- বই – খুনের ব্যাপার স্যাপার
- লেখক – অভীক দত্ত
- প্রকাশন – আদরের নৌকা ফাউন্ডেশন
- প্রথম প্রকাশ – জানুয়ারী ২০২২
- প্রচ্ছদ শিল্পী – সুবিনয় দাস
- মুদ্রিত মূল্য – ২৫০/-
ন করার মধ্যে নাকি একটা অদ্ভুত নেশা আছে। কিছু কিছু বিশেষ মানসিক প্রবৃত্তির মানুষ এরকমই মনে করে থাকেন। খুন সব সময়ই কোনও কোনও স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে করা হয়। এবং প্রত্যেক খুনি নিজের অপরাধের একটি সুস্পষ্ট যুক্তি পেশ করে থাকেন। যে যুক্তি খুনির নিজস্ব দৃষ্টিকোণে অবশ্যম্ভাবীরূপেই বৈধ হয়।
রজত (?) এরকমই একজন অত্যন্ত সুদর্শন খুনি। যে কিনা শুধুমাত্র খুন করতে ভালো লাগে বলে খুন করে। নিজের রূপ ও সূক্ষ্ম বুদ্ধির চালনায় পরিশীলিত ব্যবহারে একের পর এক নারীকে প্রেমের জালে জড়িয়ে তাদের সাথে গভীর শারীরিক ও মানসিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের পর তাদের হঠাৎ খুন করে। এমনি এমনিই করে। কিংবা বলা ভালো শুধুমাত্র খুন করার নেশায় করে। একজন মানুষের মৃত্যুকালীন চিৎকার, যন্ত্রণায় ছটফট করা – এসবই নাকি তাকে আনন্দের শিখরে পৌঁছে দেয়। চরম স্বকামী মানসিকতায় আবদ্ধ সে অন্য মানুষকে যন্ত্রণায় বিদ্ধ করতে থাকে। অন্যের জীবনের গোপন দুর্বলতাকে নিপুণভাবে ব্যবহার করে তাকে নিজের ওপর নির্ভরশীল বানিয়ে দিয়ে একদিন পরিকল্পনা করে খুন করে। রজতের কৈশোরাবস্থার কোনও বিকৃত ঘটনাই কি এর জন্য দায়ী?
অন্যদিকে পর্ণা ও অনিমেষ। স্বামী স্ত্রী। ব্যাঙ্ক কর্মী পর্ণার সাথে তার বেকার ও অকর্মণ্য স্বামী অনিমেষের দাম্পত্য সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। পর্ণার নিত্য দিনের অপমান,অবজ্ঞা ও নিজের ব্যর্থ জীবনে বীতশ্রদ্ধ অনিমেষের কাছে পর্ণার মৃত্যু কি চরম কাঙ্ক্ষিত বস্তু হয়ে যায়। সেও কি মনে মনে কখনও নিজের স্ত্রীকে খুনের কথা ভাবত না?
আর আছে শীলভদ্র ও রণিতা। মুখোরা, বদমেজাজি, কলহপ্রিয়া রণিতার সব সময়েই ছোট খাটো বিষয়ে চিৎকার করা, কটু কথা বলার অভ্যাস তাদের দাম্পত্যে সকলের অগোচরে এক গভীর ফাটল ধরিয়ে দিতে থাকে । সমস্ত ব্যাপারেই খুঁত ধরে নিজের স্বামীকে অন্যের সাথে তুলনা করা ও প্রত্যেক ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করে স্থান কাল পাত্র নির্বিচারে বিষোদ্গার করার হীন অপরিবর্তনীয় স্বভাব শীলভদ্রকেও একজন সম্ভাব্য খুনীতে রূপান্তরিত করে। তাই সে বেড়াতে গিয়েও প্রমাণহীন ভাবে কি করে খুন করা যায় তার চিন্তা করতে থাকে।
কেন একজন খুন করে? কিভাবে একজন মানুষ খুনী হয়ে ওঠে? কিভাবে খুনের প্রেক্ষাপট তৈরি হতে পারে? কেন একজন মানুষ খুনের নেশায় মত্ত হয়? কেন প্রায় একই ধরণের খুন সে বছরের পর বছর করতে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের ভিন্ন আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট, ভিন্ন বয়সের নারীকেই কেন সে খুন করে? এই সমস্ত খুনের পশ্চাৎপটই বা কি? ঠিক কি কারণে একজন মানুষ খুন করার নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে কিংবা কোন কারণে একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিতে বাধ্য হয়? এই সব কিছুরই যেন উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন অভীক দত্ত তাঁর উপন্যাস “খুনের ব্যাপার স্যাপার”- এ।
উপন্যাসে মোট ৩২টি অধ্যায় আছে। যার শুরু একটি করে গানের লাইন দিয়ে করা হয়েছে। প্রাসঙ্গিকতা অধ্যায়ের মধ্যে লুকিয়ে। বেশ নতুন ধরণের রহস্য উপন্যাস। যেখানে খুনির জবানিতে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। সাধারণত রহস্য উপন্যাসের গতে বাঁধা ফর্মুলার থেকে একটু সরে গিয়ে বেশ কমপ্যাক্ট ফর্মে উপন্যাস রচিত। অতিরিক্ত বর্ণনা বা সাব প্লটের জটিলতা না রেখেও যে আকর্ষণীয় রহস্য গল্প লেখা যায় তার উৎকৃষ্ট নমুনা এই গল্প। প্রাপ্তমনস্ক বিষয়কে যথেষ্ট সাবলীলভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বশ্বাসে পড়ে ফেলার মত উপন্যাস এটি নয়, বরং বেশ সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে বুঝে পড়ে স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। প্রচুর গবেষণা মূলক তথ্য লিখে অযথা পৃষ্ঠা সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়াস নেই বলে লেখককে পৃথকভাবে সাধুবাদ দেওয়া উচিত। তবে সমগ্র উপন্যাস একটু একপেশে লাগল এই জন্য যে যদি এর মধ্যে কোনও একটি নারী চরিত্রও সম্ভাব্য খুনিরূপে ধরা দিত বা খুন করার গোপন ইচ্ছা পোষণ করত। এমন তো নয় যে নারীরা একই মনোভাব রাখেন না। বা নারী মাত্রেই লোভী, পুরুষ নির্যাতনকারিণী হয়ে পুরুষকে খুনিতে রূপান্তরিত করেন! ছোট উপন্যাস হিসাবে পড়তে খারাপ লাগল না।
0 মন্তব্যসমূহ