তাইতো বেছে বেছে মাত্র তিন- চারটে কিম্ভূতকিমাকার প্রাণীর সাথে পরিচয় করিয়ে শুরু করেছিলাম এই বিজ্ঞান-সিরিজের। ধারাবাহিকতা কতটা বজায় থাকবে, উত্তরটা না হয় সময়ের কাছেই থাক ! আগামী সম্ভাবনার সমস্ত আশঙ্কাকে দূরে সরিয়ে রেখেই, এগিয়ে চলেছি এই ধারাবাহিকের দ্বিতীয় পর্বের দিকে। দেরি না করে, শুরু করা যাক তবে……….
স্বচ্ছ শরীরে বিস্মিত করে গ্লাস ফ্রগ:
নামটা দেখে কিছু মনে হচ্ছে কি? না?-- বেশ! তবে ছবির দিকে একবার তাকান।
কাঁচের মতো স্বচ্ছ দেহাংশের কথা উঠতেই মনে পড়ে গেল আরেক প্রাণীর কথা…….
মগজখানা দেখিয়ে বেড়ায় ব্যারেল আই (Barreleye)
সামুদ্রিক অভিযোজনের প্রসঙ্গ উঠতেই আরো বহু প্রাণীর কথা মনে পড়ে যায়। তাদের সবাইকে নিয়ে আলোচনায় গেলে এ আসর কখনো ফুরোবার নয়। তাই দিতে চাই বিশেষ কারোর পরিচয়……
প্যারোট ফিশ (Parrot Fish), ঠোঁট দিয়ে যায় চেনা
নাম শুনে কিছুই আন্দাজ করা যায়নি, এমনটা হয়েছে কখনও? এখানেও হবে না। ভূমিকায় এই মাছের ঠোঁট।
একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, টিয়াপাখির ঠোঁটের সাথে কতটা মিল! কেন? এখানেও যে সেই অভিযোজন।
প্যারোট ফিশের বাসস্থল মূলত চরমভাবাপন্ন উষ্ণ পরিবেশে। প্রবালদ্বীপ সংলগ্ন জলজ পরিবেশ, যেখানে অন্য যেকোনো প্রাণীর টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব, সেখানেই এদের আস্তানা। টিয়ার ঠোঁটের মতো দেখতে এমন শক্ত দাঁত দিয়েই এরা পাথর, প্রবাল থেকে অ্যালগি বা শৈবালজাতীয় খাবার তুলে তুলে খায়। আর এই খাবারই তাদের জীবনধারণের প্রধান রসদ।
তা সে যাই হোক না কেন, এই প্যারোট ফিশ যে দেখতে ভারী সুন্দর সে বিষয়ে কারো সন্দেহ করার জো' নেই। আর রঙ বেরঙের সৌন্দর্যের ভাণ্ডার যেখানে এই সুবিশাল জীবজগত সেখানে আরেকজনের কথা না জানালেই যে নয়। ভারী অন্যায় হয়ে যায় তাহলে…..
সুন্দর, সুপ্রাচীন, উগ্রতায় পরিপূর্ণ! এর শরীরের অজস্র রঙের বাহার দেখে এর বিচার করতে যাবেন না যেন, রীতিমতো বোকা বনে যাবেন। এককথায় ভয়ঙ্কর সুন্দর এই প্রাণী। জীবজগতে যার আবির্ভাব প্রায় ৪০ কোটি বছর আগে! এত প্রাচীন আর কোনো শ্রিম্প এখন পৃথিবীতে টিকে নেই। শরীরের অঙ্গগুলো এতটাই মোটা আর শক্তিশালী যে এদেরকে উপাঙ্গ না বলে রীতিমতো ক্লাব অর্থাৎ মুগুর বলে ডাকা হয়। এই ক্লাবের আঘাতে এরা কাঁকড়ার খোলসও ভেঙে দিতে পারে।
শুধু তাই নয়,
এই ক্লাব দিয়ে এরা সেকেন্ডে ৫০০ বারেরও
বেশি গতিতে আঘাত করতে পারে! এই
আঘাত একেকটা কাচের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলার জন্য যথেষ্ট। একইসাথে
এর অনবদ্য দৃষ্টিশক্তি একে বিন্দুমাত্র লক্ষ্যচ্যুত হতে দেয় না।
কাজেই এমন অভূতপূর্ব সৌন্দর্যময়কেও ভয়
পাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বৈকি!
হদিশ পাই কোথায়?
জলে তো অনেকক্ষণ থাকা হলো, এবার চলুন তো চট করে একবার স্থলভাগটাও ঘুরে আসি…..
অলসতা যার সফল জীবনশৈলী, শ্লথ (Sloth):
গুণের কমতি নেই এনারও, মাথাটাকে সম্পূর্ণ ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরানোর ক্ষমতা কটা প্রাণীরই বা থাকে?
সবমিলিয়ে বলতে গেলে শ্লথ ভীষণ অলস, কিন্তু বিখ্যাত অলস! আর এর স্থবিরতাকে নিছক অলসতা ভেবে বসলে কিন্তু বেশ ভুল করা হবে। আদতে এও একপর্যায়ের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এদের নড়ন চড়নের গতিতে, দূর থেকে কোনো শিকারী প্রাণী সনাক্তই করতে পারবে না এদের।
ঠিকানা কোথায়?
দেখতে খুব মন চাইলে চলে যেতেই পারেন মধ্য কিংবা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে। নিকারাগুয়া আর কোস্টারিকাতে বেশ ভালো সুযোগ পাবেন, কোনো সন্দেহ নেই।
বৃক্ষনিবাসী এক প্রাণীর কথা না হয় হলো, এবারে আসি একেবারে চারপেয়ে, তৃণভোজী আরেক প্রাণীর কথায়…..
ওকাপি (Okapi),
দেখবেন নাকি বিভ্রান্ত হবেন?
জেব্রা নাকি জিরাফ? জিরাফ নাকি জেব্রা? ছবিখানা দেখুন তো ভালো করে….
কি? চোমকে গেলেন তো একেবারে? ভাবছেন একই প্রাণীর মধ্যে জেব্রা আর জিরাফ দেখতে পাচ্ছি কি করে? তাহলে কি জেব্রা-জিরাফের সংকর কোনো প্রজাতি? না, একেবারেই নয়। ওকাপি সম্পূর্ণ পৃথক, অনন্য এক প্রজাতির প্রাণী। বিবর্তনগত দিক থেকে জিরাফের জাতভাই, যার নিতম্ব আর চার পায়েই ডোরাকাটা, ঠিক জেব্রার মতো। এর একটা ডাকনামও আছে কিন্তু, কী সেটা? -- ' জেব্রা-জিরাফ', আবার কি?
হদিশ জানাতে হয়.....
দুঃখের বিষয় হলেও এটাই সত্যি যে, নিজের অস্তিত্বের লড়াই টিকইয়ে রাখতে প্রকৃতির সাথে প্রতিনিয়ত যুঝে চলেছে এই প্রজাতি। এককথায়, বিপন্ন আর লুপ্তপ্রায় প্রজাতি এই ওকাপি। সংখ্যায় এরা এতটাই কম যে, এদের অস্তিত্বের হদিস ১৯০০ সালের আগে কখনও পাওয়াই যায়নি।
আজকের দিনে কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের উটুরি ফরেস্টে এদের নিবাস, নিরাপদ অভয়ারণ্যে। সেখানে পর্যটকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে বন্যপ্রাণ যারা ভালোবাসেন, তাদের মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই। ফ্লোরিডার হোয়াইট ওক সংরক্ষণ কেন্দ্রে একবার ঢুঁ মেরে আসতেই পারেন। তার জন্যে আগে থেকেই ট্যুর বুক করতে পারেন সংশ্লিষ্ট কোনো বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞের সহায়তায়।
.......
গল্প হোক বা বিবরণ, আড্ডা হোক বা আলোচনা, দীর্ঘায়িত করাটা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। তাই এই পর্বের ইতিটা এখানেই টানতে হলো। তাই বলে, আড্ডা কিন্তু ফুরোয়নি আমাদের। ফুরোবার মতো আলোচনা শুরুই করিনি হয়তো, যেদিন শেষ হবে, সেদিনও হয়তো অসমাপ্তই রেখে যেতে হবে……যাকগে সে পরের কথা, সেসব নিয়ে এখন ভাবুক হয়ে লাভ কি বলুন? আমাদের এই কিছুটা তথ্যময় আবার কিছুটা রসময় আড্ডা কখনো না ফুরোক, এই আশাই রাখি। তবে পাঠকবর্গের কেমন লাগছে, কিংবা তারা কিভাবে দেখতে চান এই সিরিজ কিংবা অন্য যেকোনো সিরিজের আসন্ন পর্বকে তা জানাটা সত্যিই ভীষণ জরুরি। হাজার হোক, পাঠকেরাই তো যথার্থ মূল্যায়নের অধিকারী। তাই আপনাদের ভালো লাগা না লাগাকে ঘিরে কৌতূহল থাকছেই…..অপেক্ষা রইল সকলের অভিমতের।
একই সাথে জিইয়ে রাখলুম কিছু অনুসন্ধিৎসু পাঠকের নীরব অপেক্ষা….. এরপর ‘উৎস’ হাজির হবে আরো অনেক মজার তথ্য নিয়ে, পরবর্তী পর্বে। আশা রাখি, সকলের প্রতীক্ষা, অভিলাষা যোগ্য মর্যাদা পাবে আমাদের ছোট্ট গল্প আসরে।
0 মন্তব্যসমূহ