ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

মাস ব্যাপী মাতোয়ারা হই বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনায় -পাভেল আমান

 

সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল। ফুটবলকে ঘিরে বাঙালির আবেগ ভালোবাসা চিরকালীন। একদা যখন টেলিভিশন পশ্চিমবঙ্গে আসেনি  বাঙালিরা রেডিওতে সেই বিশ্বকাপ ফুটবলের ধারা বিবরণী নিবিষ্ট চিত্তে শুনতো। তাদের প্রিয় টিম ব্রাজিল আর্জেন্টিনার প্রতি অসীম উচ্ছ্বাস ভালোবাসা জেগে উঠতো। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপের সূচনা। এরপর থেকেই ৪ বছর অন্তর অন্তর ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ আর ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ স্থগিত থাকে। সবচেয়ে পাঁচবার বিশ্বসেরা হয়েছে ব্রাজিল। চার বার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জার্মানি আর ইতালি আর্জেন্টিনা,ফ্রান্স আর উরুগুয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে দু’বার করে। এক বার করে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্পেন আর ইংল্যান্ড। ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে।বিশ্বকাপের শুরুতে অবশ্য এই ট্রফির নাম ছিল জুলে রিমে বিশ্বকাপ। চ্যাম্পিয়ন দলকে ওই ট্রফিই দেওয়া হত। ১৯৪৬ সালে ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমেকে সম্মান জানিয়ে তাঁর নামে ট্রফির নামকরণ করা হয়। ১৯৬৬ সালে এই ট্রফি চুরি হয়ে যায়। সে বার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জেতার পর ওয়েস্টমিনিস্টার হলে ট্রফির প্রদর্শনী করা হয়। ২০ মার্চ ওই হল থেকেই ট্রফি চুরি হয়ে যায়। সাত দিন পর সেই ট্রফি উদ্ধার হয়।১৯৭০ সালে ব্রাজিল তৃতীয় বার বিশ্বসেরা হওয়ার পর পাকাপাকি ভাবে জুলে রিমে ট্রফি সেলেকাওদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৩ সালে ফের এই ট্রফি খোয়া যায়।১৯৭০ সালে বিশ্বকাপের নতুন ট্রফির উন্মোচন হয়। সিলভিও গ্যাজানিগা এই ট্রফির ডিজাইন বানান। বর্তমান এই ট্রফির উচ্চতা ৩৬.৮সেন্টিমিটার। ১৮ ক্যারেট সোনা দিয়ে বানানো হয়েছে বিশ্বকাপ। ৬.১৪২ কেজির মধ্যে ৫ কেজিই সোনা। বিশ্বকাপের ডিজাইন এমন ভাবে তৈরি, দেখলে মনে হবে দু’জন মানুষ হাত দিয়ে পৃথিবীকে স্বাগত জানাচ্ছে। ১৯৭৪ সালে নতুন বিশ্বকাপ ট্রফির প্রথম ব্যবহার হয়। সে বার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল জার্মানি।বিশ্বকাপের ইতিহাসে এবারই প্রথম সবচেয়ে ছোট দেশ কাতারে হতে যাচ্ছে ফুটবলের মহাযজ্ঞ। সাড়ে ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটারের দেশটিতে মাত্র ২.৯ মিলিয়ন জনগণ বাস করে। বিশ্বকাপের ৮টি স্টেডিয়ামই রাজধানী দোহার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। গ্রুপ পর্বে বেশিরভাগ দিনই ৪টি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা ফিফা বিশ্বকাপের ২২ তম আসর সিটি ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত হবে। ২২ তম আসর এর খেলায় ৩২ টি দল অংশগ্রহণ করবেন। এই আসনটি ২০২২ সালের ২১ শে নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাতারে পাঁচটি শহরের একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে প্রবল ভক্তরা এই খেলা সরাসরি দেখতে পারবেন। ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের ম্যাসকট  লে’ইব। আরবি ভাষায় এই শব্দের অর্থ চূড়ান্ত দক্ষতা সম্পন্ন এক খেলোয়াড়।দেশ কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র হলেও আর্থিক দিক থেকে বিশ্বের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে নিজেদের আধিপত্য দেখিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশটি। বিশ্বের বিশাল বিশাল দেশ যেখানে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের সাহস করে না সেখানে কাতার শুধু সাহসই দেখায়নি বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। আজ যখন ২২তম বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা উঠবে তখন কাতারের নামটি উঠে যাবে ইতিহাসের পাতায়। কারণ এত ছোট একটি দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজনে যে রেকর্ড গড়েছে কাতার। ২০০২ সালে এশিয়াতে প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজন হয়েছিল। তাও জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া দুই দেশ মিলে। কিন্তু কাতার যেন দেখিয়ে দিল ইচ্ছা, অদম্য সাহস, সঠিক নেতৃত্ব থাকলে যেকোনো কিছু সম্ভব।

২০০৯ সালে বিশ্বকাপ আয়োজকের বিডিং পদ্ধতি শুরু পর ২০১৮ এবং ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ভাগ করে দেওয়া হয় ইউরোপ এবং নন ইউরোপের মধ্যে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের দায়িত্ব পায় রাশিয়া। ২০২২ সালের নন ইউরোপের আয়োজকের জন্য বিড করে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র। ২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজকের জন্য ভোটিং। প্রথম রাউন্ডে ১ ভোট পেয়ে বাদ পড়ে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় রাউন্ডে দুই ভোট পাওয়া জাপান বাদ পড়ে। তৃতীয় রাউন্ডে পাঁচ ভোট পেয়ে বাদ পড়ে দক্ষিণ কোরিয়া। চতুর্থ রাউন্ডের ভোটে কাতার পায় ১৪ ভোট আর যুক্তরাষ্ট্র পায় ৮ ভোট। আর তাতেই ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজকের দায়িত্ব পেয়ে ইতিহাস রচনা করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। পরের বছরই খবর আসে কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক হতে ঘুষ দিয়েছে। পরে অনেক জল ঘোলা হয়েছে এ নিয়ে। যার পরিণতিতে তৎকালীন ফিফা সভাপতি সেফ ব্ল্যাটারসহ বেশ কয়েকজন ফিফা কর্মকর্তার শাস্তি হয়। বিতর্কের শুরু সেই থেকে। এরপর বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামসহ নানা স্থাপনা তৈরি করতে গিয়ে শ্রমিক নিহত হওয়াসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে কাতারের বিরুদ্ধে। তবে কাতার সে সবকে ভ্রুক্ষেপ না করে চালিয়ে যায় তাদের কার্যক্রম।

বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচাইতে বড় বাজেট নিয়ে হাজির হয় কাতার। এবারের বিশ্বকাপ আয়োজনে কাতার খরচ করেছে ১৭,৬৮,১৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। যা ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাতটি ফুটবল বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে যা খরচ হয়েছে তার চার গুণেরও বেশি। বিশ্বকাপের প্রাইজমানিতে কাতার বইয়ে দিচ্ছে টাকার বন্যা। যেখানে চ্যাম্পিয়নরা পাবে ৪০৪ কোটি টাকারও বেশি। আর রানার্স-আপ দল পাবে প্রায় ২৯০ কোটি টাকা। আয়োজক হওয়া থেকে শুরু করে আয়োজন। আর পুরস্কার সবকিছুতে খরচের রেকর্ড গড়া কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে বিতর্কের যেন শেষ নেই শুরুর দিন পর্যন্ত। স্বল্প পোশাকে স্টেডিয়ামে যাওয়া যাবে না, সমকামিতা নিষিদ্ধ, অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক গড়া যাবে না, বিয়ার নিয়ে মাঠে যাওয়া যাবে না- এমন সব সিদ্ধান্তে বিভিন্ন দেশের দর্শক বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরিকার দর্শকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তবে এসব যেন থোড়াই কেয়ার করছে কাতার।

তবে নানা অভিযোগ, আলোচনা, সমালোচনা, অঘটন আর শঙ্কাকে পেছনে ফেলে  বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ২১ নভেম্বর শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপ ফুটবলের শুভারম্ভ। সারা বিশ্বের ফুটবল প্রেমীদের চোখ আজ থেকে থাকবে মরুর দেশ কাতারের দিকে। বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে সবচাইতে আলোচিত, আধুনিক এবং প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে যাচ্ছে কাতারে। বিশ্বকাপকে কাতার যেমন নিয়ে যাচ্ছে অনন্য উচ্চতায় তেমনি বিশ্বকাপের কারণে কাতার পৌঁছে যাচ্ছে আরও উচ্চতায়। আজ আলো ঝলমলে বর্ণিল উৎসব আর আতশ বাজির আলোকচ্ছটায় বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বকাপের শুরুর ধ্বনি। আগামী একমাসের ফুটবল মহাযুদ্ধ চলবে। পরিশেষে বিশ্বব্যাপী ফুটবল বিশ্বকাপ কে নিয়ে শুরু হয়ে গেছে চরম মাতামাতি উন্মাদনা। প্রিয় দলের প্রতি একরাশ সমর্থন ও বিজয়ের প্রার্থনা। আমরা বাঙালিরা বরাবর ফুটবলকে নিয়ে একটু বেশি আপ্লুত আবিষ্ট। নাইবা থাকুক আমাদের দেশের টিম তবুও বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে বাঙ্গালীদের খেলার প্রতি মাতামাতি ভালোলাগা এখনো বিরাজমান। এখানেই ফুটবলের বিজয় এবং শ্রেষ্ঠত্ব। শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপ ফুটবল। আসুন আমরা সকলেই পায়ের জাদু বুদ্ধিমত্তা রণকৌশলীর অপূর্ব সমন্বয়ে সবুজ ঘাসের উপর উপভোগ করি জনপ্রিয় ফুটবল।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ