ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

বছর তিরিশ বাদে - স্বর্ণালী সিংহ রায়

এই গল্পটি এপ্রিল ২০২০ সংখ্যার প্রকাশিত হয়েছে। 

             গলাটা আটকে ধরছে। নাহ কিছুতেই পারছিনা।জল খাই একটু!!! একটু ঝেড়ে নেব!!অসহ্য যন্ত্রনা...অদ্ভুতও বটে..কথা গুলো যেন মুখগহ্বরে এসে মারপিট শুরু করে দিয়েছে একে অপরের সাথে,মস্তিস্ক তো বের করে দিয়েছে কিন্তু তারা কেউ বেরোতে চাইছেনা , ১০০-২০০ না ৫০০ বছর পরের পৃথিবী এটা!?এত অচেনা তো আগে লাগেনি কখনো! কেউ তো কথা বলেনা এখানে! সবার দিকে তাকিয়ে দেখি কালো, শুকনো, গোলাপি ,নরম ,একাধারে সবরকম ঠোঁটই চেন দিয়ে আটকানো , কথা বলে কিকরে এরা! হাত দিয়ে দেখি হ্যাঁ আমার ঠোটেও চেন!সবটাই ভীষণরকম উদ্ভট লাগছে দৃষ্টি টা মানুষ ছাড়িয়ে শহরে দিলাম কালো কালো ধোঁয়ার মাঝে ডুমুরের ফুলের মত কাঁচের ঘরে সবুজ আটকানো সেগুলোর সামনে এমন ভাবে ভিড় করেছে একালের মানুষগুলো যেন ওকালের শাহরুখ খান বা ঐশ্বরিয়া রায় সবাইকে বিনে পয়সায় হাত মেলানোর আহ্বান জানিয়েছেন বুঝলাম না কিছুই! ও কালে তো পায়ের তলায় সবুজ মাড়িয়ে হেসে খেলে বেড়াত সবাই! একালে তার এরূপ উন্নতি দেখে অবাক  হলাম। কাগজে আর লেখা হয়না।এখন মানুষ কিংবা বাঘের চামড়ায় লেখালিখি হয় কাগজ নাকি মানুষের থেকেও মূল্যবান এখানে ! ও কালে তো শত শত প্রেমপত্র নৌকা বানিয়ে খেলেছি আমরা! খুব কষ্ট হচ্ছে।এতক্ষনে কথাগুলো মারামারি করতে করতে মরে গেলেও হাজারো ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায় হাত দিতে  অবাক হলাম , মাথা কৈ ? সামনের কাঁচে ধুলোটা মুছে দেখি অদ্ভুত এক টিভির মতো জিনিস মাথার কাছে। কি ওটা ! তাতে আবার কত রং বেরঙের বোতাম emotion ,  feeling,  love, office আরো কত কি!না বুঝে একবার এটা একবার ওটা টিপে ফেলি। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের চেন টা খুলে যায়! কখনো I LOVE YOU,I cant live without you, কিংবা কখনো We have a meeting tomorrow sir, HAPPY BIRTHDAY এসব বলে মাঝরাস্তায় চেচিয়ে উঠছিলাম কিছুক্ষন পর টিভিটা কালো হয়ে এলো আমিও থেমে গেলাম চেন টা আবার বন্ধ হয়ে গেল। একালের কি অদ্ভুত নিয়ম সব!ও কালের অনিয়ম গুলোই যেন অদ্ভুতভাবে নিয়ম হয়ে গেছে একালে। এখানে চোখের পলক ফেলতেই এপাড়া থেকে ওপাড়া এমনকি এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যাওয়া যায়।মুহূর্তেই কালো মানুষ ফর্সা,কিংবা পলক ফেলতে না ফেলতেই তার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া সেইরম কোনো বড় ব্যাপার নয় এখানে। যেন প্রতিটা মানুষই ওকালের ডোরেমন! জন্ম থেকেই আঙ্গুল গুলো যেন খাটো খাটো সব কাজ রিমোট দিয়েয় হয় কিনা! তাই আঙুলের এরূপ অভিব্যক্তি!!কারোর এক ইঞ্চি লম্বা আঙ্গুল দেখলে তাকে একালের আরব্যরজনীর দৈত্যের মতো লাগে! কাঁচা মাংস চিবিয়ে খাচ্ছে মানুষ আদিম কাল ফিরে এলো নাকি! মানুষগুলো যেন বড্ড বেশীই আবেগহীন।এখানে আকাশচুম্বী ইমারত গুলো অন্ধকার ধোঁয়াশার মধ্যে একে অপরের সাথে যেন লুকোচুরি খেলছে।খোলা আকাশ নেই এখানে।একটু এগোতেই চোখে পড়লো পিঁপড়ের দলের মত মানুষ জড়ো হয়েছে। দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে কি যেন খুঁজছে, কি যেন চাইছে ! হয়তো একটু বাতাস ! হয়তো একটু আকাশ!কি জানি!দম বন্ধ করা কষ্ট হলো কিন্তু চোখ থেকে জল পরলনা একটুও। পরলেও হয়তো বাষ্পীভূত হয়ে গেছে ! বোঝা যায়নি ! তাপমাত্রা তো তার সীমা লক্ষাধিক বাড়িয়ে নিয়েছে জাদুঘরে  গিয়ে দেখতে পেলাম মানুষ হাসছে,কাঁদছে,কথা বলছে।সেখানে সবুজ আছে , আকাশ আছে ,প্রাণোচ্ছল, চিরহরিৎ আহ্লাদিত একটা পৃথিবী আছে।আর একালের রোবট সদৃশ মানুষ গুলো টিকিট কেটে তা উপভোগ করছে বেশ।কত্ত কত্ত বড় বড় ক্যামেরা ছবি তুলছে এই পৃথিবীর একটা মাত্র মাথা যুক্ত মানুষের।সে নাকি এখানে ভীষণ রকম বেমানান।আমাদের কালে ভিনগ্রহী অর্থাৎ এলিয়েন দের দেখতে পেলেও হয়তো মানুষ এমন করতো না! এতক্ষনে আমার হৃৎপিণ্ড টাও একটু স্বস্তি চাইছে , ছুট্টে গেলাম সামনের কাঁচ ঘেরা দোকানটাই ।সেখানে (ও কালের টাকায়) একশো টাকা কেজি দরে প্রতি ঘন্টায়  বিশুদ্ধ অক্সিজেন বিক্রি হয়। হৃৎপিণ্ড টা একটু যেন শান্তি পেল! এ পৃথিবীর রাজা কে জানেন ? টাকা!  সবাই ছুটছে তার পেছন পেছন।আমিও ছুটছি।ছুটে চলেছিহঠাৎ থমকে গেলাম।কোথায় যাব এবার ?পৃথিবীর শেষপ্রান্ত বুঝি! উঁচুতে দাঁড়িয়ে আছে শয়ে শয়ে মানুষ নিচে কালো কুচকুচে অতল সমূদ্র তার ঠিক মাঝখানে একটা মাত্র হাত উঠে আছে অর্ধেক। হাতটায় রয়েছে একটা ধোঁয়াহীন সবুজ আবেগময় প্রাণবন্ত একটা পৃথিবী তাতে কিলবিল করছে কোটি কোটি মানুষের জীবন্ত হৃদয় গুলো তারা ডুবে যাচ্ছে , তলিয়ে যাচ্ছে প্রগাঢ় কালো সেই সমুদ্রের অতলস্পর্শ এ চিৎকার করে বলছে  বাঁচাও.... বাঁচাও......বাঁচাও.........

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ