ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

এক কাপ চা -ডা. প্রদীপ কুমার দাস

 

এক কাপ চা না হলে অনেকে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না। সকালে প্রভাতী সংবাদপত্রটা হাতে নেওয়ার সময় চায়ের পেয়েলায় ধোঁয়া না উঠলে সংবাদপত্র পড়তে মন বসে না অনেকের। কারো কারো অফিসে পা দিয়েই এক কাপ চা না হলে কাজে মন বসে না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কেউ এসে এক কাপ চা দিলে কাজটা চটপট শেষ হয়ে যায়। সারা দুপুর টিভি সিরিয়াল দেখার পর মাথার যন্ত্রণা কমাতে এক কাপ চায়ের কোন জবাব নেই। আবার অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যায় ক্লাবের আড্ডায় কিংবা গল্প-কবিতার আসরে নিদেনপক্ষে এক কাপ চা না হলে আড্ডা তেমন করে জমে ওঠে না। তাই তো অলিগলির মোড়ে, পাড়ার দোকানে, গাঁয়ে-গঞ্জে, রাজনীতির বৈঠকে, বড় বড় কনফারেন্সে  ও নির্বাচনী জনসভায় এক কাপ চা সঞ্জীবনী সুধা যোগায়। রেস্তোরা, কাফেতে চায়ের পেয়েলায় তুফান উঠে। ঠিক কবে থেকে দুনিয়ার সবচেয়ে গনতান্ত্রিক এই পানীয় চা আমাদের নিত্য আহারের এক অন্যতম সঙ্গী হয়ে উঠেছে সেটা নিয়ে গবেষকদের মাথা ব্যথা হতে পারে তবে চা পিপাসুদের সেই নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা নেই। তাই এই এক কাপ চা কি শীত, বর্ষা, গরমে বাঙালীদের কাছে প্রকাশ করে জীবনের জয়ধ্বনী, আবেগ,অনুভূতি ও আনন্দের সুরধ্বনী। তৈরী করে চা পানের সংস্কৃতি ঠিক চীন ও জাপান দেশের মতন। ইংরেজীতে চায়ের প্রতিশব্দ হল" টি''। গ্রীকদেবী থিয়ার নাম অনুসারে টি। চীনদেশের লোকেরা এটাকে উচ্চারণ করেন 'চি' বলে। পরে এই 'চি' থেকে হয়ে যায় 'চা'। যদিও চায়ের উৎপত্তি চীন দেশে তবে পরবর্তীকালে চা জনপ্রিয় হয় শ্রীলংকা, জাপানে, ভিয়েতনাম,কেনিয়া, নেপাল,থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ম্যালয়েশিয়া, ইরান দেশগুলোতে। প্রথম বাঙালী হিসেবে চায়ের পেয়ালায় ধোঁয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর। এরপরে ভারতবর্ষে অনেককাল ধরে চা পানের নেশা ছিল আসাম ও অরুণাচল প্রদেশের আদিবাসী লোকজনের মধ্যে। ধীরে ধীরে অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষকরে বাঙালীদের মধ্যে। শ্রীলংকার চা পৃথিবীর মধ্যে বিখ্যাত। পিছিয়ে নেই আমাদের দার্জিলিং চা। এরমধ্যে এমন একজন বাঙালী ছিলেন নাম আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় যিনি বাঙালীদের চা পানের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তিনি মনে করতেন চা পান মানে বিষপান। কিন্তু বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে হোয়াইট টি ও গ্রীন টি পানে স্বাস্হ্য রক্ষা করে, বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। উলং টি মূলত চীন তাইওয়ানে চাষ হয়। এটা কোলেস্টেরল কমাতে ও দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

আর এক ধরণের টি আছে যার নাম ব্ল্যাক টি যেটা দুধ-চিনি  কিংবা আদা-লেবু মিশিয়ে পান করা হয়। এই ব্ল্যাক টি এদেশে বেশি ব্যবহৃত হয় ও চা পানে মনের ক্লান্তি দূর করে বেশ চনমনে ভাব এনে দেয়।  সম্প্রতি নব্য ছেলে-মেয়েরা লিকার চা, লেবু চা, পুদিনা পাতা চা, গুড়ের চা, মাল্টা চা ইত্যাদি পানে মজে থাকে। কলেজ ক্যান্টিন, রেস্তোরা, ক্যাফেতে তাদের এই আড্ডায় মূল রসদ হল চা। আর এই চায়ের আড্ডায় শিল্পের রূপ ও রঙের প্রকাশ পায় কবি, সাহিত্যিক,সাংবাদিক,রাজনীতিক, খেলোয়াড় ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। তাই এক কাপ চা ছাড়া আড্ডা জমবে না আবার জমিয়ে আড্ডা হবে সেখানে এক কাপ চা আসবে না এটা ভাবাই যায় না সেকালে কিংবা একালেও।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ