ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

পাঠ প্রতিক্রিয়া: সব্যসাচী চক্রবর্তী রচিত ‘আফ্রিকায় সব্যসাচী’ -রতন কুমার দাস


বইয়ের নাম- আফ্রিকায় সব্যসাচী
লেখক- সব্যসাচী চক্রবর্তী
প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ
মুদ্রিত মূল্য- ১৩০ টাকা
সাইজ- ডিমাই 

ইমেলায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করেই চোখে পড়েছিল বইটা। প্রচ্ছদটা দেখে কেমন একটা শিহরন জেগেছিল মনে। কারণ প্রচ্ছদে দেখতে পেয়েছিলাম ছোট থেকে পর্দায় দেখে আসা ফেলুদা ওরফে সব্যসাচী চক্রবর্তীর মুখ।বইয়ের বিষয় আফ্রিকা ভ্রমণ। বইটি ক্রয় করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল। তারপর বইটি একাধিকবার পড়েছি।সত্যি কথা বলতে যতবার পড়েছি, এই বই ঘিরে মুগ্ধতা আরো বেড়েছে বই কমেনি।

কথা বলছি, মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বই “আফ্রিকায় সব্যসাচী”-এর। হার্ডকভারে মোড়া এই বইটির দুই মলাটের মধ্যে স্থান পেয়েছে সব্যসাচী চক্রবর্তীর আফ্রিকা ভ্রমণের কাহিনী।সব্যসাচী চক্রবর্তী নিজে একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ হওয়ার পাশাপাশি পছন্দ করেন বন্য জীবজন্তুর ছবি তুলতে। এ কথা আগেও জেনেছি ওনার দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকার পড়ে। বলা বাহুল্য, তিনি ছিলেন এ কাজে পারদর্শী। তাঁর হাতে তোলা বন্য জীবজন্তুর তাঁর ফোটোগ্রাফির প্রেমে অনেকেই পড়েছেন।বাদ গেল না বিখ্যাত ক্যামেরা কোম্পানি “নিকন”ও। “ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি”-তে সিদ্ধহস্ত সব্যসাচীকে “নিকন” কোম্পানি থেকে অনুরোধ রাখা হয় আফ্রিকা ভ্রমণের। উদ্দেশ্য আফ্রিকার গেম রিজার্ভের জীবজন্তুর সুন্দর সুন্দর ফোটোগ্রাফি।বন্যজীবন প্রেমী লেখক সব্যসাচীর এভাবে পৌঁছে যাওয়া হয় আফ্রিকা। সেখানে গিয়ে বন্য জীবজন্তুর সাফারি করতে গিয়ে কি কি অভিজ্ঞতা হলো,তার কাহনই রয়েছে অষ্টআশি পৃষ্ঠার দুই মলাটের মধ্যে। একেবারে বৈঠকি আড্ডার ছলে বর্ণনা করে গেছেন তাঁর এই আফ্রিকা ভ্রমণের কাহিনী।মাসাইমারা গ্রামের কথা,লেক নারুকু,অ্যাম্বোসেলি ন্যাশানাল পার্ক, সেখানকার নানা জীবজন্তুর কথা, জঙ্গল সাফারি থেকে শুরু করে মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোর অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্যের প্রাণজুড়ানো বর্ণনা রয়েছে এই বইটির প্রতিটি অধ্যায়ের মধ্যে।

বইটির ভাষা আর বর্ণনা এতটাই সরল ভাষায় লেখা,পড়তে গিয়ে একেবারেই হোঁচট খেতে হয় না। ভীষণই সাবলীল ভঙ্গিতে পাঠক একটানাই পড়ে নিতে পারবে বইটি। সাথে রয়েছে বইটিতে আফ্রিকার বিভিন্ন জীবজন্তুর সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফস,যা তাঁরই হাতের ক্যামেরায় তোলা। ছবিগুলো অনবদ্য লেগেছে।ইম্পালা,ফ্লেমিঙ্গো, সাদা গন্ডআর,উইল্ডেবীস্ট,ডিক্ ডিক্,শিকারি ছিল,জেব্রা, আফ্রিকার হাতি,সিংহ কোনো কিছুই বাদ পড়েনি সেই ছবিগুলিতে।মাসাইদের গ্রামে ভ্রমণ, সেখানকার আদিবাসী জীবন,বন্য জীবজন্তুর গ্ৰেট মাইগ্ৰেশনের কথা উঠে এসেছে বর্ণনায় বার বার।বইটির শেষের দিকে লেক নারুকু এবং মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোর অপূর্ব দৃশ্যের বর্ণনার ছবি সহযোগে আলোচনা রয়েছে।সেটা পড়তে পড়তে সত্যিই মনে হচ্ছিল এখনই যদি পৌঁছে যাওয়া যেত আফ্রিকার সেই স্থানে। বইটির আরো একটা আকর্ষনীয় বিষয়,বইটির ভূমিকা লিখেছেন স্বয়ং সত্যজিৎ পুত্র “সন্দীপ রায়”। বইটি পড়তে পড়তে একাধিক বার নিজেকে কল্পনা করেছি “তোপসে” রূপে। যেন “ফেলুদা” আরো এক অভিযানে বেরিয়েছে, তবে এবার সেটা দেশ পেরিয়ে আফ্রিকায়।

ভ্রমণের বই এর আগেও অনেক পড়েছি। কিন্তু এমন জীবন্ত বর্ণনা খুব কমই পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। সব থেকে বড়ো কথা, ছেলেবেলায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “চাঁদের পাহাড়” পড়া থেকে যে আফ্রিকা নিয়ে মনের মধ্যে এত আগ্রহ ছিল,তার অনেকটাই নিবৃত্ত হয় এই লেখা পড়ে।
ভ্রমণ বৃত্তান্তের নিরিখে ছোট বড়ো সকলেই এই বইটি সমানভাবে উপভোগ করতে পারবেন বলে মনে হয়।
বইটির দামও বর্তমান বাজার অনুপাতে বেশ কম। সাধ্যের মধ্যে। পৃষ্ঠার মানও বেশ ভালো।
পরিশেষে,“ফেলুদা” গল্পের রেশ ধরেই সিধুজ্যাঠার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয় এ বই আসলে “গোল্ডমাইন”।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ