ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

ইলা-অরুনের জীবন - প্রবোধ চন্দ্র দাস



তীরে বসে সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করছিল ইলা, আর পড়ন্ত বিকেলের রক্তিম আভায় উজ্জ্বল ইলার মুখটার দিকে অপলক তাকিয়েছিল অরুন।

কি দেখছো বলতো, সমুদ্রের দিক থেকে দৃষ্টি না ফিরিয়েই ইলা জিজ্ঞেস করলো।

"তোমাকে! আর কাকে? চিরজীবন তো তোমাকেই দেখেছি!" অরুনের গলায় আবেগের সুর।

আপাদ মস্তক একবার চেয়ে দেখলো ইলা, অরুনের দিকে।

সেইদিকে তাকিয়েই অরুন বললো, "আজও তো তোমাকেই চাই, তাহলে কেন এভাবে কাছে টেনে দূরে ঠেলে দাও? দুবছর হয়ে গেছে আমাদের ছাড়াছাড়িকেন বলতে পারো, ঠিক একইদিনে নিয়ম করে তুমি পুরী ঘুরতে আসো, একই হোটেলের একই রুমে এসে ওঠো, এভাবেই সমুদ্রের ঢেউ গোনো? আমি বলবো কেন? তুমি আজও আমাদের মিলনের স্মৃতি বুকে আঁকড়ে রেখেছো। আমাদের বিয়ের  দিন আজও ভুলতে পারোনি! আর আমি ওদিকে তোমার ফেলে যাওয়া সংসারের ছোট ছোট টুকরো জুড়ে দিন কাটাচ্ছি। তাহলে কেন এই দূরত্ব? আমি সত্যি এর উত্তর পাই না। অরুনের কণ্ঠস্বরে বিষাদ, ব্যাকুলতা মাখামাখি হয়ে যায়।

"এর উত্তর তো সোজা, ভালোবাসি তো দুজন দুজনকে" ইলার চোখ হঠাৎ আর্দ্র হয়ে ওঠে।

তার হাত দুটো ধরে অরুন বলে ওঠে, "তাহলে কেন আমায় ছেড়ে চলে গেলে? মানছি, কাজের অজুহাতে তোমায় অবহেলা করেছি, বিয়ের কয়েক বছরে তুমি আমার জীবনে অভ্যেস হয়ে মিশে গিয়েছিলে যেমন খাওয়া, ঘুম, স্নান, আলাদা করে গুরুত্ব দিই না আমরা ঠিক সেরকম! মানছি ছোট ছোট কথায় অশান্তি হয়েছে, রাগের মাথায় অনেক খারাপ কথা একে অপরকে বলেছি, তোমার সন্দেহ থেকে উদাসীনতা সবই ধাপে ধাপে এগিয়েছে, আমাদের বিচ্ছেদ  টেনে নিয়ে গেছে কিন্তু বাস্তবটা হলো, তুমি আমায় ছাড়া কিছু ভাবতে পারো না, আমিও তোমার নাম না নিয়ে একটা দিনও কাটাতে পারি না। তাহলে কেন আমায় দূরে ঠেলে রেখেছো? আরেকবার শুরু করতে দিচ্ছ না কেন? আকুতি যেন হাহাকার হয়ে ওঠে দু জনেরই গলায়।

মৃদু হেসে ক্লান্ত মাথাটা অরুনের কাঁধে এলিয়ে দিয়ে ইলা বলে ওঠে, "কলেজ থেকে আমাদের প্রেম। কতবার ব্রেক আপ করে নতুন করে শুরু করেছি, ভেবেছিলাম বিয়ে হয়ে গেলে ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু তবুও আমাদের ঠোকাঠুকি লেগে ছিল। শেষে ছাড়াছাড়ি করতে বাধ্য হলাম আমরা নইলে হয়তো খুব বিশ্রী কিছু ঘটে যেত  আমাদের মধ্যে। যতবার দূরে গেছি তোমার থেকে, তোমার সব দোষগুলো উধাও হয়ে গেছে আমার মন থেকে, শুধু তোমার পাগল করা ভালোবাসা মনে থেকে গেছে। কাছে গেলেই সেই এক অশান্তি, দোষারোপ.... আর না অরুন। দেখো, চাঁদ উঠছে সমুদ্রের উপর। একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে নিজের কক্ষপথ ধরে চাঁদ অবিরত পৃথিবীর পাশে ঘুরে চলে, কখনো কাছে আসে আবার দূরে চলে যায়। কাছে এসে মিলিত হতে চাইলেই দুজনে ধ্বংস হয়ে যাবে তাই নিরন্তর এই আকর্ষণ বিকর্ষণের খেলা খেলে চলেছে দুজনে। আমরাও ওরকমই, দূরে গেলে কাছে পাওয়ার জন্য মরি আর কাছে এলে দূরে যাওয়ার আকাঙ্খায় ঝাঁপাই। আমি এখন মেনে নিয়েছি। এই তো ভালো অরুন, প্রতিদিন মনে মনে তোমার সাথেই তো আমার সংসার যাপন, জানি তো সারা পৃথিবীতে একটা মানুষ ঠিক আছে যে আমায় ফেরাবে না, আমার সব বিপদে সে ঠিক দৌড়ে আসবে, এই আকর্ষণ টুকুই থাক না আমাদের সম্পর্কে! তিক্ততা চাই না গো আর, তোমার প্রেমটুকু নিজের হৃদয়ে ধরে রাখতে চাই! এভাবেই কোনোদিন কোথাও হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে নতুন প্রেমিক প্রেমিকার মত সামান্য শিহরণ জাগবে না হয়! আমরা যে নদীর দুই পাড়, সমান্তরালে চলাই আমাদের নিয়তি।"

চোখের জল সামলে এক হাত দিয়ে ইলাকে নিজের বুকের কাছে টেনে নিলো অরুন। কিছু সম্পর্ক হয়তো এভাবেই সমান্তরাল রেখার মতোই চলে ultimate মিল কখনই হবে না।

এদেরই আড়ালে বসে এক ছুপা রুস্তম পাবলিক ঢেউ গুনছিলো আর ওদের কথা ওভার হেয়ার করছিলো। কিছুক্ষণ পর ওরা নিজেদের সামলে নেওয়ার পর এগিয়ে এসে হাত তালি দিয়ে বললো বাঃ এরই নাম হলো প্রেম। আপনারা বেঁচে থাকুন আর এই প্রেমের সত্তাকে বাঁচিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ