ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

একটি কাল্পনিক পত্রালাপ: প্রিয় গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সীকে - সুমনা সাহা

 


প্রতি—

সত্যান্বেষী শ্রী ব্যোমকেশ বক্সী,

হ্যারিসন রোড, কলিকাতা।

 

শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় ব্যোমকেশ বাবু,

অনেকদিন ধরিয়া ভাবিতেছিলাম, আপনাকে পত্র লিখিব। কিন্তু দ্বিধাবশত লিখি নাই, প্রথমত আপনি আমাকে চেনেন না, এবং তদুপরি বিশেষত আপনার অপরিমিত ব্যস্ততার কথা মাথায় রাখিয়াই পিছাইয়া আসিয়াছি। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় নামধারী প্রখ্যাত বঙ্গ-সাহিত্যিক আপনাকে সৃষ্টি করিয়াছিল বটে, কিন্তু সৃষ্টিই যে স্রষ্টাকে বাঁচাইয়া রাখে, ইহা এক অতি চমৎকার ব্যাপার, অতএব স্রষ্টা সত্য নাকি সৃষ্টি, কিম্বা কে যে কাহার নিকট ঋণী তাহা স্থির করা এক দুরূহ বিষয়।

 

যদিও শরদিন্দু বাবু আপনাকে তেত্রিশ বার নানা কাজে নিযুক্ত করিয়াছেন, কিন্তু তাহার বাহিরেও অগণিত কাজ আপনি করিয়াছেন ও অদ্যাবধি করিয়া চলিতেছেন, তাহার খবর শরদিন্দু বাবু রাখেন কি? আপনার জনপ্রিয়তা যে কীদৃশ ব্যাপক, তাহা ভাবিয়া দেখিলে রোমাঞ্চ হয়।

 

আমার পরিচয় আপনাকে দেওয়া হয় নাই। আমি এক সাধারণ গৃহবধূ। আপনার অতিশয় অনুরাগিনী। আপনি যে সাধারণ গোয়েন্দা মাত্র নহেন! আপনি সত্যান্বেষী। ‘সত্যান্বেষী’ নামগ্রহণের সপক্ষে যুক্তিও তো আপনিই দিয়াছেন, যখন ডাক্তার অনুকূল বাবু ধরা পড়িবার পর মেসবাড়ি থেকে অজিত প্রথম আপনার হ্যারিসন রোডের গৃহে উপস্থিত হ'ন, আপনি বলিয়াছিলেন, “ডিটেকটিভ শব্দটা শুনতে ভাল নয়, গোয়েন্দা শব্দটা আরও খারাপ। তাই নিজের খেতাব দিয়েছি সত্যান্বেষী। ঠিক হয়নি?” একেবারে সঠিক হইয়াছে ব্যোমকেশ বাবু। এই সত্যান্বেষণের সুগভীর প্রেরণায় কতবার আপনি জীবনের ঝুঁকি লইয়া আমাদের ন্যায় তুচ্ছ নারীদের প্রার্থনারত রাত্রি জাগরণ করাইয়াছেন, তাহার হিসাব রক্ষা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়।  রুম নম্বর দুই, শজারুর কাঁটা, বেণীসংহার, লোহার বিস্কুট, বিশুপাল বধ রহস্যের কিনারা করিয়াছেন যখন, তখন অজিত আপনার সহিত যোগদান করেন নাই। একাকী বিপদের মধ্যে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিলেন।

 

আপনার পিতা বিদ্যালয়ে অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন। মাতা ছিলেন বৈষ্ণব বংশের কন্যা। বলিলে বিশ্বাস করিবেন না, আমার পিতামহ ও পিতৃদেব উভয়েই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, পিতামহ সংস্কৃত শিক্ষক ও পিতা ছিলেন ইতিহাসের শিক্ষক। আমারও মাতুলালয়ে শ্রীগোবিন্দ পূজিত হইয়া থাকেন। দোল-দুর্গোৎসব হইত এককালে। বর্তমানে সেই অবস্থা নাই। বংশের সকলেই কর্তব্য উপলক্ষে নানা স্থানে ছড়াইয়া ছিটাইয়া পড়িয়াছে। অতএব পারিবারিক উৎসবগুলি বন্ধ হইয়া গিয়াছে।

 

আমি যখনই কোন সমস্যায় পড়িয়াছি, গভীর ভাবে চিন্তা করিয়াছি, আপনার পরামর্শ কেবল নয়, আপনাকে প্রত্যক্ষ দেখিতেও পাইয়াছি। এই তো গত বৎসর সুদূর মুর্শিদাবাদে পিসিমাদের শ্বশুরালয়ের ভিটায় কালীপূজার নিমন্ত্রণ রক্ষার্থে উপস্থিত হইয়া এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হইলাম। উহাদের এক আত্মীয় বিদেশে কর্মলাভ করিয়াছে। সে ইন্টারভিউ দিয়া গ্রামে বেড়াইতে আসিয়াছে। তাহার পাসপোর্টটি সংগ্রহ করিবার জন্য গ্রামের বাড়ির ঠিকানাই দিয়াছিল। কিন্তু পাসপোর্ট আসিয়া পৌঁছাইলেও কেহ উহা লুকাইয়া রাখে। ছেলেটির উন্মাদের ন্যায় বিভ্রান্ত অবস্থা হইল। বাড়ির প্রত্যেক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হইল। দূর হইতে আগত আত্মীয়স্বজনের মালপত্রও তল্লাশি লওয়া হইল। সে এক লজ্জাজনক ব্যাপার। তথাপি উহা উদ্ধার হইল না। আমি গ্রামের পোড়ো একটি চণ্ডীমণ্ডপে দাঁড়াইয়া গভীরভাবে চিন্তা করিতেছিলাম। আপনার নির্দেশ অনুসারে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের একটি তালিকাও প্রস্তুত করিয়াছিলাম। অন্ধকারে একমনে চক্ষু বুজিয়া চিন্তা করিতে করিতে ঠাণ্ডা হাওয়ার একটি স্রোত বহিয়া গেল, দেহ যেন শিরশির করিয়া উঠিল। চোখ মেলিয়া দেখিলাম অতিশয় মিহি বৃষ্টির গুঁড়া ঝরিতেছে। আপাদমস্তক জলের ছাঁটে ভিজিয়া একজন বছর ২২/২৪ বয়সের ছোকরা আমার হাত দশেক দূরে দাঁড়াইয়া বৃষ্টি থামিবার অপেক্ষা করিতেছে। এমন সময় বিদ্যুতের একটি ঝলকে তাহাকে ভাল করিয়া দেখিলাম— এ যে আপনি! সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী!  

 

সেই ফরসা ছিপছিপে চেহারা, চোখেমুখে বুদ্ধির ছাপ। আপনাকে মুখ ফুটিয়া কিছু বলিতে পারি নাই, কিন্তু মনে মনে সমস্যাটি এতক্ষণ ধরিয়া আপনাকে নিবেদন করিয়াছি, আপনার সহিত আলোচনাও করিয়াছি। আপনার নিকট পরামর্শ লইব মনে করিয়া অগ্রসর হইব, ইতিমধ্যে পুনরায় বিদ্যুৎ ঝলসিয়া উঠিল, আর আপনাকে দেখিতে পাইলাম না। এইরূপ হইয়া থাকে, শুনিয়াছি। যে বিজ্ঞানী আপেক্ষিকতাবাদের উপর কাজ করিতেছেন, দিনরাত্রি তাহা লইয়া চিন্তা করিতেছেন, তিনি আইনস্টাইনের দেখা পাইলেও পাইতে পারেন। যে ব্যক্তি গভীর ধ্যানের চেষ্টা করিতেছেন, তিনি বুদ্ধ অথবা তাদৃশ মহাপুরুষগণের দর্শন পাইয়া থাকেন। মহাপুরুষগণের মৃত্যু নাই। পৃথিবীতে যুগে যুগে যখনই কেউ ঐ বিষয়ক চিন্তা করিবেন, তাহাদের অগ্রসর করিয়া দিতে পূর্ববর্তী সিদ্ধ সাধক ও মহাপুরুষগণ আবির্ভূত হইয়া থাকেন। ইহা আশ্চর্যের নহে। আর আপনি তো সহস্র অনুরাগীর হৃদয়ে পাকাপাকি আসন লইয়াছেন। সুতরাং আপনার মানবরূপও কালের কষ্টিপাথরে অবিনশ্বর হইয়া রহিয়াছে। যে ডাকিবে, সেই দর্শন পাইবে। আমিও পাইয়াছি, এই একবার নহে, আরও বহুবার! বলা বাহুল্য যে, ঐ বিপদগ্রস্ত ছেলেটির পাসপোর্ট আমি উদ্ধার করিয়া দিয়াছিলাম। হয়তো ভুল হইল কিঞ্চিৎ, আমি ইঙ্গিত দিয়াছিলাম, সেই মত খুঁজিয়া বাড়ির লোক তাহা বাহির করিয়াছিল। আমার ওই পিসিমারই এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের পুত্র, শৈশবে মাতৃহীন, তাহাদের আশ্রয়ে পালিত, কর্মকাজ কিছুই জুটাইতে না পারিয়া গৃহের সকল সদস্যের ফরমায়েশ খাটিতে অভ্যস্ত, তথাপি অমলিন হাসি; অমায়িক ব্যবহার ও সুভদ্র আচরণযুক্ত ঐ ছেলেটি কাহারও সন্দেহের তালিকায় ছিল না। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস সেইদিন পোড়ো চণ্ডীমণ্ডপে আসিয়া কৃপা করিয়া আমাকে দর্শন দান করিয়া আপনি আমার বুদ্ধিতে প্রবিষ্ট হইয়াছিলেন। আপনার আশীর্বাদেই আমি সেযাত্রায় ছেলেটিকে বিপদ হইতে উদ্ধার করিতে পারিয়াছিলাম।  

 

আপনার রহস্য সমাধানের কৌশল অসাধারণ ! বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি হইতে ‘শজারুর কাঁটা’ আনিয়া পড়িয়াছিলাম, সেই আমার প্রথম আপনাকে জানিতে পারা। তাহার পর একের পর এক পড়িয়াছি সীমন্ত হীরা, অগ্নিবাণ, চোরাবালি, মাকড়সার রস, মগ্নমৈনাক, চিড়িয়াখানা, রক্তমুখী নীলা, অর্থমনর্থম্, বেণীসংহার, কহেন কবি কালিদাস, আদিম রিপু ও আপনার আরও কত কীর্তির কাহিনী ! বিদেশী রহস্য গল্পের তুলনায় আপনার প্রত্যেকটি ঘটনা আমাকে অনেক বেশি টানিয়া রাখে— সে শজারুর কাঁটা হোক, সীমন্ত হীরা, কিম্বা মগ্নমৈনাক বা চিড়িয়াখানা; প্রতিটাই অনবদ্য। শার্লক হোমস পড়িয়াছি, দেশীয় কিরীটী রায়ও আমাকে ততটা আকৃষ্ট করিতে পারে নাই। আপনার কাহিনীগুলি তো কেবল কাল্পনিক কাহিনীমাত্র নহে। উহারা তৎকালীন বঙ্গসমাজের এক একখানি দলিল। কী নাই তাহাতে? শিক্ষিত বঙ্গসন্তানের অধ্যয়ন বা কর্মের নিমিত্ত কলিকাতার মেসবাড়িতে ভাড়া থাকিবার কথা আছে, বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালা ও অবাঙ্গালী সংস্কৃতির পরিচয় রহিয়াছে, সম্পত্তি লইয়া বঙ্গ-পরিবারে কলহ বিবাদের ঘটনা আছে, উনবিংশ শতকের নব্য শিক্ষিত বঙ্গযুবার রাজনীতির কথা আছে, নানা উপলক্ষে বঙ্গীয় গৃহে ভোজসভার বর্ণনা আছে, উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যক্তিদের মধ্যে তাস-জুয়ার প্রতি আসক্তি, সচ্ছল পরিবারে ভৃত্যের প্রতি নির্ভরশীলতা, বাঙ্গালির গৃহ-পরিবারে সকাল ও বিকালের জলখাবার, মধ্যাহ্নের আহার ও নৈশভোজন, মেস বাড়িতে এমনকি রেস্তোরাঁ ও পথের চায়ের দোকানেরও বহু বিচিত্র খাওয়াদাওয়া সম্বন্ধে আলোকপাত করা হইয়াছে।

 

আপনার লোকশ্রুত কর্মগুলির সময়কাল ১৯৩০ এর দশক হইতে ১৯৬০ এর দশকের মধ্যবর্তী। আমার সেকালে জন্ম হয় নাই। বর্তমান দেহের জন্ম হয় নাই এইকথা বলাই যুক্তিসঙ্গত। আপনার অগ্রজ সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র বাবুর নাম শুনিয়াছেন আশা করি। আমি সেই কালের এক অসহায়া বাল বিধবা ছিলাম, কিন্তু বুদ্ধিমতী বলিয়া দাদাদের সংসারে আমার আদর ছিল। নেপথ্যে থাকিয়া আমি মেজদাদা ও তাহার বিপ্লবী বন্ধুদের দেশাত্মবোধক ক্রিয়াকলাপে পরোক্ষে মদত জোগাইতাম। গোয়েন্দাগিরি তদবধি আমার সংস্কারে এতদূর নিহিত হইয়া রহিয়া গিয়াছে যে, আমি উক্ত কালের ভাষা ও মানসিকতা হইতে বাহির হইতে কষ্ট বোধ করি। আপনার প্রত্যেক কর্মকাণ্ডে নিঃশব্দে সঙ্গে থাকিয়া কত কীই না শিখিয়াছি! অবসর পাইলেই আপনার পুরাতন কীর্তিগুলির মানস স্মরণ করি, উক্ত স্থানসমূহে মানস ভ্রমণ করিয়া থাকি। আহা! অজিতদা কত যত্নেই না সেসমস্ত লিপিবদ্ধ করিয়াছেন! তাঁহাকে আমার শতকোটি প্রণাম। 

 

আপনি বিবাহিত। আপনার একটি পুত্রসন্তানও আছে। আপনি আপাদমস্তক বাঙালি। ধুতি পাঞ্জাবী পড়িয়াই এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে বজ্রমুষ্টির একটি ঘুষিতেই আততায়ীকে ধরাশায়ী করিয়াছেন। ফেলুদাও আমার অত্যধিক প্রিয়। কিন্তু ফেলুদার ন্যায় আপনার শরীরচর্চার কথা প্রকাশ করেন নাই। ফেলুদা ধূমপান করিয়া বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিয়া থাকেন, আপনার কিন্তু সকাল-বিকাল কেবল চা-পান ব্যতীত অন্য কোন নেশা নাই।

 

পুঁটিরাম আপনাদের বাজার ও রন্ধন করে। আপনার ‘নিষিদ্ধ ডিম’ প্রীতির কথা জানিয়াছি ‘রক্তমুখী নীলা’ পড়িয়া। বীরেন বাবু আপনার খাওয়া হয় নাই বলিয়া যখন খাইয়া যাইতে বলিলেন, আপনি সম্মত হইলেন না, চায়ের কথা বলিতে হাসিয়া বলিয়াছিলেন, ‘এক পেয়ালা চা আর সঙ্গে দুটি নিষিদ্ধ ডিম’। অর্থাৎ মুরগীর ডিম। তৎকালীন বাঙ্গালীর খাদ্যাভ্যাসে ব্রিটিশ ফ্যাশনের জোয়ার আসিয়াছে। নিত্যকার প্রাতরাশে চিঁড়া, মুড়ি, মুড়কি, চালভাজা, কলাইভাজার পরিবর্তে বঙ্গসন্তান বিলাতি ব্রেকফাস্ট খাইতে অভ্যস্ত হইতেছে, অজিতদার বর্ণনায় পাই, দুর্গরহস্য-এর উত্তরখণ্ডের শেষভাগে আপনি ও অজিতদা “একদিন কার্ত্তিক মাসের সকালবেলা ব্যোমকেশ ও আমি আমাদের হ্যারিসন রোডের বাসায় ডিম্ব-সহযোগে চা পান শেষ করিয়া খবরের কাগজ লইয়া বসিয়াছিলাম।” আবার ‘অমৃতের মৃত্যু’ গল্পে বিশ্বনাথ মল্লিকের প্রাতঃরাশের যে বর্ণনা আছে, তাহাতেও রহিয়াছে “পাঁউরুটি, মাখন ও অর্ধসিদ্ধ ডিম”- এর কথা। ‘রুম নম্বর দুই’ গল্পে নিরুপমা হোটেলে ম্যানেজার হরিশচন্দ্র বাবুর প্রাতঃরাশেও “চা, টোস্ট মাখন ও দুটি অর্ধসিদ্ধ ডিম” সগর্বে উপস্থিত থাকিয়া বাঙ্গালীর পরিবর্তিত খাদ্যরুচির ঘোষণা করিতেছে। ‘কহেন কবি কালিদাস’- এর মোহিনী তাসের আড্ডার সান্ধ্য জলযোগে তৈরী করিয়া আনিতেছে নানা মুখরোচক খাদ্যসামগ্রী— কখনও গরম গরম কাটলেট, কখনও মুরগীর ফ্রাই। বিলক্ষণ বুঝিতে পারা যায়, মুরগী নামক নিষিদ্ধ পক্ষিটির মাংস ও ডিম্ব বাঙ্গালীর রন্ধনশালায় প্রবেশ করিয়া এক খাদ্য আন্দোলনের সূচনা করিয়াছিল। এই সমস্তই আপনার রহস্য-জট ছাড়াইবার আকর্ষণীয় কাহিনীর সহিত উপরি পাওনা।    

আপনার হয়তো জানা নাই, আপনার রহস্যভেদের কাহিনী লইয়া হিন্দী ও বাংলা ভাষায় কতগুলি চলচ্চিত্র নির্মিত হইয়াছে, তাহাদের মধ্যে বাংলায় চিড়িয়াখানা, শজারুর কাঁটা, মগ্নমৈনাক, ব্যোমকেশ বক্সী (আদিম রিপু), আবার ব্যোমকেশ (চিত্রচোর), সত্যান্বেষী (চোরাবালি), দূরবীন, ব্যোমকেশ ফিরে এল (বেণীসংহার), ব্যোমকেশ বক্সী (কহেন কবি কালিদাস), হর হর ব্যোমকেশ (বহ্নি পতঙ্গ), ব্যোমকেশ গোত্র (রক্তের দাগ), ব্যোমকেশ পর্ব (অমৃতের মৃত্যু) ইত্যাদি এবং হিন্দিতে ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী (সত্যান্বেষী) বিখ্যাত।

 

ইদানীং এত লোকে নানাবিধ কুকর্ম করিয়া গা ঢাকা দিতেছে, ধরা পড়িতেছে না, ধরা পড়িলেও হয় প্রমাণাভাবে কিম্বা ক্ষমতাবান মাতুলগণের হস্তক্ষেপে নিষ্কৃতি পাইয়া পুনরায় কুকর্মে লিপ্ত হইতেছে। উচ্চপদস্থ ব্যক্তির গৃহে লুক্কায়িত কত শত অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কারাদির হদিশ মিলিতেছে, কোটি কোটি টাকার হিসাব মিলিতেছে না, টাকা জাল হইতেছে, মন্ত্রী ও নেতাগণ দুর্নীতির আশ্রয় লইতেছেন, সমাজে সর্বত্র আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইয়া রৌপ্যমূল্যে ক্রয় করা হইতেছে সততা ও মূল্যবোধ। নারী হত্যা হইতেছে, পাচার হইতেছে শিশু, নারী, মাদকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র, গাভী, বনজ সম্পদ আরও কত কী! নারী ধর্ষিতা হইতেছে, দগ্ধ হইতেছে, কোন রহস্যেরই সঠিক কিনারা হইতেছে না।

 

আপনি সূক্ষ্মদেহে বিদ্যমান, ইহা সত্য। তবে আমার একান্ত অনুরোধ, বঙ্গসমাজে পুনরায় আপনি সত্য সত্যই আবির্ভূত হইয়া সত্যান্বেষণ আরম্ভ করিয়া দিন। অজস্র অনুরাগীকে আপনার পার্শ্বে নিশ্চিত পাইবেন। অজিত বাবু কেমন আছেন? এখনও কি লেখালিখি করিতেছেন, নাকি সময়ের অভাবে লেখা ছাড়িয়া দিয়াছেন? এইবার আসিলে আপনি একবার আমার গৃহে অনুগ্রহ করিয়া পদার্পণ করিবেন। সত্যবতীকে অবশ্যই সঙ্গে আনিবেন। চা আমি ভালই প্রস্তুত করি বলিয়া সুখ্যাতি আছে। চায়ের সঙ্গে ‘নিষিদ্ধ ডিম’, হিং- এর কচুরি ও আলুরদম এবং নকুড়ের সন্দেশও আপনার আপ্যায়নে রাখিব। ইদানীং আরও নানা প্রকার সুখাদ্য সুলভ হইয়াছে, দেশবিদেশের সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ব্যাপক হারে বাড়িয়াছে গণমাধ্যম নামক ব্যবস্থার মাধ্যমে। সেসমস্তও আপনার সম্মানার্থে আনাইব। তবে আপনাকে গোপনীয়তা রক্ষা করিয়াই কাজ করিতে হইবে। নচেৎ গণমাধ্যম নামক ব্যবস্থাটি যে কী ভয়ানক তাহার প্রমাণ পাইবেন— তাহারা সত্যকে মিথ্যা করিয়া প্রচার ও অপপ্রচারের বোমা ফাটাইয়া আপনার সমুদয় কর্ম পণ্ড করিয়া দিবে।

 

আমার সশ্রদ্ধ নমস্কার জানিবেন। আপনার উত্তরের অপেক্ষায় রহিলাম।

ইতি,

আপনার ‘চির-অনুরাগিনী’।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. মন ভরে গেল। অসাধারণ একটি পত্র। আরম্ভ করার পর শেষ অবধি না পড়ে কেউ ছাড়তে পারবেনা। সুদীপ।

    উত্তরমুছুন