দ্বিতীয় পর্বটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
সত্যজিৎ
রায়ের চিত্রশিল্প চর্চায় একটা বড় অংশ জুড়ে আছে তাঁর অলংকরণ পর্বটি। শান্তিনিকেতনের
কলাভবনে চিত্রকলায় শিক্ষাগ্রহনের সাথে সাথে অলংকরণ নিয়েও তিনি চর্চা শুরু করেছিলেন।
এই বিষয়ে পেঙ্গুইন প্রকাশনীর মারি সিটনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন –
“I never had an urge to become a painter. My approach was more
literary and I thought of becoming an illustrator.”
সাধারণত
কোনো লেখা অর্থাৎ গল্প, কাহিনী, কবিতা বা প্রবন্ধের অনুরূপে, লেখার বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র
করে ছবি আঁকাকে ‘অলংকরণ’ বা ‘ইলাস্ট্রেশন’
বলা হয়।ভালো অঙ্কনশিল্পী মাত্রেই যে নিখুঁত অলংকরণ করতে পারেন, তা নয়। অলংকরণের
জন্য প্রয়োজন লেখকের বক্তব্যকে সম্পূর্ণরূপে অনুভব করে সেই অনুযায়ী এমন ছবি আঁকা যা
পাঠককেও লেখকের বক্তব্য প্রাঞ্জলরূপে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়।
এই
বিষয়ে সত্যজিৎ রায় এক অসাধারণ কীর্তি স্থাপন করেছিলেন।তাঁর নিজস্বতা এবং লেখার বক্তব্যের
গভীর অনুভূতির সাথে একাত্মতা বোধ তাঁর প্রতিটি অলংকরণকে পৃথক মাত্রা যোগ করেছিল।
![]() |
“আট্যাচি কেস” গল্পের চিত্র |
সত্যজিৎ
রায়ের আঁকা প্রথম অলংকরণ ১৯৪২ সালে “মৌচাক” পত্রিকায় প্রকাশিত হয় কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের
লেখা “আট্যাচি কেস” গল্পের জন্য। চলন্ত ট্রেনের কামরায় এক জালিয়াৎ দলের পান্ডা ও তার তিন
সাকরেদ মিলে এক নিরীহ যাত্রীকে ঠকাবে - এই নিয়ে
এক সরস গল্প। সত্যজিৎ ও তাঁর আঁকায়
প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে সামান্য হাস্যরসাত্মকভাব
এনেছেন । বুদ্ধি করে দৃশ্যটিকে
সামান্য টপ অ্যাঙ্গেল থেকে দেখিয়ে প্রত্যেকের হাবভাব এবং পোশাকের বর্ণনা বেশ স্পষ্ট করে তুলেছেন।
জীবনের প্রথম করা প্রচ্ছদের
মতো এখানেও সেই ইংরেজিতে ‘এস রে’ লিখে সই করেছিলেন । এই ছবিটি দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে তিনি অলংকরণকে বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছিলেন।
এরপর ঘটে যায় দ্রুত পট পরিবর্তন।শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে তিনি কলকাতায় ফিরে এসে প্রচ্ছদশিল্পী রূপে সিগনেট প্রেসে যোগদান করেন। ১৯৪৩ সালে সিগনেট প্রেস চালু হওয়ার পর পরই সুকুমার রায়ের ছোটদের লেখা নিয়ে বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়। কিছু লেখায় সুকুমার রায়ের আঁকা নিজস্ব অলংকরণ থাকলেও বাকিগুলিতে আঁকার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সত্যজিৎ রায় নিয়েছিলেন।
বাংলা সাহিত্যের অলংকরণে হাস্যরসের যে ধারাটি উপেন্দ্রকিশোর ও পরে সুকুমার রায়ের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল সত্যজিৎ রায় সেই স্বাভাবিক রসবোধের ধারাটি তাঁর পরবর্তী সমস্ত অলঙ্করণে অব্যাহত রেখেছিলেন।
সিগনেট থেকে প্রকাশিত সুকুমার রায়ের মজার গল্পের সংকলন বহুরূপী ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত হয়।এই বইয়ের জমজমাট অলঙ্করণের দায়িত্ব সত্যজিৎ রায় নিয়েছিলেন এই বইয়ে আঁকা ধুরন্ধর চাষা বা ছাতা হাতে হারুবাবুকে দেখলে সুকুমার রায়ের অলংকরণের ঘরানা মনে পড়িয়ে দেয়। এছাড়া "দ্রিঘাংচু" গল্পে দাঁড়কাক ও রাজাকে নিয়ে অলঙ্করণ সুকুমার রায়ের মূল অলংকরণকে হুবহু নকল করেই আঁকা হয়েছিল।কিন্তু তফাৎ তৈরি হয়েছিল অন্যত্র। সত্যজিৎ অলঙ্করণে লাইন ড্রয়িংকে ব্যবহার করে অসম্ভব এক নিখুঁত সম্পূর্ণতা দান করেছিলেন।
সুকুমার রায়ের পাশাপাশি অবনীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘বুড়ো
আংলা’, ‘রাজকাহিনী’, ‘নালক’ প্রভৃতি বইও নতুনভাবে ছেপে বের হয় ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত হয় ক্ষীরের পুতুল। রাজা, রাজত্ব, সুয়োরানী, দুয়োরানী
এবং তাঁর পোষা মুখপোড়া বাঁদর,
যে বটতলা থেকে ষষ্ঠী ঠাকুরুনের ছেলে চুরি
করে আনে - এদের নিয়ে লেখা বাংলার এক
আশ্চর্য রূপকথা যেন ছবি হয়ে উঠেছিল। এই বইয়ের যাবতীয়
অলঙ্করণ সত্যজিৎ করেছিলেন। ছবির
মধ্যে বঙ্গীয় শিল্পের মেজাজ নিয়ে এসে যথেষ্ট প্রশংসনীয় কাজ করেছিলেন।
এছাড়া রাজকাহিনীর সময় কালকে বারো থেকে পনেরো শতাব্দীর মধ্যে ধরে রাখার জন্য রাজপুত মিনিয়েচার পেইন্টিং-এর আদলে ছবি এঁকেছিলেন। এইগুলিতে রাজস্থানের বুঁদি, মেওয়ার, বিকানের প্রভৃতি শিল্পধারার কাজগুলির মাধ্যমে ওই অঞ্চলের লোকজন এবং স্থাপত্যের পরিষ্কার চেহারা ফুটে উঠেছিল।
![]() |
‘আম আঁটির ভেঁপু’ বইয়ে আঁকা অলংকরণ |
সত্যজিৎ রায় অলঙ্করণের বিষয়ে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করার মাধ্যমে নিজস্ব ঘরানার সৃষ্টি করেছিলেন। এই
প্রসঙ্গে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আম আঁটির ভেঁপু’ বইয়ের অলংকরণের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এই বইয়ের আঁকায় শান্তিনিকেতনে দেখা আঁকাবাঁকা
রাস্তা, খড়ের
চালের বাড়ি, সারি সারি তালগাছ কিংবা বাঁশবন দেখার অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করেছিলেন। নন্দলাল
বসুর ঘরানার ছাপ এই সকল আঁকায় পাওয়া যায়।সাদাকালো তুলির ড্রয়িংএ সরাসরি লিনোকাট না এঁকে তার এফেক্ট বজায় রেখেছিলেন।তুলি দিয়ে আঁকার
মধ্যে কালো রঙকে বেশি ভরাট করে তিনি টুকরো টুকরো সাদা অংশ এমনভাবে বার করে আনেন যাতে
লিনোকাটের এফেক্ট বজায় থাকে।
ফেলুদা ও প্রফেসর শঙ্কুর বইয়ের বিভিন্ন অলঙ্করণে রেখাচিত্রের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া সত্যজিৎ রায় লিখিত প্রতিটি গল্পে যে অলংকরণ ব্যবহার করা হতো তার মধ্যেও বিভিন্ন বৈচিত্র্য আমরা দেখতে পাই।
বাংলা
সাহিত্যে সুকুমার রায়কে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য 'রংমশাল' পত্রিকা
একসময় উদ্যোগী হয়েছিল। পত্রিকার 'সুকুমার সংখ্যা'র প্রচ্ছদে
সত্যজিতের করা, তাঁর বাবার একটি ছবি ছাপা হয়। এর
দু'বছর পরেই
১৯৪৬ সালে আষাঢ় সংখ্যা থেকেই পত্রিকার ভিতরের
পাতার
ছবি
আঁকার দায়িত্ব পান সত্যজিৎ রায়। নবাগত হলেও রংমশালের নিয়মিত বিভাগের হেডপিস
হিসাবে যে মোটিফ বা লোগোগুলি তিনি এঁকেছিলেন, সময়ের
তুলনায় তা ছিল আশ্চর্যজনক ভাবে আধুনিক।
১৯৪৮ সালে একটি বড় ঘটনা ঘটে যখন সত্যজিৎ রায় গতানুগতিক ধারা থেকে বেড়িয়ে এসে প্রথম রঙিন ছবি আঁকেন। অফসেট পদ্ধতিতে ছাপা মোট ৫৩টি ছবি আঁকার সময় কোন আউটলাইন ব্যবহার করেননি। শুধু কয়েকটি রং যেমন - সবুজ, লাল, হলুদ, ছাই এবং কালো প্রভৃতি - কখনো পাশাপাশি বা কখনো একটার ওপর আর একটা চাপিয়ে প্রতিটি জিনিসের চেহারাকে স্পষ্ট রূপ দিয়েছিলেন।
"দুই সিংহ" গল্পটির প্রসঙ্গে তার
নামকরণে সিংহ শব্দটি বিশেষভাবে লক্ষণীয় কারণ গল্পে মিস্টার গুহ নামক চরিত্রটিকে
বলতে শোনা যায়, " সিংহ বুঝলেন না,যাকে বলে
লায়ন। অর্থাৎ খুব নামজাদা গুণী লোক, যাকে সবাই দেখতে চায়।" নিজেদের হামবড়াভাব নির্লজ্জভাবে প্রকাশ করে ফেলা
দুই চরিত্রকে নিয়ে লেখক পরশুরাম
চূড়ান্ত বিদ্রুপ করেছেন। এই ভাবকে সত্যজিৎ রায় ছবির ভাষায় আরো অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে
তুলেছিলেন।শুধু সন্দেশ পত্রিকার জন্যই হাজারের ওপর অলঙ্করণ এঁকেছিলেন তিনি।
![]() |
সত্যজিৎ রায় অঙ্কিত বিভিন্ন অলংকরণ |
সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট তারিণীখুড়ো,
ফেলুদা ও প্রফেসর শঙ্কুর গল্পের ক্ষেত্রেও বইগুলির অন্যতম আকর্ষণ ছিল গল্পের অলঙ্করণ
সমূহ। প্রতিটি আঁকা, গল্পে বর্ণিত ঘটনাকে পাঠক মনে স্পষ্টরূপ দান করত। পাঠক যেন পরিস্কার
সেই সমস্ত ঘটনা বা চরিত্রকে চোখের সামনে জীবন্তরূপে দেখতে পেতেন, অনুভব করতে পারতেন।এখানেই
সত্যজিৎ রায়ের পারদর্শীতা, স্বতন্ত্রতা। ফেলুদা ও শঙ্কুর বিভিন্ন গল্পে চাহিদা ও ঘটনাপ্রবাহ
অনুযায়ী তাদের চরিত্রের পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তন সত্যজিৎ রায় অঙ্কিত ছবিতেও পরিস্ফুট
হয়েছে।
ফেলুদার প্রথম প্রকাশিত গল্পের তুলনায় পরবর্তী গল্পে ফেলুদার চেহারা ক্ষুরধার ও স্মার্ট হয়ে উঠেছে। যা ছবিতে ফুটে ওঠে। লম্বাটে ধারালো মুখ, তীক্ষ্ণ সতর্ক ঝকঝকে বুদ্ধিতে ভরপুর চোখের দৃষ্টি – এইসব যুক্ত হয়েছে।অন্যান্য চরিত্রের তুলনায় ফেলুদাকে আরো বেশি স্পষ্টরূপ দেওয়া হয়েছে।ধীরে ধীরে তাঁর মধ্যে আগ্রাসী, শক্তিশালী, অপরাজেয় মনোভাব ফুটে উঠেছে।
একইভাবে প্রফেসর শঙ্কুর চেহারাও প্রথমে যত ভোলাভালা দুর্বল দেখানো হয়েছিল, পরের গল্পগুলিতে সেই চেহারা শক্ত সমর্থ করে তোলা হয়েছিল।তুলিকে সরু থেকে চ্যাপ্টাভাবে ব্যবহার করে, সাদা কালো রেখাতে বিভিন্ন ঘটনা ও চরিত্র, চরিত্রের বিভিন্ন অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলাতে তিনি ছিলেন অনবদ্য।
এমনকি তিনি কতগুলো বাংলা ও ইংরেজি ফন্ট ও তৈরি করেন যেগুলো এখনো বিভিন্ন সময় ব্যবহার করা হয়।তিনি আমাদের নতুন ধরনের বাংলা ক্যালিগ্রাফির সাথে পরিচয় ঘটান। তিনি চারটি ইংরেজি ফন্ট তৈরি করেন -Ray Roman, Ray Bizarre, Daphnis আর Holiday Script এর মধ্যে " Ray Roman আর Ray Bizarre ১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পায়। সত্যজিতের ডিজাইন করা টাইপফেসগুলি দুটি পৃথক ধরনের ছিল: Architectural (প্রতিলিপিযোগ্য) এবং Calligraphic (অ-প্রতিলিপিযোগ্য)।Architectural গুলো বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পিরিওডিক্যালস, বইয়ের টাইটেলের জন্য ব্যবহৃত হত এবং এগুলো পুনঃমুদ্রণযোগ্য ছিল। কিন্তু Calligraphic গুলো সাধারণত পুনঃমুদ্রিত হতো না, একবারই ব্যবহার হতো।
সত্যজিৎ রায় বাংলার প্রথম এবং সম্ভবত একমাত্র টাইপফেসের ডিজাইনার যিনি একটি সম্পূর্ণ সম্প্রদায়কে তাদের মাতৃভাষার অক্ষরের সৌন্দর্যকে ভালবাসতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। যুবক সত্যজিৎ, তাঁর ২০-৩০ বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রায়শই আধুনিক বাংলা কবিতার সংকলন ডিজাইন করতেন। কভারগুলির জন্য তিনি কোনও উপযুক্ত metallic type খুঁজে পাননি, যা কবিতার মুড বা মেজাজের সাথে যায়। তাই তিনি ক্যালিগ্রাফির জন্য নিজের দক্ষতার উপর প্রায় সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলেন।তিনি নিজেই অনেক নতুন বাংলা টাইপফেস তৈরি করেন যা একদম নতুন ও উদ্ভাবনী হলেও পুরোপুরি সুস্পষ্ট ও সহজপাঠ্য ছিল।
![]() |
হীরক রাজার দেশে চলচ্চিত্রের মগজ ধোলাই ঘরের নকশা |
প্রতিটি চলচ্চিত্রের জন্য সেট ডিজাইন থেকে শুরু করে চরিত্রের বর্ণনা, পোশাকের বিস্তারিত বিবরণ নিজের হাতে আঁকতেন। তাঁর আঁকা এইরকম বহু আঁকা আমরা তাঁর খাতায় দেখতে পাই। যে খাতাটির নাম তিনি দিয়েছিলেন “খেরোর খাতা”।কোনো ব্যক্তির কল্পনাশক্তি কত প্রবল হলে এবং দৃষ্টি কত স্বচ্ছ হলে, এইভাবে প্রতিটি খুঁটিনাটি এঁকে ফেলতে পারেন- তাঁর একমাত্র উদাহরণ সত্যজিৎ রায়।
নিজের সিনেমার চরিত্রগুলো কেমন
হবে, বিভিন্ন দৃশ্য, সেট ডিজাইন, কস্টিউম ডিজাইন, শিল্প নির্দেশনা, সিনেমাটোগ্রাফি এসবই নিজেই করতেন সত্যজিৎ রায়। আর একাজগুলো
বেশ ডিটেইলে এবং অত্যন্ত যত্রসহকারে নিখুঁতভাবে করতেন। সত্যজিতের সেটের অন্দরসজ্জা, সাজপোশাক সব একদম ঠিকঠাক, যাকে বলে পারফেক্ট, তাই হতো। কোনো বাহুল্য, আতিশয্য, খামতি বা বেমানান কিছুই থাকতো না।
এ কারণ, তিনি নিজ হাতে পুরো প্ল্যানটা এঁকে এঁকে ডিজাইন করতেন। তিনিই সম্ভবত একমাত্র বাঙালি পরিচালক যিনি নিজে এ কাজগুলো করতেন। আঁকিয়ে হিসাবে তাঁর অসামান্য প্রতিভার আর সৃজনশীলতার প্রমাণ মেলে তাঁর ‘খেরোর খাতা’ থেকে।
সত্যজিৎ রায় স্লাইড, পোস্টার, বুকলেট, টাইটেল, বিলবোর্ড, প্রচার সামগ্রী এবং পোস্ট প্রোডাকশন প্রয়োজনীয় সবকিছু ডিজাইন করতেন। এমনকি তিনি দেয়ালে দেয়ালে নিজ হাতে ছবি এঁকে নিজের সিনেমার প্রচারণা চালাতেন।
তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মনীষীদের প্রতিকৃতিও এঁকেছেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, উপেন্দ্রকিশোর.সুকুমার রায়, গান্ধীজী, বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, সারদা দেবী-কার্ল মার্কস, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, অবন ঠাকুর, যামিনী রায়, মাদার তেরেসা, আইজাক নিউটন আরও অনেকের প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায়।আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রবাশিত বই 'প্রতিকৃতি-সত্যজিৎ রায়' এ এইসব প্রতিকৃতি স্থান পেয়েছে।
![]() |
সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন সই |
নিজের সই নিয়েও করেছেন প্রচুর
গবেষণা। এক এক সময় তাঁর এক এক প্রকারে সই আমরা দেখতে পাই। ক্যালিগ্রাফির অসাধারণ প্রয়োগ
দেখতে পাওয়া যায় তাঁর সই ও প্রচ্ছদের বিভিন্ন লেখায়।
বাংলা সাহিত্যের জগতে সত্যজিৎ
রায়ের নাম আবহমানকাল ধরে জীবন্ত রয়ে যাবে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম
তাঁকে, তাঁর লেখা, চলচ্চিত্র, গান ও অবশ্যই চিত্রকলার মাধ্যমে স্মৃতির মণিকোঠায় যত্ন
সহকারে রক্ষিত করবে।চিত্রকর সত্যজিৎ রায় বাংলা তথা ভারতীয় চিত্রকলার নিজস্বতাকে বজায়
রেখে পাশ্চাত্য ঘরানার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন। সৃষ্টি করেছিলেন নিজস্ব
ঘরানার।যেখানে মিশ্রিত হয়েছিল, ভারতীয় প্রাচীন লোকশিল্পকলা ও আধুনিক শিল্পকলার এক অসাধারণ
মেলবন্ধন। ভারতীয় চিত্রকলা জগৎ আজীবন ঋণী
রয়ে যাবে কিংবদন্তী শিল্পী ও স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের নিকট। আমাদের সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধাঞ্জলী
এই মহান বঙ্গ সন্তানকে।
ঋণ স্বীকারঃ
“রং তুলির সত্যজিৎ” - দেবাশীষ দেব।
“প্রতিকৃতি-সত্যজিৎ রায়” - আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত।
“সত্যজিতের ছবি ও খেরোর খাতা” – সুনীত সেনগুপ্ত ।
0 মন্তব্যসমূহ