ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

টুকরো টুকরো কথার গুচ্ছ-নির্বাচিত গল্প -পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়


  • বই- নির্বাচিত গল্প 
  • লেখক- সুমনা সাহা
  • প্রকাশনী- কচি পাতা 
  • প্রথম প্রকাশ- জানুয়ারী ২০২৪
  • প্রচ্ছদ- অসিত কুমার সাহা
  • অলংকরণ- হোমাগ্নি সাহা
  • পৃষ্ঠা- ১৯২
  • মুদ্রিত মূল্য- ২২৫/-


মাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত ছোট থেকে বড় বিভিন্ন ঘটনা ঘটেই চলে। বলা যায় ছোট ছোট ঘটনার সমাহারেই আমাদের নিত্যদিনের সময় গড়িয়ে যায়। সকালবেলার বাড়ির জল খাবারের টেবিলের সাংসারিক আলোচনা থেকে শুরু করে পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানের গুলতানি অবধি খুঁটিনাটি কত অসংখ্য চরিত্র ও তাঁদের টুকরো টুকরো সংলাপে তৈরি হয়ে যায় কত কত কাহিনী। সে সমস্ত কাহিনীতে প্রেম-ভালোবাসা, দুঃখ-বেদনা, হাসি-আনন্দ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, বিরহ-বিচ্ছেদ, জন্ম-মৃত্যু সহ মানব জীবনের সকল অনুভুতি-অভিজ্ঞতাই মজুদ থাকে। নবীন লেখিকা সুমনা সাহা এই সমস্ত টুকরো কথার ভিতর থেকেই ছোট ছোট ঘটনাকে তুলে এনে এক গুচ্ছ গল্পের আকারে পেশ করেছেন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর লিখিত এবং বহুদিন ধরেই প্রকাশিত হওয়া এই সমস্ত গল্পের মধ্যে থেকে ঊনত্রিশটি বাছাই করা গল্প নিয়ে কচি পাতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছে সুমনার “নির্বাচিত গল্প”। 


সহজ সরল ভাষায় লিখিত গল্পগুলো পড়তে বেশ ভালোই লাগে। বিভিন্ন গল্পে সুমনা চেষ্টা করেছেন স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, সন্তান স্নেহ, বন্ধুদের মধ্যের বন্ধুত্ব ও প্রেম, ঈর্ষা, লোভ ও অন্যান্য ভিন্ন ভিন্ন ধরণের পারস্পারিক সম্পর্ক ও সম্পর্কের জটিলতাকে পেশ করার। অচেনা চরিত্রের ভিড়ে পাঠক হঠাৎই পেয়ে যেতে পারেন নিজেদের কোনও এক চেনা চরিত্রকে। নিজেদের আশে পাশে থাকা পরিচিত চরিত্র ও তাঁদের নিয়েই তৈরি হওয়া হয়ত বা খুবই জানা কোনও ঘটনাকে লেখিকা নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও দৃষ্টিভঙ্গীতে সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠকের দরবারে পেশ করেছেন। প্রায় প্রতিটি গল্পের শেষে উক্ত গল্পটি কবে কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল তার উল্লেখ করা আছে, যা বেশ ভালো লাগে।  

ইদানিং কালে রহস্য রোমাঞ্চ তন্ত্র মন্ত্র ভৌতিক ঘরানার বইয়ের ভিড়ে সামাজিক বিষয় নিয়ে লেখা বই প্রায় নেই বললেই চলে। আর যা অল্প সংখ্যক বই সামাজিক প্রেক্ষাপটে লিখিত হয় তা প্রকাশকদের অনীহা ও পাঠকের অনিচ্ছায় হারিয়ে যায়। এত বাধার পরেও যে সামান্য কটি বই পাঠকের হাতে এসে পৌঁছায়, সেগুলোকে সব সময়েই সামাজিক বিষয় নিয়ে লেখা ছোট গল্পের ক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্যের যে দিকপাল লেখকরা ছিলেন তাঁদের লেখার সাথে এক অসম প্রতিযোগিতায় সামিল হতে বাধ্য করা হয়। যা সত্যিই অনুচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা কথা নবীন লেখকদেরও মনে রাখা উচিত যে ছোট গল্পকে সুন্দর করে তোলার প্রাথমিক শর্তগুলো কি হয়। অল্প সংখ্যক শব্দের মাধ্যমে যাতে একটি ঘটনা প্রবাহের সঠিক-স্পষ্ট ও স্থায়ী চিত্র পাঠক মনে অঙ্কিত হয়ে যায়। সুমনার লিখিত গল্প গুচ্ছের মধ্যে কিছু গল্প এই শর্ত পূরণ করেছে। বিশেষ করে অতি ছোট গল্প, যেগুলোকে প্রায় অণুগল্প বলা যেতে পারে সেগুলো মন ছুঁয়ে যায়।  যেমন-‘মুক্তি’, ‘পলার বাড়ি’, ‘শোধবোধ’। এছাড়া ‘বন্ধু’, ‘রং’,‘গগনবাবুর লেখালিখি’, ‘ফুল’ প্রভৃতি গল্পগুলোও মনে রেখে দেওয়ার মত। কয়েকটা গল্পের সমাপ্তি বড্ড বেশি অনুমানযোগ্য। কিছু গল্প আরেকটু বাস্তবধর্মী হলে ভালো লাগত। সম্ভবত পত্র পত্রিকার শব্দ সংখ্যার সীমা বেঁধে দেওয়ার কারণে ইদানিং কালে গল্পের বাঁধন আলগা হওয়া বড় বেশি চোখে পড়ে। এক্ষেত্রেও বেশ কিছু গল্পে এই ত্রুটি নজরে পড়ে। ফলে গল্পের সমাপ্তি অত্যন্ত ক্লিশে হয়ে যায়। 


বইয়ের পৃষ্ঠা ও ছাপার গুণগতমান বেশ ভালো। বানান ভুল প্রায় নেই বললেই চলে। যা মন ভালো করে দেয়। বইয়ের নামকরণে নতুনত্ব থাকলে ভালো লাগত।  শুধুমাত্র বহুল ব্যবহৃত “নির্বাচিত গল্প” নামকরণ খানিকটা দায়সারা লাগল। নতুন বইয়ের নামকরণ আরেক্টু চিন্তা ভাবনা করে দেওয়া হলে আকর্ষক হত। প্রচ্ছদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার লক্ষণীয়, নতুনত্ব বা আকর্ষণীয় কিছু নেই। এই সব কিছু উপেক্ষা করা গেলেও বইয়ের অলংকরণ বেশ বিরক্তি তৈরি করে। অলংকরণ AI প্রযুক্তির সাহায্যে বানানো হওয়ায় অসঙ্গতি ও অসংখ্য ত্রুটি নজরে পড়ে। ছোট গল্পের সংকলনের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা গল্পের জন্য পৃথক ছবি না থাকলেও হয়। যদিও বা ছবি ব্যবহার করা হয় তাও বিস্তারিত না দিয়ে স্বল্প রেখাচিত্রে শুধুমাত্র ইঙ্গিতবাহী ছবি হলেই বেশি মনোগ্রাহী হয়। এছাড়া একটি বইয়ের প্রতিটি ছবিই এক ঘরানার বা এক স্টাইলের হওয়াও বাঞ্ছনীয়।  এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করার সময় পৃথকভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন হয়। আশা করব পরবর্তী মুদ্রণে এই ধরণের ভুল ত্রুটি ঠিক করা হবে।  

মাঝে মাঝে একঘেয়ে ভুত প্রেত ও জটিল রহস্যের রক্তারক্তি কাণ্ডে ভরা গল্প উপন্যাসের জগত থেকে বেড়িয়ে স্বাদ বদল করতে ইচ্ছা হয়। আবার সামাজিক গল্প প্রেমী পাঠক বড় বড় উপন্যাস পড়ার ফাঁকে ছোট ছোট গল্প পড়ে টুকরো অবসর বিনোদন করতেও চান। সেই সমস্ত সময় ও পাঠকের জন্য এই বই অত্যন্ত উপাদেয় ও আদর্শ হিসাবে গণ্য হবে। রোজকার খুব সামান্য ঘটনাকেও লেখিকা মনোরম ভাবে পেশ করেছেন যা পড়লে মন ভালো করে দেয়। নতুন লেখিকার সৎ প্রয়াসকে জানাই শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা। আগামী দিনে আরও ভালো গল্প কাহিনী আমরা পড়তে পারব এই আশা রাখি।



Document

পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মধ্যবিত্ত পরিবারের অতি সাধারণ গৃহবধূ। কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিবেশের ছোঁয়ায় শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে আগ্রহ ও ভালোবাসা। বর্তমানে স্বদেশ থেকে বহুদূরে বিদেশে এসে সেই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের অভাববোধ থেকে তৈরি হওয়া শূন্যতা পূরণের অবলম্বনরূপে লেখার শুরু। পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও লেখা পড়তে ক্লিক করুন


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ