ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

রাজ সিংহাসন এখনও পেলের দখলেই - রিয়ুজাকি স্বপ্নময়



পেলে নাকি ভগবান? ১০০০টা গোল করেছে?!

ফালতু খেলোয়াড়। ঢপ-বাজ। অ্যাকচুয়ালি আজকালকার দিনে কাউকে ভুলভাল দাগিয়ে দিলেই হল।

 

মানুষ মেসি-রোনাল্ডোর উন্মাদনা ফুট কাটে 'Pele scored goals in his backwards garden... না জেনেশুনে মতামত না রাখাই ভালো। আজকের মেসির সঙ্গে সেদিনের রেলিগেশন খেতে চলা দল নাপোলিকে তুলে ধরা মারাদোনার তুলনা হয় না। ইউসেবিওর দুঃস্থ শৈশব ও গোলে খিদের সামনে ফিকে হয়ে আসে সি আর সেভেনও।

 

সেরকমই কিছু গল্প আছে অভিনেতা, ব্রাজিলের প্রাক্তন ক্রীড়া মন্ত্রী এবং ফুটবল সম্রাট পেলেকে নিয়ে। দেখা যাক পেলের পারফর্ম্যান্স ঠিক কতটা ইমফ্যাক্ট রেখেছিল সমসাময়িক বিশ্বে।

 

বড় দল মানেই আমাদের জেনারেশন বোঝে ইউরোপীয় দল। পেলে ব্রাজিলের স্যান্টোসের হয়ে যে 'সন্তোষজনক' খেলাটা ইউরোপে খেলে গেছে তা বেশ এরকম..

 

বেলজিয়ান ক্লাবের বিরুদ্ধে ১১ ম্যাচে ৮টা জয়, ১১টা গোল।

 

ইংলিশ ক্লাবের বনামে ৯ ম্যাচে ৫টা জয়, ১টা গোল। বিপক্ষে ছিল চেলসি, অ্যাস্টন ভিলা, নিউ ক্যাসল, ওয়েস্ট হ্যাম সহ তৎকালীন বড় দলগুলো।

 

ফরাসি ক্লাবের সমানে ৯ ম্যাচে ৮টা জয় ১১টা গোল।

 

লাতিন ক্লাবের সাথে ৩৮ ম্যাচে ২৯ জয়। ৪১টা গোল। ২টো হ্যাটট্রিকের একটি ছিল ইন্টারমিলানের বিপক্ষে। তাও চার গোলের..

 

স্প্যানিশ ক্লাবের বিরুদ্ধে ১৪ ম্যাচে ৫টা জয়, ৩টে ড্র। ৯টা গোল। বার্সেলোনার বিপক্ষে ৩ গোল, রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ১টা..

 

জার্মান ক্লাবের বিপক্ষে ১৯ ম্যাচে ১৬টা জয়৷ ২৯টা গোল। ৪টি হ্যাটট্রিক।

 

এছাড়াও যুগোস্লাভিয়া, পর্তুগাল, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, আয়ার্ল্যান্ড, হাঙ্গেরি, গ্রিস, হল্যান্ড, সোভিয়েত রাশিয়া, অস্ট্রিয়ার ক্লাবগুলোর বিপক্ষে সর্বমোট ৩৪টা গোল আছে পেলের নামে।



পেলেকে কেন্দ্র করে তাদের দল সাজাতে চেয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ, এ.সি মিলানের মতো একাধিক ইউরোপিয়ান জায়েন্ট। যদিও স্যান্টোস তাতে রাজি হয়নি। পেলেকে ব্রাজিলে রেখে দেওয়ার জন্য চাপ ছিল সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও ১৯৬১ সালের তৎকালীন ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট পেলেকে "জাতীয় সম্পদ" হিসেবে ঘোষণা করেন। অতঃপর তাকে "রপ্তানি করা যাবে না" বলে একটি ডিক্রি জারি করা হয় তৎকালীন ফুটবল পরিবেশে দলবদল করতে চেয়ে সাওয়াল করা ফুটবল সম্রাটের পক্ষেও সহজ ছিলনা। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে ক্রীড়া মন্ত্রী হয়ে অবস্থা অনেকটা শিথিল করেন পেলে।

এখন দুঃখের কথা স্যান্টোস ইউরোপের দল ছিল না, নইলে ভরা মরশুমে পেলের পা থেকে বল জালে জড়ানো মুহুমুহু ঘটত। কেনোনা, স্যান্টোসের হয়ে পেলে ৬৫৯ ম্যাচে ৬৪৩ গোল করেছেন। সময় ও কম্পিটিশনের তারতম্যের জন্য তুলনা করা পাপ, তবু বলি মেসির বার্সালোনার হয়ে ৪৭৪ টি গোল করতে লেগেছে ৫২০টি ম্যাচ

এমনকি ৩৫ বছর বয়সে প্যারিস সাঁ জাঁর হয়ে লিওনেল মেসির রয়েছে ৩৯ ম্যাচে ১৩টি গোল এবং ২৪ টি অ্যাসিস্ট। ৩৫-৩৭ বছর বয়সের সময়ে পেলে আমেরিকার কসমসের হয়ে ১০৭ ম্যাচে ৬৬টি গোল করেন। অবশ্যই মেসির ক্ষেত্রে কম্পিটিশন বেশি। প্রতিপক্ষ টীম যথেষ্ট শক্তিশালী।

কিন্তু এফেক্টিভনেস দেখতে গেলে লিওনেল মেসি ও পেলে দুজনই নিজ নিজ টীমের ক্ষেত্রে প্রাণ ভোমরা রোল প্লে করেছেন একটা ক্লাব, তার ভবিষ্যৎ ও নতুন প্রজন্মের জন্ম এদের প্লে মেকিং এর ছোঁয়া পেয়েই আন্তর্জাতিক ফিল্ডেও ব্রাজিলের হয়ে পেলের গোল সংখ্যা ৯২ ম্যাচে ৭৭ যা ব্রাজিলের সর্বকালের টপস্কোরার আসনে রোনাল্ডো-রোমারিওর সামনে রেখেছে তাঁকে। ব্রাজিলের গলি গলিতে শিশু তখন চাইত পেলে হতে। স্বপ্ন দেখত তার মতনই ফ্রান্সের ডিফেন্স ভেঙে ঝকঝকে দুটো হ্যাট্রিক করার

তাঁর ম্যাচ প্রতি গোল করার গড় (০.৮৪) অনায়াসে ছাপিয়ে যায় মেসি(০.৭৯) এবং রোনাল্ডোকে (০.৭২)।


ব্যালন ডি অর? না পেলের নামে একটিও নেই। কেনোনা আগে এটি শুধুমাত্র ইউরোপীয় খেলোয়াড়দের দেওয়া হত। ফরাসি ফুটবলের একটি সমীক্ষাতে প্রকাশিত হয়েছে, যদি গোটা বিশ্বের সবাইকে ধর্তব্যে রাখা হত তাহলে পেলে ১৯৫৮-৬১, ৬৩-৭০- মোট ৭টি ব্যালন ডি অর পেতেন। মারাদোনা পেতেন ২টি। গ্যারিঞ্চা, রোমারিও পেতেন একটি করে। অনেকে হয়তো বলবেন ইউরোপীয় লিগে না খেললে অত কম্পিটিশন পাওয়া যায়? এখনকার হিসেবে হয়তো সত্যি, ইউরোপীয় ফুটবল সবচেয়ে ইনটেন্স। কিন্তু আগে ব্রাজিল ও আর্জেন্টাইন লিগ যথেষ্ট কঠিন ছিল। আজকের দিনে দিবালা, নেইমাররা সবাই ইউরোপে খেলছে যেমন, তেমনই তাবড় তাবড় লাতিন আমেরিকান খেলোয়াড়রা খেলত তাদের দেশীয় লিগে।  লড়াই ছিল হাড্ডাহাড্ডি।

Pele was the most complete player I have ever seen ববি মুর (ইংলিশ কিংবদন্তী) 'Pele was the only footballer who surpassed the boundaries of logic! যোহান ক্রুয়েফ (ডাচ ফুটবল লেজেন্ড)

-ধুর, অফ-সাইড তো ছিল না। তখন!

ছিল না। ছিল না ভালো ডায়েট, টাকার বাষ্প, স্পোর্টস সায়েন্স, হাল্কা বল, লাল-হলুদ কার্ড কিংবা উন্নত সার্জারি কিংবা ফিটনেস কোচিং, ছিল শুধু ফুটবলের প্রতি অফুরন্ত একটা তাজা  ভালোবাসা। যেটা প্রতিটা টিনেজ সরু হাত-পায়ের খেলোয়াড়কে স্বপ্ন দেখাতো। যার জন্য কেউ দেশ ছেড়ে বার্সালোনায় পাড়ি জমিয়েছিল। কেউ পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করে রেখেছিল ইংল্যান্ডের রেড ডেভিলসকে। আজকেও যখন বক্সের ভিতর মুসিয়ালার সর্পিল গতি দেখা যায়, তখনও বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম সতেরো বছর বয়সের একটা ছেলের গল্প বলে যে প্রতিযোগিতা, ফর্মেশন সর্বস্ব, ইউরোপীয় চাকচিক্যে ভরা ফুটবলের বাইরেও লাতিন আমেরিকান শিল্প, সাম্বাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল


নামের পাশে তিনটে সোনালি জুলে রিমে তুচ্ছ তাঁর সামনে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ