্দের সকাতর জানান দিল। এখানে রান্নাঘর বলে
কিছু নেই। এই ঘরটারই একপাশে রান্না করা হয়। সেখানে এঁটো থালাবাসনের পাশে রাখা
একটা গামলায় দুপুরের ভাতের ফ্যান ছিল। তাতে আনাজের খোসা, দুপুরের এঁটোকাঁটা,
নোংরাটোংরা ফেলা ছিল। সেখানে থেবড়ে বসে পড়ে দিশেহারা আমি সেই গামলাটা দুহাতে
ধরে সেসব নোংরাভরা ফ্যান অকারণে অন্য একটা গামলায় কাঁপতে কাঁপতে আস্তে ঢালতে
লাগলাম।
পুলিশী বুটের নির্দয় শব্দ তুলে ওরা এল – তিন জন। একজন সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে
পড়ল। সরু বারান্দা ধরে অন্য দুজন আমাদের দিকে নজর বোলাতে বোলাতে এগোলো। দুজনেরই
ডানহাতে খোলা রিভলভার আর বাঁহাতে টর্চ। আমাদের ঘরটার ওপাশে যে ঘরটা আছে সেই
ঘরটা তখন তালাবন্ধ ছিল। যারা ওঘরে ভাড়ায় থাকে তারা তখনও ফেরেনি।
প্রচণ্ড এক লাথিতে পুরনো দরজার পাল্লাদুটো ভেঙে ছিটকে গেল। ওরা দুজন ভিতরে
ঢুকে দাপাদাপি করে তল্লাশি করতে লাগল। একপাশে একটা আলনা ছিল। দড়াম করে সেটা
মেঝেতে উলটে ফেলে দিল, যদি তার পিছনে কেউ লুকিয়ে থাকে। ঘরটা তছনছ করে ওরা
বেরিয়ে এল। রাস্তার দিকের বারান্দাটাও বাদ দিল না। তার পর আবার আমাদের দিকে
তাকাতে তাকাতে নীচে নেমে গেল।
ঘরের ভিতর তিনটে রক্তমাংসের পাথুরে মূর্তিতে এতক্ষণে একটু একটু করে প্রাণের
স্পন্দন ফিরে আসতে লাগল। পুলিশের গাড়ি চলে যাবার পর শুনেছিলাম সেদিনের সেই
সন্ধ্যায় সে পাড়া থেকে মোট তিনজন ছেলেকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছিল। পাড়ার লোকেদের
কাছে শোনা গেল তারা নাকি নকশালপন্থী ছিল না।
তবুও তল্লাশির সময় তারা ভয়ে পড়ে এখানে ওখানে লুকিয়ে পড়েছিল বলেই তাদের ধরে
নেওয়া হয়েছিল। অতএব আমাদের তিনজনের কেউ যদি ভয়ে পড়ে কোথাও লুকানোর চেষ্টা করতাম
তবে আমাদেরও তুলে নেওয়া হত। যাদের তুলে নিয়ে গেল তাদের কবে ছেড়ে দেওয়া হবে
তাদের মা-বাবার এই বুকভাঙা প্রশ্নটা সমানে উচ্চারিত হতে থাকলেও তখনকার দিনে
সেসব নিতান্তই এক অবান্তর প্রশ্ন ছিল। পুলিশ অবান্তর প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়
না।
সেই আতঙ্কভরা ঘটনার দিনদশেক পরের কথা। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা তিনজনেই যে যার
পড়ালেখা করতাম। সেরকম এক রাতে পড়তে পড়তে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য বই ছেড়ে উঠে
রাস্তার দিকের বারান্দায় খানিকক্ষণের জন্য এসে দাঁড়িয়েছি। তখন রাত একটা হবে। যে
বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছি সেই দোতলার বারান্দাটা অন্ধকার। তবে বারান্দার নীচে
রাস্তার বাতিদণ্ডে আলোটা জ্বলছে বলে সেই আলোর একটা আভাস আছে উপরে। চারপাশের
প্রায় সব বাড়ির আলো স্বাভাবিক ভাবে অনেক আগেই নিভে গেছে।
ডানদিকে বা বাঁদিকে যতদূর চোখ যায়, শুনশান ম্লান রাস্তাটা নিঃশব্দে নির্জন হয়ে
শুয়ে আছে। যে কোনো দিক দিয়ে এইবার হয়তো খুব চুপিসাড়ে হুমদো মস্ত কালো মাথাটা
বাড়িয়ে দিয়ে কালো পুলিশভ্যান ঢুকে আসবে! তারপরেই পিলপিল করে ভারী বুটপরা
পা-গুলো নেমে আসবে। তীব্র হুইসিল বাজিয়ে দৌড়োদৌড়ি করে ঢুকে পড়তে থাকবে আশেপাশের
দুর্ভাগা বাড়িগুলোর মধ্যে...
সেরাতের সেই আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। নীরব রাতের নির্জনতা দেখলেই আমার
ভয় হতে থাকে হঠাৎ কোথা দিয়ে চলে আসবে বা মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে কালো কালো
ভয়ানক পুলিশভ্যান। হঠাৎ সেই রাতের সেই গভীর নিস্তব্ধতার মধ্যে ডানদিক দিয়ে একটা
দূরাগত হালকা শব্দ কানে আসতেই চমকে উঠে সেদিকে ঘুরে তাকালাম। সেদিকে তাকিয়ে
সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত একটা দৃশ্য চোখে পড়তে দারুণভাবে আঁতকে উঠলাম।
নীচের গভীর নিদ্রিত রাস্তাটা মোটেই চওড়া নয়। রাস্তার বদলে এটাকে সামান্য
প্রশস্ত একটা গলিপথ বললেই ভালো হয়। বাঁদিকের রাস্তা খানিক এগিয়ে গিয়ে একটা বাঁক
নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে। ফলে বাঁদিকের রাস্তায় বেশিদূর চোখ চলে না। বাঁদিকের
রাস্তাটা খানিক এগিয়ে একটা অপেক্ষাকৃত চওড়া রাস্তায় গিয়ে শেষ
হয়েছে।
কিন্তু ডানদিকের রাস্তাটা অনেকটা দূর গিয়ে আর একটা এইরকম সরু রাস্তায়
জুড়ে গেছে। ডান দিকে রাস্তাটা প্রায় সরলরেখায় প্রলম্বিত আছে বলে সেই দিকে
অনেকটা দূর পর্যন্ত নজরে আসে। তখন কলকাতার রাস্তার বাতিদণ্ডে কম ওয়াটের কয়েল
লাগানো বাল্ব জ্বলতো। বাতিদণ্ডগুলোর ফিউজ হয়ে যাওয়া বাল্ব নিয়মিত বদলানো হত
না। ফলে সেই সরু রাস্তা বা গলিপথের কোথাও আলোর ভরসা, কোথাও বা আলো-আঁধারির
আতঙ্ক জমাট হয়ে আছে। রাস্তার দুপাশের ঘরবাড়ির সবই দরজা জানালা বন্ধ করা। ফলে
সেগুলো থেকেও কোনো রকম আলোর আভাস পর্যন্ত বেরিয়ে আসছে না।
রাস্তার সেই আলো আঁধারের কাটাকুটি ফুঁড়ে একটা ছেলে দৌড়ে এদিকে আসছে। তবে সে
একা নয়। প্রায় তার সঙ্গেই একটু তফাতে থেকে তার পিছনে দৌড়ে আসছে আরও তিনটি ছেলে।
ওরা কি নকশাল? ওরা তাহলে কি কোনো অপারেশন বা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সেখান থেকে
পালিয়ে আসছে? নাকি নতুন কোনো অপারেশনে যাচ্ছে ওরা? সামনের ছেলেটি কি ওদের
লিডার? ব্যাপারটা ঠিকমতো না বুঝেও কেন জানি না আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম।
প্রথমজন আমার সামনে দিয়ে যখন পেরিয়ে যাচ্ছে তখন মনে হল সে আমার চেয়ে দু’তিন
বছরের বড়ো হবে। পিছনের তিনজনের বয়সও ওই একইরকম হবে। বাঁদিকের রাস্তাটা যেখানে
ঘুরে গেছে তার আগের একটা বাড়ির বাইরের দরজার সামনে পৌঁছে গিয়ে আকুল দুটো হাতে
সেই দরজাটা চাপড়াতে চাপড়াতে প্রথম ছেলেটা চিৎকার করতে লাগল -
‘মা!- মাগো - মা -!!’
এতক্ষণে আমার মনে হতে লাগল সামনের ছেলেটা মোটেই ওদের লিডার ধরনের কিছু নয়।
আসলে ওকেই কোনো কারণে তাড়া করে পিছনের ছেলেগুলো আসছিল। ওরা সবাই তাহলে পরস্পরকে
চেনে বা জানে! তবে কি পিছনের ওরা কয়েকজন এখন সামনের ছেলেটির সম্ভাব্য ঘাতক?
সেজন্যই সামনের ছেলেটা প্রাণভয়ে পালাতে পালাতে এবার তার নিজের বাড়িতে চলে আসতে
পেরে ভিতরে ঢুকে প্রাণে বাঁচবার জন্য তার মাকে অমনভাবে ব্যাকুলভাবে
ডাকছে!
এতক্ষণে পিছনের তিনজন এসে তাকে নিঃশব্দে ঘিরে ফেলেছে। প্রথমজনের মা বা
তাদের বাড়ির অন্য কেউ জেগে উঠে বাইরের দরজাটা খুলে তাকে ভিতরে যাবার সুযোগ করে
দেবার আগেই, সেই তিনজনের একজন বড়ো ছুরি বা ওই জাতীয় কিছু একটা বের করে সেটা
দিয়ে প্রথমজনের গলায় সজোরে কোপ বসালো বলে মনে হল। ছেলেটা করুণ আর্তনাদ করে
রাস্তায় পড়ে গেল। তার পরেই ফটাশ করে একটা শব্দ হল। পরে শুনেছিলাম ওটা নাকি
পাইপগানের শব্দ ছিল।
কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই নিজেদের কাজ সমাধা করেই সেই হত্যাকারীরা বাম দিকেই দৌড়ে
অদৃশ্য হয়ে গেল। রাশি রাশি রক্তের মধ্যে তাদের সদ্য ভূতপূর্ব কমরেড স্থির হয়ে
শুয়ে রইল। নিজেদের বাড়ির দরজা ছুঁয়েও তার নিজের বাড়ি ফেরা হল না। এরমধ্যে
বাইরের সেই দরজাটা খুলে গেছে। নারীকণ্ঠের বা মাতৃকণ্ঠের একটা তীব্র তীক্ষ্ণ
চিৎকার চারপাশের স্তম্ভিত বাতাস চিরে ছড়িয়ে পড়তে লাগল -
‘বাবু রে! – বাবু রে! বাবু...!!’
পরদিন বিকেলের দিকে একটা বিশেষ প্রয়োজনে রাস্তায় বেরিয়েছিলাম। সেই বাড়িটার পাশ
দিয়ে যাবার সময় শুনতে পেলাম একটা ভাঙা স্খলিত অন্তহীন সেই একই দুটি শব্দের
মর্মান্তিক আর্তনাদ -
‘বাবু রে! – বাবু রে! বাবু....!!’
নকশাল আন্দোলনের সেই চূড়ান্ত সময়টাতে সঠিক ও উপযুক্ত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে
উত্তাল তারুণ্য দিশা হারিয়ে মাথা খুঁড়ে মরছিল দিকশূন্যতার নির্মম অশ্মে।
অন্দোলনের মূল লক্ষ্য এক থাকলেও তারা একতা হারিয়ে বিভিন্ন গোষ্টী এবং
প্রতিগোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যাচ্ছিল। সেই সুযোগে হু হু করে নকশাল আন্দোলনের
মধ্যে আন্দোলন-বিরোধীদের পরিকল্পিত উপায়ে ঢুকে আসছিল সমাজবিরোধীদের নোংরা
বেনোজল। ক্রমশ সম্পূর্ণ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল নকশাল আন্দোলনের অভিমুখ।
সরকারী তরফেও ভয়ংকর ধরণের সর্বাত্মক নীতিহীন দমন নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল।
পুলিশ বাহিনিও সেসময় নকশাল গ্রেপ্তারের বদলে নকশাল হত্যায় মেতে উঠেছিল।
তাছাড়া নকশালরা সেসময় এমন কয়েকটি কাজ করেছিল যা সাধারণ মানুষ মোটেই ভালোভাবে
নেয়নি। যেমন, নির্বিচারে সমস্ত বরেণ্য মনীষীদের স্থাপিত মূর্তি ভেঙে দেওয়া বা
মূর্তিতে আলকাতরা লেপে দেওয়া, নির্বিচারে ‘খতম’ চালিয়ে যাওয়া, কর্তব্যরত
নিরস্ত্র নিরীহ ট্রাফিক পুলিশদের হত্যা করা, সবরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর
চালানো ইত্যাদি।
অবধারিত ফলাফল হিসেবে একসময়ের বিপুল জনসমর্থন ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছিল
আন্দোলনকারীরা। জনসমর্থন হারানো নকশালরা ক্রমশই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছিল, যা যে কোনো
গণ-আন্দোলনের বিনাশ নিশ্চিত করে তোলে। শেষ পর্যন্ত নকশাল আন্দোলনও সেই অনিবার্য
পরিণতি এড়াতে না পেরে একসময় শোচনীয় ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে কালের গর্ভে বিলীন
হয়ে গ্রল।।
0 মন্তব্যসমূহ