বহুদিন পর বাংলা সিনেমায় এমন নির্ভেজাল হাস্যরস নির্ভর ভৌতিক গল্প পাওয়া গেল। তার জন্য প্রশংসার দাবিদার প্রতীক দত্ত ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য। সিনেমার শুরুতেই আবহ ও ক্যামেরার মুভমেন্ট অনবদ্য। গল্প বলার অভিনবত্বে একশোয় একশো। প্রতিটি চরিত্র একদম মানানসই। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যথেষ্ট পরিণত, তার প্রমাণ গোটা সিনেমা জুড়ে পাওয়া যায়। চেনা মুখের বদলে থিয়েটার জগতের সম্পূর্ণ নতুন মুখ নিয়ে এরকম একটা কাজ নিঃসন্দেহে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম। ১৩৬ মিনিট, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোথাও গল্পের বুনন আলগা হয়নি। সবসময় একটা টানটান উত্তেজনা অনুভব করা যায়। দর্শককে প্রতি মুহূর্তে ধরে রাখতে পেরেছে ঘটনাক্রম। এই সিনেমার আরও একটা শক্তিশালী দিক চিত্রগ্রহণ। সৌমিক হালদার ক্যামেরার পিছনে থাকা বাড়তি পাওনা। সংগীত রচনায়,শুভদীপ গুহ ও দেবরাজ ভট্টাচার্যের কাজ বহুদিন পর্যন্ত বাঙালি মননে থেকে যাবে। রং মিশ্রণে অমিত কুমার যথেষ্ট মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন। সত্যম কিংবা সুরঙ্গমার অভিনয় নজরকাড়া। সবশেষে যেটা বলতে হয় সম্পাদনা ও লোকেশন। প্রতিটি দৃশ্যের যথার্থ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে সংলাপ ভৌমিকের কাজ অসাধারণ। সহজ, সরল প্রাকৃতিক পরিবেশ কিছু সময়ের জন্য অবশ্যই একটা আলাদা জগতে নিয়ে যাবে। ত্রুটি বিচ্যুতি খুব একটা না থাকলেও, সিনেমায় গল্পের পরিণতি আগেই আঁচ করা যায়। দ্বিতীয়ার্ধ, প্রথমার্ধ অপেক্ষা অনেক বেশি শক্তিশালী। শীতের মরশুমে সপরিবারে কয়েক ঘন্টার জন্য দেখা যেতেই পারে বাদল সরকারের নাটক অবলম্বনে তৈরি বল্লভপুর। সিরিয়াস সিনেমার ভিড়ে বল্লভপুরের রূপকথা আট থেকে আশি, প্রত্যেকের মনে একটা দীর্ঘস্থায়ী রেশ রেখে যাবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। সব মিলিয়ে নতুন বছরের দোরগোড়ায় এমন একটা সিনেমা উপহার দিয়ে ক্যাপ্টেন অনির্বাণ প্রমাণ করে দিয়েছে যে, সে লম্বা রেসের ঘোড়া।
খুঁটিনাটি বিষয় থেকে শুরু করে সমস্ত পরিকল্পনায় অভিনবত্ব এনে বাজিমাত করেছে টিম বল্লভপুর।
0 মন্তব্যসমূহ