ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

রক্তের কালোবাজার- রক্তবীজ -পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়



  • বই - রক্তবীজ
  • লেখক - ইন্দ্রনীল স্যান্যাল
  • প্রকাশক - আনন্দ প্রকাশনী
  • প্রথম প্রকাশ - জানুয়ারি ২০০৯
  • পৃষ্ঠা - ১৭২
  • মুদ্রিত মূল্য - ১৫০/-

কুলতলা। পশ্চিমবঙ্গের এক প্রত্যন্ত কাল্পনিক মফঃস্বল। কলকাতার সদ্য বিবাহিত ডাক্তার দম্পতি রূপম ও তৃণা জেলার সরকারী হাসপাতালে নিযুক্ত হন। রূপম ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞরূপে ও তৃণা ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিকেল অফিসার রূপে যোগদান দেওয়ার কয়েকমাস পর থেকেই তাঁদের নজরে আসতে থাকে সরকারী নিয়মবিরুদ্ধ বেশ কিছু বিষয়। ব্লাড ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ ডাক্তার থেকে শুরু করে নীচু তোলার কর্মীসহ হাসপাতালের বাইরের বেশ কিছু অসাধু লোক এক বেআইনি রক্ত ব্যবসার চক্রে জড়িত।  এই রক্ত ব্যাবসায় জড়িয়ে রয়েছেন সফল সার্জেন সুধা দত্ত থেকে টেকনিশিয়ান ল্যাংচা বাউরি, স্থানীয় নার্সিংহোমের মালিক অখিল বিশ্বাস থেকে রাজনীতিবিদ স্বাধীনকান্তি ঘোষও। ব্লাড ব্যাঙ্কের এই কালোবাজারী চক্রের সহযোগিতা করতে না চেয়ে এবং রাঘববোয়ালদের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিপদে পড়ে যান ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিকেল অফিসার তৃণা। এই বিরোধিতার মাশুল হিসাবে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ স্বামী রূপমের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য সম্পর্কে সংকট ঘনিয়ে আসে। সাপের লেজে পা পড়ায় এই চিকিৎসক দম্পতিকে বিভিন্ন রকমের প্রতিকুলতার সম্মুখীন হতে হয়। বকুলতলার নিস্তরঙ্গ শান্ত  জনজীবনে হঠাৎ অন্ধকার ঝঞ্ঝা ঘনিয়ে আসে। ঝড়ের দাপটে প্রাণ যায় গর্ভবতী বাসন্তী এবং থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু পুঁচকির। ঝড়ের দাপটের মধ্যে থেকেও নিজেদের কর্তব্যে অবিচল থাকেন  আদর্শবাদী চিকিৎসক দেবু দত্ত ও স্থানীয় থানার ওসি দিবাকর গাঙ্গুলি। রক্তের মত জীবনদায়ী জিনিসের কালোবাজারীতে জড়িয়ে স্থানীয় জনজীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিভাবে এই চক্রব্যুহ ভেদ করে কালোবাজারী বন্ধ করা হয়, তৃণা ও রূপম কি আদৌ এই বেড়াজাল কেটে নিজেদের  নির্দোষ প্রমাণ করে পরবর্তী জীবনে অগ্রসর হতে পারবে? এই উপন্যাস সেই কাহিনী নিয়েই গড়ে উঠেছে। 

ডঃ ইন্দ্রনীল স্যান্যাল বাংলা সাহিত্য জগত মেডিকাল থ্রিলার ঘরানার অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় সাহিত্যিক হিসাবে বিগত কয়েক বছর ধরেই পাঠকদের মন জয় করে আসছেন। বাংলা সাহিত্যে এই ঘরানার সাহিত্য প্রায় বিরল। সেক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বাস্তববাদী চিন্তায় রচিত তাঁর উপন্যাসগুলি বাংলা সাহিত্যে অন্য মাত্রা যোগ করে। “রক্তবীজ” শারদীয়া সানন্দা পত্রিকায় ১৪১৫ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। এই উপন্যাস যে লেখকের প্রথম উপন্যাস তাও পাঠকের বিস্ময় জাগায়। বর্তমান যুগে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এক বিষয় নিয়ে বাস্তবধর্মী উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকের সাথে পরিচয় করিয়েছেন এক ভয়াবহ জগতের, যে জগতের সাথে জুড়ে আছে মানব জীবন। 

উপন্যাসের বেশ কিছু জায়গায় বিশেষত শেষের অধ্যায়ে লেখক কিছু রূপক ব্যবহার করেছেন যা উপন্যাসে অনন্য সাধারণ মাত্রা যোগ করেছে। প্রতিটি চরিত্র চিত্রায়ন অত্যন্ত নিপুণভাবে করার ফলে পাঠক খুব সহজেই তাঁদের সাথে একাত্ম বোধ করতে পারেন। তৃণার বিভিন্ন মানসিক স্থিতি, রূপমের অতিরিক্ত উচ্চাশা, সুধা দত্তের উচ্চাকাঙ্ক্ষাজনিত লোভ, ল্যাংচার অর্থ লোলুপতা, গোকুলের অসহায়তা, দেবু দত্তের সততা, দিবাকর গাঙ্গুলির কর্তব্যে অবিচল থাকা – সমস্তই গভীরভাবে মনকে ছুঁয়ে যায়। শিউরে উঠতে হয় বর্তমান সমাজের ঘৃণিত চেহারা দেখে। লেখক নিজে একজন চিকিৎসক হওয়ার জন্যই সম্ভবত সমাজে ভগবান হিসাবে গণ্য করা হয় যে চিকিৎসকদের তাঁদের একাংশের ভয়ংকর রূপকে এত পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ইদানিংকালে বাংলায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ধরণের কেলেঙ্কারীর খবরে বিপর্যস্ত জনগণের এক আবছা ছায়া যেন বকুলতলার বাসিন্দাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। প্রায় পনেরো বছর আগে লিখিত এই উপন্যাস বর্তমান সময়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে জ্বলজ্বল করে ওঠে। 

Document

পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মধ্যবিত্ত পরিবারের অতি সাধারণ গৃহবধূ। কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিবেশের ছোঁয়ায় শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে আগ্রহ ও ভালোবাসা। বর্তমানে স্বদেশ থেকে বহুদূরে বিদেশে এসে সেই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের অভাববোধ থেকে তৈরি হওয়া শূন্যতা পূরণের অবলম্বনরূপে লেখার শুরু। পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও লেখা পড়তে ক্লিক করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ