ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

প্রথম পর্ব: অবিশ্বাস্য প্রাণীর খোঁজে -সোমনাথ দত্ত

বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি….” সত্যিই তো, কতটুকুই বা জানি আমরা? জানার তো কোন শেষ নেই, তাই বলে কি জানার চেষ্টা বৃথা? তা কি হয় কখনো? কালের পরিক্রমায় সভ্যতা যত এগিয়েছে, মানুষের জানার পরিসর বেড়েছেবেড়েছে তার কৌতূহল, নিত্যনতুন আবিষ্কারের স্পৃহা। এই আবিষ্কারের নেশা থেকে জীবজগতের বিশাল ব্যাপ্তিও রক্ষে পায়নি। জে কে রাওলিং এর লেখা “Fantastic Beasts and Where to Find them” এর মতো সৃষ্টির কথা মনে আছে? আজ্ঞে হ্যাঁ,  জাদু জগতের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হগওয়ার্টসের শিক্ষাপ্রণালীতে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বিবেচিত হয় এই বইটি। নিউট স্যালামান্ডারের লেখা বইটি না পড়লেও ওয়ার্নার ব্রাদার্স এর সিনেমাটি উপভোগ করেছে এমন দর্শকের সংখ্যা কিন্তু নেহাত কম নয়।এমন অদ্ভুত সব জীবের অস্তিত্ব বাস্তব পৃথিবীতে সম্পূর্ণ সম্ভব নয় বটে, তবে আপনি জানেন কি, আপনার আমার অতি পরিচিত, ধূলি ধূসরিত এই পৃথিবীতেই এমন বহু প্রাণের অস্তিত্ব বিদ্যমান, আক্ষরিক অর্থেই যাদেরকে 'ফ্যান্টাস্টিক' বলা চলে এই সমস্ত জীবের অস্তিত্ব স্বীকার করতে আপনার মনে সন্দেহ জাগতে একপ্রকার বাধ্যতাদেরকে নিয়েই আমাদের এই বিজ্ঞান গল্পলোকের এবারের বিশেষ এই  আলোচনা। আমরা কিছু এমন প্রাণের অস্তিত্ব জাহির করবো পাঠকের কাছে যাদের বাস্তবতা, থাকা না থাকার প্রশ্ন নিয়ে সকলের মনে জাগবে অবিশ্বাস, সংশয়, কখনোবা উদ্বেগ। তবে একথা ষোলোআনা সত্যি, এই সমস্ত প্রাণীর বৃত্তান্ত কিংবা গল্প কোনো অংশেই কাল্পনিক বা গাঁজাখুরি গপ্পো নয় বরং সম্পূর্ণরূপে প্রমাণিত সত্য। তবে শুরু করছি, আজ আমাদের আলোচনার প্রথম পর্ব।


⬤ অ্যাংলার ফিশ:

অ্যাংলার ফিশ

কি, ছবিগুলো দেখে কি মনে হচ্ছে? ভীষণ বিদঘুটে কিছু একটা, তাই না? বিশ্বাস করুন, এরা কিন্তু স্রেফ বিদঘুটে বা কদর্য আকৃতির নয়, বরং স্বভাবেও ভীষণ রকমের ভয়ঙ্কর। এংলার ফিশ- যে নামের আক্ষরিক অর্থই কিনা মৎস্যশিকারী মাছ তাদের জীবন যাপনের প্রধানতম উপায়ই হলো অজস্র সামুদ্রিক প্রাণী এবং মাছকে ভক্ষণ করে বেঁচে থাকা। তবে এই মাছ শিকারে পদ্ধতির পদ্ধতিটা কিন্তু ঠিক রাঘব বোয়াল আর কিংবা মাগুর মাছের মতো নয়। ছবিটি লক্ষ করে দেখুন, এর মাথা থেকে সামনের দিকে ঝুলছে লম্বা এক ফিলামেন্ট যার ডগায় যেন ছোট্ট একটা মাংসপিণ্ড। এই মাংসপিণ্ডই হল তাদের শিকার ধরার টোপ। মাছ বা  সামুদ্রিক প্রাণী কে কাছে আসতে দেখে তার সামনে ঝুলিয়ে রাখে সেই ফিলামেন্টকে। আর যেই না সে ফাঁদে পা ফেলেছে সেই প্রাণী অমনি বিশালাকৃতির শিকারকেও আত্মসাৎ করতে সেকেন্ডের ভগ্নাংশও সময় নেয় না এংলার ফিশ।

তবে এখানেই শেষ নয়, এই প্রাণীর ব্যাপারে আরও এমন বহু  আছে যা  জানতে পারলে হতভম্ব না হয়ে আর উপায় থাকে না। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীমহলে ভাবিয়ে তুলেছিল এর শারীরবৃত্তীয় আর আচরণ গত বৈচিত্র্য কেননা দীর্ঘদিন যাবত দেখা যাচ্ছিল, যতগুলো এংলার ফিশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে তাদের সবকটিই স্ত্রীলিঙ্গের পুরুষ অ্যাংলারফিশের কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে নাএমনকি অনেকের দেহে বিশেষ এক পরজীবীর সন্ধান মিলছিল। অবশেষে পরবর্তীতে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেল সেই পরজীবীই আসলে পুরুষ এংলার ফিশ! ভেবে দেখুন তো একবার! আসলে জননকালে  পুরুষ প্রাণী স্ত্রীদেহের সাঠে সংযুক্ত হলেও জনন পরবর্তীকালে আবার তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় প্রকৃতির নিয়মে।


⬤ ইয়েতি কাঁকড়া:

ইয়েতি কাঁকড়া

তিব্বতের লোককথায় ইয়েতি নামক প্রাণীটির অবদান বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। যদিও এমন বীভৎস আর ভয়ঙ্কর প্রাণীর অস্তিত্ব আছে কিনা সে বিষয়ে কোনো প্রমাণ মেলেনি। আর বিজ্ঞানীদের একটা বড় অংশের মতেও ইয়েতির অস্তিত্ব সম্পূর্ণ কাল্পনিক। সে যাই হোক, তার বাস্তব জগতের অনুপস্থিতির দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে প্রকৃতিতে বাস্তবে উপস্থিত আছে এক কাঁকড়া, ইয়েতি কাঁকড়া। কাঁকড়া নিজে থেকেই অদ্ভুত শ্রেণীর প্রাণী তবে নিঃসন্দেহে তাদের সবার মধ্যে অদ্ভুত এর থেকেও অদ্ভুততম এই বিশেষ প্রজাতির কাঁকড়া তবে প্রসঙ্গ টা হচ্ছে কেন এই কাঁকড়ার এমন নাম। ছবিটি দেখলেই আপনি কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন।প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা বিশেষ ধরনের দেখতে এই কাকড়ার আবিষ্কার হয় 2005 সালে। শরীরের বক্ষদেশীয় পা অর্থাৎ pereiopods জুড়ে যে সিটা (setae) বিদ্যমান, তা লম্বা আর সাদা হয়ে রীতিমতো ফারের মতো আকার নেয়। মনে হয় গোটা শরীর যেন পশমে আবৃতগল্পের ইয়েতির পশমাবৃত শরীরের সাথে মিল থাকতেই এমন বিশেষ নামকরণ নিঃসন্দেহেপ্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় দক্ষিণ প্রান্তে বসবাস এই বিশেষ প্রজাতির প্রাণীরছোটো ছোটো চোখোগুলোতে রঞ্জকের অভাব নির্দ্বিধায় বলে দেয়, এরা প্রায় অথবা সম্পূর্ন অন্ধ। পশমাবৃত শরীরজুড়ে অজস্র ব্যাকটিরিয়ার বসবাস, এই ব্যাকটিরিয়ার চারণভূমির জন্যই জলে উপস্থিত ক্ষতিকারক খনিজ পদার্থের হাত থেকে রেহাই পায় এই প্রাণী


⬤ আয় আয় (Aye aye):

আয় আয়

অদ্ভুত দর্শনধারী প্রাণীরা শুধু সমুদ্রেই বসবাস করে না। স্থলভাগেও যে এমন প্রাণীর অস্তিত্ব আছে তার অন্যতম নিদর্শন এই আয় আয়মূলত মাদাগাস্কারের উত্তর-পূর্ব ভাগে এই প্রাণীর বসবাসবড় বড় চোখ আর লম্বা আঙ্গুল- বিকট দর্শনধারী এ প্রাণীকে সামনে থেকে দেখলে যে কারো শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল রক্তস্রোত বয়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, আদতে এই প্রাণীরা কিন্তু খুবই নিরীহ প্রকৃতির। প্রাইমেট বর্গের এই প্রাণী শুধুমাত্র গাছের বাকল থেকে কীটপতঙ্গের লার্ভা ভক্ষণ করা ছাড়া আর বিশেষ কোনো কাজে নিজেদের হিংস্রতা দেখায় নাঅথচ কী দুর্ভাগ্য দেখুন, বিদঘুটে এমন চেহারার জন্যই কিনা তাদেরকে দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হত মাদাগাস্কারের বিভিন্ন উপজাতির সাধারন মানুষেরা। মাদাগাস্কারের প্রাচীন উপকথায় তাকে তো ভীষণ অভিশপ্ত আর অশুভ লক্ষণের প্রতীক বলেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তাইতো সাধারণ মানুষের এমন অপবিশ্বাসের কারণেই তারা নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে অসংখ্য আয় আয় প্রজাতির প্রাণীকে বর্তমানে সারাবিশ্বে তারা বিলুপ্তির দৌড়গোড়ায়। অস্তিত্বের এমন সংকটাপন্ন দিনে সারা বিশ্ব জুড়ে বন্য পরিবেশে এই প্রজাতির মাত্র এক হাজার প্রাণীই জীবিত আছে।


⬤ জেলিফিশ (Turritopsis dohrnii):

দেখে দেখতে খুব ছোট মনে হতে পারে, তবে এই প্রাণীটিই যেন নির্বাক ভাষায় চিৎকার করে জানান দিচ্ছে প্রাণী জগতকে ক্ষুদ্র তবু তুচ্ছ নইআজ্ঞে হ্যাঁ, সুবিশাল এই প্রাণীজগৎ সর্বত্র চষে ফেলা যেতে পারে কিন্তু সমস্ত বিশ্বজুড়ে এই প্রজাতিই হচ্ছে একমাত্র যাকে আক্ষরিক অর্থেই 'অমর' বলা যেতে পারেকিভাবে? এখানেই তো আসল গল্প মশাই!

জেলিফিশ
আসলে বিশেষ প্রজাতির প্রাণী কখনোই নিজেদের পরিণতি প্রাপ্তির জন্য কিংবা জনন কার্য সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অন্য কোন প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল নয়পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে, জননের উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ পরিণতি প্রাপ্তির পর এরা অজস্র খন্ডে বিভক্ত হয়ে যায় আর সেই অপরিণত খণ্ডগুলো একসাথে কলোনি তৈরি করে অবস্থান করেঅবশেষে সেই কলোনির প্রত্যেকটি প্রাণী আবার এককভাবে পরিণত বয়সে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আবার অনুরূপ কলোনি তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। এভাবে যুগের পর যুগ ধরে এরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে অন্য কোন প্রাণীর সাহায্য ছাড়াই, সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায়। কি? কোনো পৌরাণিক চরিত্রের কথা মনে পড়ল কি? হ্যাঁ ঠিক রক্তবীজের মতই যেন এদের বংশবিস্তার আর জনন পদ্ধতি

 

দীর্ঘায়িত করতে চাই না আর এই প্রথম পর্ব কেতাই এই পর্বের জন্য আপাতত এই টুকুইসামনের পর্বগুলোতে এরকম আরো বেশ কিছু অবাক করা বিচিত্র সব প্রাণীদের হদিশ জানবো আমরা আশা রাখছি, বিজ্ঞানপ্রেমী পাঠকের অপেক্ষার যথাযথ মূল্যায়ন হবে



সোমনাথ দত্ত


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ