ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

বিশ্বকাপ নাকি অঘটনের ঘনঘটা! - সোমনাথ দত্ত

 

আচ্ছা, এবারের বিশ্বকাপ যদি কোনো নারী হত, তাহলে তার সাথে কোন বিশেষণ সবচেয়ে যুৎসই হত? আমি বলছি... অঘটনঘটনপটীয়সী!

 

কেন, ভুল বললাম? এই নিয়ে সব মিলিয়ে কত অঘটন ঘটে গেল হিসেব রেখেছেন কেউ? কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, মন্দ কি? দুর্বল সবল সবটাই তো আপেক্ষিক! আমরা কি অতিরঞ্জিত করছি না? উত্তর হল, মোটেই নয়কেননা দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল বিশ্বের সমস্ত পরাশক্তি যেভাবে সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করে আসছে, তৈরি করে আসছে নিজেদের অস্তিত্ব, সম্মানের স্থান, যেখানে তারা রীতিমতো মহাদানব, সেখানে তথাকথিত লিলিপুটদের সাথে খেলায় এই ধরনের অভাবনীয় ফলাফল ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণফুটবলপ্রেমীদের সমস্ত আশঙ্কা, ভবিষ্যদ্বাণীকে নস্যাৎ করে দিয়ে এই ফলাফলগুলোই প্রমাণ করে আসলে এই খেলাটা কতটা সুন্দর, কতটা অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণএভাবেই তো  দেশ, মহাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে জনপ্রিয় হয় কোনো খেলা...সকলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগায় জয়ের লক্ষ্যে আরও জোরকদমে ধাবিত হওয়ারদুর্বল থেকে দুর্বলতর মানুষও বিশ্বাস করতে শুরু করে "আমিও পারবো"....

 

চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে টাইম মেশিনে চেপে বসিফ্ল্যাশব্যাকে একবার দেখে নেওয়া যাক, কেন এতটা বিশেষ এবারের কাতার বিশ্বকাপ- ২০২২!

 

এশিয়ায় বিশ্বকাপ, এশিয়ার বিশ্বকাপ!

 

ফুটবল দেবতার মনে কি ছিল বোঝা ভারতিনি কি চাইছিলেন, উঠে আসুক বিশ্ব ফুটবলে নতুন কোনো পরাশক্তি?  নাকি চেয়েছিলেন সমস্ত শক্তি আর সাহসভরা বুকে ভর করে সবলের বিপক্ষে মাথা উঁচু করা দাঁড়াক তথাকথিত দুর্বল, 'হার মানা'দের দল...

 

২২ শে নভেম্বর, দোহা... বিশাল লুসাইল স্টেডিয়াম তখন নীল-সাদা রঙ ধরেছেআট থেকে আশি প্রায় সবাই হাজির প্রিয় দল আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করতেকিন্তু কে জানতো, আজ তাদের চোখের সামনে ঘটবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটন?

 

১৯৫০ সালে ইংল্যান্ডকে মানা হত ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তিসারা বিশ্বের কোনো দলের নাকি তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জোর নেইসেই দল যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হেরে যায়, সারা পৃথিবী শুধু হতভম্ব হয়ে চেয়েছিলএতদিন কেটে গেল, বহু অঘটন ঘটেছে বিশ্বকাপের  ইতিহাসে১৯৬৬ তে উত্তর কোরিয়ার কাছে ইতালির পরাজয়, ১৯৮২ তে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের কাছে স্পেনের পরাজয়, ২০০২ এ সেনেগালের কাছে ফ্রান্সের পরাজয়, ১৯৯০ তে ক্যামেরুনের কাছে আর্জেন্টিনার পরাজয় কোনোকিছুই হয়তো সেই ১৯৫০ এর অঘটনকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি

 

কিন্তু যা কখনো হয়নি, তাই ঘটলো এদিন এই লুসাইল স্টেডিয়ামের ময়দানেমাত্র সাত মিনিটের মাথায় একটি পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনাসেখান থেকে সুযোগ নিয়ে ১০ মিনিটে পেনাল্টিতে গোল করে ফেলেন মেসিসারা পৃথিবী ভাবতে থাকে, এবার বুঝি মেসি শো এর অপেক্ষার অবসান ঘটলোকিন্তু বলে না, পিকচার আভি বাকি হ্যায়! ফিফা ক্রমতালিকায় ৫১ নম্বরে থাকা দেশ সৌদি আরব যেন সেটাই প্রমাণ করে দিল

 


প্রথমার্ধের পেনাল্টির পর মাঠজুড়ে তখন নীল সাদা ঢেউআর এই ঢেউয়ের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক.... সৌদি গোলরক্ষক আল-ওয়াইসতিনি তখন রীতিমতো অতিমানবপ্রথমার্ধ জুড়ে আর্জেন্টিনার তখন অফসাইডের পর অফসাইডতিন তিনটি গোল বাতিল হলো! বোঝাই যাচ্ছিল কি অদ্ভুত ক্রীড়াকৌশল কাজে লাগিয়ে বারবার আর্জেন্টিনাকে অফসাইড ট্র‍্যাপে ফেলছিলেন সৌদি ফুটবলাররা

দ্বিতীয়ার্ধে এসে অন্য ঝলক! ৪৮ মিনিটের মাথায় সালে আল শেহরির দুরন্ত শটে কুপোকাত এমিলিয়ানো মার্টিনেজ! ১-১ গোলে সমতা ফেরানোর পরই তেড়েফুঁড়ে খেলা শুরুআর ৫৩ মিনিটে এসে সালেম আল দাওসারির অবিশ্বাস্য গোলএরপর হাজার চেষ্টা করেও আর ম্যাচের মোড় নিজেদের দিকে ঘোরাতে পারেননি মেসি, মার্টিনেজ, ডি মারিয়ারাকেননা সৌদি গোলরক্ষক আল ওয়াইস ততক্ষণে যেন আলাদিনের আরবিয়ান দৈত্যপ্রমাণ করে দিলেন, সব স্বপ্ন অধরা নয় সবসময়কিছু কিছু স্বপ্ন সত্যি হয়!


ম্যাচ শেষে বাঁশি বাজতেই জায়ান্ট স্ক্রিনে ধরা পড়ল আর্জেন্টাইন তরুণীর কান্নাভেজা চোখবৃদ্ধ বাবাকে হুইলচেয়ারে খেলা দেখতে নিয়ে আসা ছেলে, ওরা সবাই মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাচ্ছে.... এ যেন দুঃস্বপ্নেরও অতীত! অথচ এর মধ্য দিয়েই কোন ফাঁকে রচিত হয়ে গেল ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটন! টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড  অপূর্ণ রয়ে গেল আর্জেন্টিনার

ম্যাচের শেষপ্রান্তে এসে সৌদি গোলরক্ষকের এই অবিশ্বাস্য সেভই প্রমাণ করে, জয়ের জন্য কতটা মরিয়া হলে এমন অদম্য শক্তিকেও পদানত করা যায়, লড়াইয়ের ময়দানে

 


তবে প্রথম ম্যাচ এত ভালো খেলেও নকআউট পর্বে না যেতে পারাটা সৌদি আরবের জন্য নিঃসন্দেহে পরিতাপেরযদিও সেই আক্ষেপের অবকাশ রাখেনি অন্য দুই এশীয় শক্তিএশীয় শক্তির ঝলক থেকে তাই রেহাই পায়নি অন্য গ্রুপগুলোওআর্জেন্টিনার পরদিনই যে অঘটনের শিকার বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে সবচাইতে  ধারাবাহিক আর সফল দল জার্মানি! শিকারীর নাম, জাপান!

জাপান এমন একটা দেশ যেখানে খেলোয়াড়দের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি আর অন্যদিকে জার্মানির ৬ ফুটেরও কয়েক ইঞ্চি বেশিএহেন এশীয় দলকে বারবারই কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে তাদের দৈহিক গঠন, অপারদর্শিতার জন্যেসেদিন সারা বিশ্বকে চমকে দিয়ে জাপান যেভাবে নাস্তানাবুদ করলো জার্মানিকে, সমস্ত অপমানের বোধহয় এর চাইতে সুযোগ্য জবাব কিছু হতে পারতো নাবিশ্বকাপ শুরুর আগেই কোনো বিশ্লেষক বলেছিলেন, জাপানকে কেউ যেন হালকাভাবে না নেয়, কেননা ওদের দলে সেভেন সামুরাই আছেঅর্থাৎ সাতজন এমন খেলোয়াড়, যারা বুন্দেশলিগায় খেলেনজার্মান টিমের ভালোমন্দ সব জানেন তারা ২৩ নভেম্বরের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে জার্মানি যেন তা হাড়ে হাড়ে টের পেল

আর্জেন্টিনা ম্যাচের মতোই প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল জার্মানিসারাটা ম্যাচ জুড়ে বল দখলে দলটা আধিপত্য দেখালো, পাসের সফলতা ৯১ শতাংশতা সত্ত্বেও কোন ফাঁকে জার্মানির নাকের নিচ থেকে ম্যাচ বের করে নিয়ে গেলেন ডোয়ান, আসানো'রাবুকের পাটা মানতে হবেএকদিকে যেমন মুসিয়ালা, গুন্দোগান, মুলারদের গোলাবারুদ রুখে দিচ্ছে, অন্যদিকে বুলেট ট্রেনের গতিতে দল ছুটে চলেছে জার্মান প্রাচীর দুরমুশ করে দিয়েতাও কিনা বিশ্বসেরা গোলকিপার ম্যানুয়েল ন্যয়েরকে পরাস্ত করে! মনে হচ্ছিল মাঠ দিয়ে যেন কোনো মানুষ নয়, জাপানি মাঙ্গা আর অ্যানিমের চরিত্ররা ছুটে চলছে মাঠজুড়েতা না হলে ৭৫ মিনিটের মাথায় ডোয়ানের শটে সমতা ফেরানোর পর ৮৩ মিনিটে এসে অমন অবিশ্বাস্য গোল হয়? বিশ্বাস রেখেছে ওরা নিজেদের ওপর, তাইতো শক্ত ডিফেন্স চিরে, রীতিমতো বক্সে ঢুকে গোল করে এসেছে; যাকে বলে একেবারে ঘরে ঢুকে ঘরের মানুষকে শিক্ষা দিয়ে আসা


তবে এখানেই থেমে থাকেনি ওরাফুটবল মহারথীদের ভিড়ে নিজেদের খর্বকায় শরীর নিয়েও এগিয়ে গেছে, বিশ্বাসে ভর করেগ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে যখন বলের মাত্র ১৭ শতাংশ দখল নিয়ে ওরা স্পেনের মতো শক্তিশালী দলকে পরাস্ত করে দেয়, তখন স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয় সবাইকে আগের জয়টাও "পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা ছিল না"....নিজেদের দক্ষতা আর কৌশল কাজে লাগিয়েই ওরা কায়েম করেছে শ্রেষ্ঠত্ব, বৃহৎ ইউরোপীয় শক্তির ওপর


জাপানের যাত্রা শেষ ১৬-র গণ্ডি আর পেরোতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে তাদের দুর্ধর্ষ, নির্ভীক খেলা সমীহ আদায় করে নিয়েছে তাবড় তাবড় ফুটবলপ্রেমীর১২০ মিনিটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে জিতে যায় ক্রোয়েশিয়াএকপেশে ফুটবলের সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে লড়াকু জাপান বুঝিয়ে দিল কেন তারা 'সূর্যোদয়ের দেশ'রেখে গেল এক গভীর দাগ, তাদের দেশের পক্ষ থেকে, মহাদেশের পক্ষ থেকে

কম যায়নি আরেক এশীয় দেশ দক্ষিণ কোরিয়াওএক ম্যাচে পরাজয় আর অন্য ম্যাচে ড্র স্বীকার করে ওরা যখন পর্তুগালের মুখোমুখি হয়, তখন রোনালদোর পর্তুগাল হট ফেভারিটঅথচ তার মধ্যে দাঁড়িয়েও নতুন ইতিহাস রচনা করলো ওরাসারা গ্যালারি উদ্বেল হল ৯১ মিনিটে২০১০ এর পর আবার নকআউটে দক্ষিণ কোরিয়াউরুগুয়ে'কে গোল পার্থক্যে পেছনে ফেলে দিয়ে গ্রুপ পর্ব ডিঙিয়ে প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে এল তারাএমন প্রাপ্তি তো নিঃসন্দেহে আশা জাগায় ভবিষ্যতের লড়াকুদের মধ্যে


আফ্রিকান সিংহও বা কম কীসে!

 

আর সেই সিংহের নাম যদি হয় মরক্কো, তাহলে তো কথাই নেইগ্রুপ পর্বের একটিও ম্যাচ না হেরে ওরা বুঝিয়ে দিল, ওদেরকে নিয়ে নতুন করে ভাববার সময় এসে গেছে

একবার কোনো এক ইউরোপীয় ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, আফ্রিকার ফুটবলাররা নাকি রাজমিস্ত্রিদের মতোওরা গায়ের জোরে খেলাটা তো খেলে, কিন্তু খেলায় কৌশল, নান্দনিকতা কিছুই আনতে পারে নাঅনেক কথার শোধ মেটানো বাকি ছিল এই আফ্রিকার, তাও সুদে আসলে

মরক্কোর অনুরাগী থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের শরীরীভাষায় একটা জিনিস স্পষ্ট, ওরা নেহাতই আনন্দ করতে আসেনি কাতারেজেতার জন্যে একটা গোলই যথেষ্ট, যদি বিপক্ষকে গোল করতে আটকানো যায়আর হলও ঠিক তাইচলতি বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে মরক্কো গোল খেয়েছে মাত্র একটি! তাও কিনা সেটা তাদের নিজেদের তরফ থেকেই, স্পেনের বিরুদ্ধে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে

 

পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে মরক্কোর ডিফেন্স যেন দুর্ভেদ্য চীনের প্রাচীরপ্রতিপক্ষকে বল নিয়ন্ত্রণের বিন্দুমাত্র সুযোগ দেয়নি ডি বক্সের কাছেযখনই সামান্য ফাঁটল দেখা দিয়েছে, দুর্ধর্ষ গোলকিপার সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপিয়ে দলটার ত্রাতা হয়ে উঠেছেন

হাকিম জিয়েচ, সোফিয়ান বাউফোল, আচরফ হাকিমি আর নাসিরির মতো খেলোয়াড়রা জীবন উজাড় করে খেলছেন কোচ রিগ্রাগির রক্ষণাত্মক কৌশলকে ভরসা করে

গ্রুপ পর্ব পেরোনোর পর একদল ভেবেছিল, এই শেষ, আর বুঝি কোনো অঘটন ঘটবে নাকিন্তু তারা ভুলেই গেছিল, আফ্রিকান সিংহ মরক্কো এবার কি অভিপ্রায়ে নেমেছে এই টুর্নামেন্টেপ্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে পসেশন-কিং স্পেনকে যেভাবে পর্যুদস্ত করা হল, তাও কিনা টাইব্রেকারে, এক কথায় সারা পৃথিবীর স্তম্ভিত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল নাসেই ম্যাচে এক হাজারেরও বেশি সঠিক পাস করেছিল স্পেন, প্রায় পুরো ম্যাচে বল ছিল নিজেদের দখলেকিন্তু ম্যাচের ফলাফল যা বেরোলো তাদের খেলা আর ট্যাকটিক্সকে রীতিমতো হাস্যাস্পদ মনে হলোকোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের মুখোমুখি হওয়ার আগেও তাই সবাই একবার ভাবতে শুরু করলো, মরক্কোর দৌড় কদ্দূর? 

অবশেষে কোয়ার্টার ফাইনাল! মুখোমুখি রোনাল্ডো, ব্রুনো, পেপে, র‍্যামোসের মতো তারকাখচিত পর্তুগাল, আর কোথায় এই মরক্কো! খেলা দেখেই বোঝা গেল শরীরী ভাষা বা ট্যাকটিক্সে বিন্দুমাত্র বদল আনেনি এই দলফল হাতেনাতে! ফুটবল মহাবিশ্বের আরেক দানব পর্তুগাল ততক্ষণে ১-০ গোলে বিপর্যস্ত সেই ট্যাকটিক্সের সামনে

 

ফলাফল নতুন করে বলার আর দরকার নেই! ম্যাচ শেষে টানেল দিয়ে যাবার সময় বিধ্বস্ত ক্রিশ্চিয়ানোর সেই চোখ ফাটা কান্না কার না হৃদয় বিদারণ করেছে? জীবনের শেষ বিশ্বকাপে এমন কঠিন পরিণতি কেই বা সামাল দিতে পারে? সত্যিই এই খেলাটা কি অদ্ভুত সুন্দর! একদিকে যখন কোনো নতুন শক্তির উত্থানের আনন্দমেলা, অন্যদিকে তেমনি বিষাদ গ্রাস করেছে কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়কে! তারা রোনাল্ডো কে কাঁদতে দেখছে! নিজেদের জীবনের সুপারহিরোকে কাঁদতে দেখছে! যাকে দেখে জীবনে লড়তে শিখেছে, ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও বারবার ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছে, আজ তাঁকে ভেঙে পড়তে দেখছে ওরা! এ অনুভূতির সাক্ষী মানুষ বোধ হয় খুব বেশি হতে চায় না এ ছোট্ট জীবনে

অঘটন আর আফ্রিকার প্রসঙ্গে যখন এলাম, তখন আরেক দলই বা বাদ যায় কেন? ২রা অক্টোবর  তারিখটা সারাজীবন মনে রাখতে হবে ব্রাজিলের কোচ তিতে'কেবত্রিশ বছর আগে ইতালিতে এক আফ্রিকান দেশের কাছেই পদানত হয়েছিল প্রতিবেশী দেশ আর্জেন্টিনাএদিন সেই একই ঘটনার অ্যাকশন রিপ্লে দেখতে পেল ব্রাজিল, নিজেদের বিপক্ষেই, দেশটার নাম ক্যামেরুনহোক না সে বেঞ্চে বসা খেলোয়াড় নিয়ে ম্যাচ, ১-০ গোলে ব্রাজিলকে ধরাশায়ী করে যে চমক দেখালো ক্যামেরুন, তারপর বোধ হয় গ্রুপ পর্ব না পেরোনোর আফসোস কিছুটা হলেও কমেছেএমনকি গোলদাতা আবুবকর যখন জার্সি খুলে ফেলেন আনন্দের আতিশয্যে, তখন লাল কার্ড দেখেও মাঠ ছাড়েন হাসি মুখেহাজার হোক তারা বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদারকে হারিয়েছেন


এ বিশ্বকাপ আবুবকরের মতোই আরো বহু খেলোয়াড়ের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকার মতোইআফ্রিকা বিশ্বজয় করে ফিরবে কিনা জানা নেই, তবে যে দক্ষতা আর পারদর্শিতার পরিচয় দিল এই দুই মহাদেশ, তাতে করে আগামীতে যে কোনো ফুটবল বোদ্ধা তাদেরকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে গেলে দু'বার ভাববেন


আর সত্যি বলতে হাসি, কান্না, বিষাদ...আবেগের দোলাচল তো থাকবেই এমন বিশ্ববন্দিত আসরেকিন্তু এত কিছুর মধ্যে এই অনিশ্চয়তা, এত রোমাঞ্চ, বুক ধুকপুকানি আর অঘটনগুলোই কিন্তু প্রমাণিত করে এই খেলা কতটা মহান, কতটা ব্যতিক্রমীআর সে কারণেই হয়তো এই খেলার, এই আসরের এত বিশ্বজোড়া খ্যাতি, এত জনপ্রিয়তা


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ