
প্র
ত্যেক হিন্দু বাড়িতেই একটি ঠাকুরঘর, কিম্বা স্থানাভাবে যেকোন ঘরেই
গৃহদেবতার একটি সিংহাসন, তারও অভাবে নিদেন পক্ষে ঘরের মধ্যে কোনও একটি
কুলুঙ্গিতে রাখা থাকে প্রিয় দেবতার পট বা মূর্তি। ব্রাহ্মণ পরিবারে আমার জন্ম,
ফলে আশৈশব পুজো অর্চনার আবহে অভ্যস্ত। শিশুকে যা শেখানো হয়, তাই শেখে। কিন্তু
বড় হয়ে নিজের যুক্তিতর্ক দিয়ে সে বুঝতে চায়, কাকে ভক্তি করি, কেন করি।
পারিবারিক বিশ্বাস, পরম্পরা এসব ছাপিয়েও অনেক সময় অন্তরের জ্ঞানতৃষ্ণা প্রবল
হয়ে উঠে ঠেলে দেয় নিরন্তর এক সন্ধানে। অন্তরের সেই আর্তির প্রেরণাই ভক্তি ও
তর্কহীন বিশ্বাসকে একপাশে রেখেও খোলামনে সবটুকু দেখতে চায়। এই দেখা প্রকৃতপক্ষে
এক খোঁজ—মন্দিরে স্নান করে শুচিবস্ত্রে যাওয়ার নিয়ম পালনের থেকেও মন্দিরের
দেওয়ালে খোদিত সুদূর অতীতের কোনও শিল্পী মনের অপরূপ সৃজন দেখার আগ্রহ যখন বড়
হয়ে দাঁড়ায়। মন্দিরের চার-দেওয়াল কি শুধু উপাসনাকেই ধরে রাখে? কত যুগের কত
গল্পও তো বলে। হিন্দু পরিবারে জন্ম বলেই সুযোগ হয়েছে হিন্দু মন্দিরগুলোই দর্শন
করার, তাই আমার লেখায় মসজিদ বা গির্জার কথা থাকবে না, একদিক থেকে তা
ধর্মনিরপেক্ষ বিশাল ভারত-ভূখণ্ডের সর্বপ্রকার উপাসনা-পদ্ধতি, উপাসক-সম্প্রদায়
তথা বিভিন্ন ধর্মমতের উপাসনালয়ের সামগ্রিকতাকে ধরতে না পারার অসম্পূর্ণতা দোষে
দুষ্ট। আমার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে পঠিত ও লব্ধ জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার
করেই ভারতের দেব-দেউল নিয়ে লেখার এই চেষ্টা। কোনও ধর্মীয় মতবাদের সমর্থন,
বিরোধিতা বা পক্ষপাত কিম্বা কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েও এটি লেখা হয়নি।
ভারতের প্রাচীন কয়েকটি মন্দির, সেসব গড়ে ওঠার নেপথ্য ইতিহাস, মন্দির ঘিরে নানা
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কিংবদন্তী—এসমস্তই এই লেখার উপজীব্য। এই প্রসঙ্গে স্বামী
বিবেকানন্দের একটি বাণী স্মরণ করি—“The moment I have realized God sitting in the temple of every human body,
the moment I stand in reverence before every human being and see God in
him – that moment I am free from bondage, everything that binds vanishes,
and I am free”.
পর্ব ২
নানা উত্থানপতনের সাক্ষী, ৩০০০ বছরের প্রাচীন মুণ্ডেশ্বরী মন্দির
- মন্দিরের স্থাপত্য ও বিগ্রহ
মন্দিরের আকৃতি অষ্টভূজাকার, নাগারা স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। গর্ভগৃহের
মাঝখানে চতুর্মুখ শিবলিঙ্গ বিনীতেশ্বর বিরাজ করছেন, দেবী মুণ্ডেশ্বরীর
মহিষমর্দিনী মূর্তি রয়েছে পাশের কুলুঙ্গিতে। অন্যান্য মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা
মূর্তির তুলনায় এই মূর্তিটির পার্থক্য হল, এখানে রণং দেহি ভাব নেই, বরং মা
যেন মহিষকে দমন না করে তার পিঠে চেপে আছেন এবং প্রসন্ন বদনা। মন্দিরে
অষ্টদলাকার একটি যোনী পীঠও রয়েছে। এ থেকে তান্ত্রিক পূজাপদ্ধতির ইঙ্গিতও
পাওয়া যায়। আবার বৌদ্ধযুগে যোনীপীঠকে বুদ্ধের ‘বোধি’ বা চৈতন্যালোকিত হৃদয়
বলে বিশ্বাস করা হতো এবং ঐ ত্রিকোণ প্রতীকের উপর স্তুপ নির্মাণ করা
হতো।
অষ্টকোণ মন্দিরের প্রতিটি কোণ পদ্মের এক একটি দল বা পাপড়ির মতো। হিন্দুধর্মে
পদ্ম ফুল পবিত্রতা, জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক চেতনা বা যোগজ কুণ্ডলিনী শক্তি
জাগরণের বিশেষ প্রতীক বলে মানা হয়। পদ্মের এক একটি দল বা পাপড়ি অষ্টমাতৃকার
এক একজন প্রতিভূ বলে মনে করা হয়। পূর্বে ব্রাহ্মণী, দক্ষিণ-পূর্বে মাহেশ্বরী,
দক্ষিণে কৌমারী, দক্ষিণ-পশ্চিমে বৈষ্ণবী, পশ্চিমে বারাহী, উত্তর-পশ্চিমে
ইন্দ্রানী, উত্তরে চামুণ্ডা ও উত্তর-পূর্বে নারসিংহী। প্রত্যেক দেবী ভারতের
বিভিন্ন শাক্ত মন্দিরে পূজনীয়া এবং তাঁরা অষ্ট দিশার প্রতিনিধিত্বকারী
সুরক্ষাদায়িনী ঐশ্বরিক শক্তির প্রতীক। মন্দিরের অষ্টকোণ নকশাটি শ্রীনগরের
শঙ্করাচার্য মন্দিরের নকশার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এছাড়াও মন্দিরে আছেন
দ্বারপাল দেবতাদের মূর্তি, গণেশ, কার্ত্তিক, গঙ্গাদেবী ও সূর্যদেবের মূর্তি।
মূল প্রবেশদ্বারের পশ্চিম দিকে আছে শিববাহন নন্দীর বিশাল মূর্তি। মন্দিরের
আদি শিখরটি ভেঙে গেছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পাওয়া গেছে শিখরের ভাঙা অংশের
অর্ধেক আমলক। প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের চূড়ায় এই খাঁজ কাটা চক্রের মতো নকশা,
যা দেখতে আমলকির মতো, একটি বিশিষ্ট নকশা।
মন্দিরের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একটিমাত্র পাথর কুঁদে তৈরি। এই
অঞ্চলের গ্রানাইট পাথর ছেনি ও হাতুড়ি দিয়ে কেটে খাঁজ তৈরি করে একটির পর একটি
অংশ খাঁজে খাঁজে বসিয়ে সম্পূর্ণ মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে। এই ধরনের
স্থাপত্যকে ড্রাই ম্যাসোনারি বলা হয়, প্রাচীন ভারতে মন্দির নির্মাণে এই
পদ্ধতির যথেষ্ট প্রয়োগ ছিল। আবার নাগারা শৈলির বিশেষত্ব হল একটি চতুষ্কোণ
ভিত্তি ও গম্বুজাকৃতি ছাদের শীর্ষে শিখর বা চূড়া অথবা চক্র। সাধারণত নাগারা
শৈলির পাথরের মন্দির দক্ষিণ ভারতে দেখা যেত, বাংলা বিহার অঞ্চলে সেকালে মাটি
ও ইটের তৈরি মন্দিরেরই প্রাধান্য ছিল। সেদিক থেকে ঐ অঞ্চলে মুণ্ডেশ্বরী
মন্দিরটি একেবারে আলাদা। মন্দিরের স্থাপত্য থেকে আরম্ভ করে বিগ্রহ, ও
প্রাচীনত্ব সবকিছুই যেমন গবেষক ও পণ্ডিতদের মুগ্ধ করে, তেমনই অগণিত
দর্শনার্থীরও আকর্ষণের বিষয়বস্তু।
মুণ্ডেশ্বরী মন্দিরের বিগ্রহের কথায় ফিরে আসি। মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ
করলে মাঝখানে একটি চতুর্মুখ শিবলিঙ্গ দেখাতে পাওয়া যায়, নাম বিনীতেশ্বর। লোকে
বলে, এটি ৩৪৮ খ্রিস্টাব্দে দণ্ডনায়ক গোমিভট্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর আগে,
৩-৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এটি ছিল বিষ্ণু মন্দির। নারায়ণ বা বিষ্ণু মূর্তিটি
কালের প্রভাবে হারিয়ে গেছে, বা চুরি হয়েছে বা ভেঙে গেছে। মোটকথা, মূর্তিটি
এখন আর পাওয়া যায় না। এর পরবর্তী গুপ্তযুগের শাসকরা ছিলেন শৈব উপাসক। তাঁদের
প্রভাবে ৩৪৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মন্দিরের অন্যতম দেবতা বিনীতেশ্বর শিব আসেন,
মূল বিগ্রহ নারায়ণের সঙ্গে তিনিও পূজিত হতে থাকেন। সপ্তম শতাব্দীতে ঐ সমস্ত
অঞ্চলে শৈব সাধনার ধারা প্রবল হয়ে ওঠে এবং বিনীতেশ্বর হয়ে ওঠেন মন্দিরের মূল
পূজিত বিগ্রহ। পরবর্তী কালে কাইমুর পার্বত্য অঞ্চলের চিরো নামের এক আদিম
উপজাতি সম্প্রদায় ক্ষমতায় আসে। তারা ছিল শক্তির উপাসক। স্থানীয় প্রাচীন
বাসিন্দাদের বিশ্বাস চন্ড ও মুণ্ড নামে তাঁদের পূর্বপুরুষদের দুই ভাই ছিল,
যাদের লোকে চিরো রাজা বলত। এই চিরোরা ছিল দৈত্য রাজ শুম্ভ ও নিশুম্ভের
সেনাপতি। মার্কণ্ডেয় পুরাণের কাহিনী অনুসারে এঁরাই মা দুর্গার হাতে নিহত
হয়েছিলেন আর সেই কাটা মুণ্ড থেকেই উত্থিতা হয়েছিলেন দেবী। এই মুণ্ড বা মুণ্ডা
রাজার নামেই এই পাহাড়ের নাম মুণ্ডেশ্বরী এবং সেখানে অধিষ্ঠারী দেবী মা
মুণ্ডেশ্বরী।
কালো পাথরের দেবী মূর্তির চোখ দুটি বড় বড় সোনার পাত দিয়ে তৈরি। স্থানীয়
বাসিন্দাদের বিশ্বাস, মা মুণ্ডেশ্বরী তাঁর শরণাগত ভক্তদের সমস্ত অশুভ প্রভাব
থেকে মুক্ত করেন। মন্দিরের পরিবেশে একটি এমন ইতিবাচক স্পন্দন আছে, যে এখানে
উপস্থিত হয়ে লোকের দৈহিক ও মানসিক আধিব্যাধি দূর হয়ে যায়।
- আশ্চর্য প্রথা—সাত্বিক বলী
এই মন্দিরের আছে আরেক আজব কাহিনী, রক্তহীন বলী। মা মুণ্ডেশ্বরীর পূজায় দেবীকে
প্রসন্ন করে তাঁর আশীর্বাদ লাভের জন্য শাক্ত নিয়ম মেনে একটি ছাগ নিবেদনের
ব্যবস্থা আছে বটে, কিন্তু বলী দেওয়া হয় না। নির্দিষ্ট দিনে বলীর পশুকে স্নান
করিয়ে ফুলের মালা পরিয়ে দেবীর সামনে নিয়ে আসা হয়। পূজারী দেবীর বিগ্রহ স্পর্শ
করেন, বলীর বেদিতে ছাগের উপর ঢেলে দেওয়া হয় দেবীর প্রসাদী চাল। হঠাৎ পশুটি
জ্ঞান হারায় ও মৃতবৎ পড়ে থাকে। কিন্তু মন্ত্রপাঠের পর পূজারী যখন আবার দেবীকে
স্পর্শ করেন, পশুটি যেন এক জাদুমন্ত্রের মতো গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ে ও সেটাকে
মুক্ত করে দেওয়া হয়। মনে করা হয়, মা এই বলী গ্রহণ করেছেন এবং প্রাণিটির জীবন
ফিরিয়ে দিয়েছেন। বিজ্ঞানের যুক্তি এই অদ্ভুত ঘটনার কাছে হার মানে। ভারতের
প্রাচীনতম এই মন্দিরে এমনই রক্তপাতহীন বলী চলেছে বছরের পর বছর, যুক্তি দ্বারা
যার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না।
- মুণ্ডেশ্বরী মন্দির-- ইতিহাস ও কিংবদন্তী
প্রাচীন ভারতের অধুনা পাটনা শহরের কাছে ছিল রামগড় গ্রাম। বর্তমানে স্থানটি
বিহারের কাইমুর মালভূমি উপত্যকা অঞ্চল, বিন্ধ্য পর্বতের পূর্ব ভাগ এটি।
কাইমুর জেলা সদর শহর ভাবুয়া থেকে মন্দিরটি প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে, প্রায়
৬০৮ ফুট উঁচু পিওয়ারা পাহাড়, স্থানীয় নাম মুণ্ডেশ্বরী, তারই চূড়ায় চীনদেশের
জ্ঞানী পরিব্রাজক আলো জ্বলতে দেখেছিলেন।
এই সুপ্রাচীন মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে লোক পরম্পরায় প্রবহমান অজস্র
কিংবদন্তী ও রহস্য। সবথেকে প্রাচীন গাথা শ্রীরামচন্দ্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
লোকে বলে, তিনি বনবাসকালে এই মন্দিরটি দর্শন করেছিলেন। স্বপ্নে মা
মুণ্ডেশ্বরী রামকে দর্শন দিয়ে একটি মন্দির নির্মাণ করতে বলেন। দেবীর
সম্মানার্থে শ্রীরাম তাঁর দিব্যশক্তি প্রয়োগ করে একটিমাত্র পাথরে মন্দিরটি
গড়ে দেন। মন্দিরের ইতিহাসে মিশেছে বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলমান ও উপজাতি ধর্ম
সংস্কৃতি। মার্কণ্ডেয় পুরাণে আমরা মেধস ঋষির আশ্রমে রাজ্যহারা রাজা সুরথকে
ভগ্ন হৃদয়ে উপস্থিত হতে দেখি। তিনি ছিলেন মিথিলার রাজা। সুরথ রাজা ও সমাধি
নামের এক সংসার তাপদগ্ধ বৈশ্যকে ঋষি মার্কণ্ডেয় শোনালেন মহামায়া চণ্ডীর কথা।
রাজাকে তিনি নাকি হারানো রাজ্য ফিরে পেতে শিব ও শক্তির উপাসনা করবার নির্দেশ
দিয়েছিলেন। তাঁকে বলেছিলেন, “যদি কোন পাহাড়ের চূড়ায় একটি দিব্য জ্যোতির দর্শন
লাভ করো, ওটাই হবে তোমার আরাধনার স্থান। ওখানে মন্দির নির্মাণ করে তুমি
সশক্তিক মহামায়ার উপাসনা করো।” রাজা বনে বনে সন্ধান করে মুণ্ডেশ্বরী পাহাড়ে
দেখলেন সেই দিব্য জ্যোতি, যা হিউয়েন সাঙও দেখেছিলেন। সেখানেই রাজা মন্দির
তৈরি করেন। মন্দিরের চূড়ায় তিনি স্থাপন করেছিলেন একটি চক্র, যার নাকি অলৌকিক
ক্ষমতা ছিল। ধ্বংসাবশেষ এর মধ্যে চক্রটি পাওয়া গিয়েছিল। মার্কণ্ডেয় পুরাণের
কাল ধরলে মন্দিরের বয়স প্রায় ২৫০০ বছর।
আরেকটি কিংবদন্তী আছে। সেটি বলে যে, বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম এই মন্দিরটি
নির্মাণ করেছিলেন। পিতা জমদগ্নির আদেশে তিনি মাতা রেণুকাকে হত্যা করেছিলেন।
পরে সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে মুণ্ডেশ্বরী পাহাড়ে তপস্যা করেন ও শিব ও
শক্তির পুজো করেছিলেন। মন্দিরের কাছে একটি হ্রদ তৈরি করেছিলেন তিনি, যা
পরশুরাম কুণ্ড নামে আজও আছে।
মহাভারতে উল্লেখ আছে যে, কৌরব ও পাণ্ডবদের যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষাদানের জন্য
দক্ষিণা হিসাবে গুরু দ্রোণাচার্যকে অহিক্ষেত্রের শাসক পদ পুরস্কার দেওয়া
হয়েছিল। অহিক্ষেত্র ছিল ‘নাগ’ উপজাতির এলাকা, যাকে শংখবতী বা ছত্রবতীও বলা
হতো। পরে কর্ণ এই এলাকা অধিকার করেছিলেন। পুরাকালের এই অহিক্ষেত্র বর্তমানে
আহিনৌরা, মির্জাপুর, শোনভদ্র ও কাইমুর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। শিলালিপি থেকে এই
অঞ্চলের শাসক রূপে উদয়সেনের নাম পাওয়া যায়, নাগ বংশের শাসক নাগসেন, বীরসেন
প্রভৃতির নামের সঙ্গে যার মিল আছে। নাগবংশী রাজপুতদের এই সমগ্র অঞ্চলের উপর
যথেষ্ট প্রতাপ ছিল এবং প্রায় ৫২ টি গ্রাম তারা শাসন করতেন। চতুর্মুখ শিবলিঙ্গ
ও গণেশ মূর্তির গলায় নাগ-যজ্ঞোপবীত দেখা যায়, যেটি ‘নাগা’ সম্প্রদায়ের
প্রতীক। পরবর্তী কালে এই সমস্ত অঞ্চলে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে আসে, তাই
গুপ্তযুগের স্থাপত্যে ‘নাগারা’ শৈলী লক্ষ্য করা যায়, যেমন- রামগড় দুর্গ ও
রামগড় গ্রামে ‘কীর্তি-মুখ’ (ভারতীয় মন্দিরের তোরণ-দ্বার বা অন্যান্য স্তম্ভে
খোদিত গজ-মুখ, হংস-মুখ, সিংহের মাথা, মকর-মুখ ইত্যাদি), পদ্মকবচ, ফুল-পাতার
নকশা খোদিত জলপাত্র বা সশাখ কলস, ভূর্জপত্রের পুঁথি ইত্যাদির নকশা।
যাই হোক, এই সমস্ত পৌরাণিক গল্পের মধ্যে থেকেই উঠে আসে এক অনস্বীকার্য সত্য।
দেবতা বা শক্তি এক, যুগে যুগে শাসক বদলায়, আসে নতুন ধর্মমত। মন্দিরের
বিগ্রহের স্থান বদল হয়, বাইরের নকশা পরিবর্তিত হয়, কিন্তু মন্দির বা দেবালয়
বা উপাসনার স্থানটি থেকে যায়। ধ্বংসস্তুপের পাথরে আর শিলালিপিতে লেখা থাকে
পুরনো ইতিহাসের গল্প, উপাসকের উপাসনাই বাঁচিয়ে রাখে ইতিহাস।
(ক্রমশ)
0 মন্তব্যসমূহ