ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

পাপ -সুমনা সাহা



মুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে উত্তাল ঢেউয়ের উছ্বাস দেখতে দেখতে মনের মধ্যে জমে থাকা অস্বস্তির জটগুলো একটু একটু করে ছেড়ে যাচ্ছে। মিমি পায়ের তলায় কুরকুর করে বালির সরে যাওয়া অনুভব করতে থাকে চোখ বুজে। মাথায় মুখে এসে লাগছে নোনা জলের ঝাপটা। এই আসাটা যে কী ভীষণ দরকার ছিল! আজই এসেছে ওরা পুরীতে। বাবা অফিসের হলিডে হোম বুক করেছে। হোটেলের চেয়ে অনেক বেশি হোমলি লাগে। আর বাবা বাজার করতে ভালবাসে। এখানে মাছ বেশ সস্তা। আগেও এই হলিডে হোমে এসে থেকেছে ওরা। কাজের লোক পাওয়া যায়। সব গুছিয়ে টুছিয়ে দেয়। মা টুক করে একবেলা রান্নাটা সেরে ফেলবে। আর রাত্রে বীচে হাওয়া খেয়ে বাইরে কিছু একটা খেয়ে নেবে। এবার মাত্র তিন দিনের জন্য আসা। মিমির বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেই মা আসার জন্য ব্যস্ত হয়েছিল। জগন্নাথের কাছে মানসিক ছিল। মিমি প্রি ম্যাচিওর বেবি। জন্মের পর থেকেই খুব রুগ্ন ছিল। এই মেয়ে বেঁচে থাকলে যখন বিয়ে হবে, তখন পুরীতে এসে জগন্নাথে পুজো দেওয়া হবে, মনে মনে ভেবে রেখেছিল মা। বিয়ের পর মিমি অয়নের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে। তাই তিনজন একসঙ্গে পুরী আসা। 

একটা বড় ঢেউ আচমকা একেবারে বুক পর্যন্ত ভিজিয়ে দিল মিমিকে। ঠোঁটে নোনা জলের চুম্বন লেগে গেল। মিমির ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। বিতানের কথা মনে পড়ল। পরশু দিন ওকে গুডবাই করে এসেছে। বিতান সারাক্ষণ গুম হয়েছিল। মিমি বলল, “এরকম করছিস কেন? আমাদের মধ্যে তো সব কিছু পরিষ্কার ছিল! আমি সবটা তোকে বলেইছিলাম।” 

বিতান নিঃশ্বাস ফেলে বলেছিল, “আমি তো তোকে ব্লেম করিনি একবারও মিমি। কিন্তু মনটা কথা শুনছে না! কী করি বল? একেবারে অস্ট্রেলিয়া! চাইলেও তোকে আর দেখতে পাব না!”
“বিতান, প্লিজ সোনা, এদিকে তাকা। আমায় একটা গুডবাই কিস দিবি না? দে ভাল করে একটা চুমু দে।” 
“তুই তো আবার বলবি, কী নোনতা তোর চুমু! দেখিস আবার নতুন বরকে বলে বসিস না যেন, তোমার চুমুটা কী মিষ্টি গো। আমার আগের বয়ফ্রেন্ডের চুমুটা এক্কেবারে বিশ্রি নোনা ছিল।” 
মিমি বিতানের পিঠে কয়েকটা কিল মেরে ওকে জাপটে ধরে খুব আদর করেছে। কানে কানে ফিসফিস করে বলেছে, “সত্যি রে, তোর গন্ধটা আমার রক্তের মধ্যে থেকে যাবে। কোনদিন ভুলতে পারব না।” 
“না রে মিমি। অমন সবাই বলে। তারপর একদিন সব ভুলে গিয়ে সংসার করবি। পুরনোটা ভুলতে না পারলে নতুনটাকে ভালবাসবি কি করে?”
মিমি সমুদ্রের দিকে চেয়ে অস্ফুটে বলে, “তুমি তো কিছুই নাও না। সব ফিরিয়ে দাও। আমার কাছ থেকে বিতানের স্মৃতি নিয়ে নাও, প্লিজ! নাহলে পাগল হয়ে যাব।”
মা আর বাবা একটু দূরে বালির উপর হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে। মা বলল, “এবার চলো, গিয়ে খাওয়াদাওয়া সারি। বিকেলে আবার আসা যাবে।” বাবা বলল, “হ্যাঁ, তাই চলো। সারারাত গাড়ি চালিয়ে ঘুম পাচ্ছে। দুপুরে ঘুম দিয়ে ফ্রেশ হতে হবে। সন্ধ্যাবেলা মন্দিরে আরতি দর্শন করে আসব, কি বলিস মিমি?” 
দূর থেকে একজন মহিলা প্রায় দৌড়ে এদিকে আসছে। টকটকে ফর্সা রঙ, মোটাসোটা মহিলা সামনে এসে হাসিমুখে বলল, “ও বিমান দা, তোমরা কবে এলে?”
বাবা শশব্যস্ত হয়ে উঠে পড়ল। সলজ্জ হাসি বাবার মুখে, “পুতি তুই? অ্যাঁ? কি গিন্নি বান্নি হয়েছিস? তোর কত্তা কোথায়? ছেলেমেয়ে?”
“দাঁড়াও বাপু, বলছি সব। আমি তো দূর থেকে তোমায় দেখেই চিনেছি। তুমি অনেক কালো হয়ে গেছ গো বিমান দা। এ কে? তোমার মেয়ে? ওমা কি মিষ্টি মুখ!” 
বাবার এতক্ষণে হুঁশ হল, মা-র দিকে ফিরে বলল, “এ হল পুতি। সেই যে প্রতিমার কথা বলেছিলাম না তোমায়? আমার মামার বাড়ির ওখানে থাকত। বনির বন্ধুর বোন গো!”
মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে পুতি নাম্নী মহিলা বলে, “বৌদি, তোমার বর আমায় কত অঙ্ক করিয়েছে জানো? বিমান দা-র অঙ্কে যা মাথা ছিল! যখনই আসত আমায় অঙ্ক কষে দিত”, মিমির দিকে ফিরে বলল, “তুমি কি করছ? নাম কি তোমার?” মহিলা খুব আলাপী। বাবা বলল, “ও বায়ো কেমিস্ট্রি নিয়ে এম এস সি ফাইনাল দিয়েছে। ওর তো বিয়ে সামনে, তোদের কিন্তু আসতে হবে, বুঝলি? আছিস কতদিন? এই মিমি, পিসিকে প্রণাম কর!”
প্রতিমা ঝমঝমিয়ে উঠল, “ইশ, দেখা হতেই অমনি আসতে হবে, তাই না? দেখা না হলে বলতেই না। আমরা এসেছি এক মাস হয়ে গেল। সামনের সপ্তাহের ফ্লাইট।”
বাবা বলল, “এমা, তোরা চলে যাবি? দ্যাখো কাণ্ড। এসেছিস জানিই না তো!”
“খবর রাখো কি, যে জানবে?” প্রতিমার গলায় অভিমান। ইতোমধ্যে প্রতিমার স্বামী এসে গেছেন, সঙ্গে দুই ছেলে। আট থেকে বারোর মধ্যে বয়স দুজনের। তারা ঘোড়ায় চড়ার বায়না ধরেছে। দুই পরিবার খানিকক্ষণ কথাবার্তার পর যার যার আস্তানার দিকে চলে গেল। মিমি লক্ষ্য করল, বাবার মুখে একটা মৃদু হাসি লেগে আছে। মাঝে মাঝে হাসির ভাবটা লুকানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। স্পষ্টই খুশি খুশি দেখাচ্ছে বাবাকে। 
হলি ডে হোমে ফিরে বাবা বাথরুমে ঢুকলে মিমি মা-কে জিজ্ঞেস করল, “মা তুমি ওই পুতির কথা জানতে?” 
“হ্যাঁ, বিয়ের আগে কানাঘুষো শুনেছিলাম মামির মুখে। তোর বাবার সঙ্গে ওই মেয়েটার একটু ইন্টু মিন্টু মতো ছিল।”
“এত বছর বাদে ওই মহিলার সঙ্গে বাবার দেখা হল, তোমার খারাপ লাগছে? তুমি কি রেগে গেছ?”
“ধুসস, বিয়ের আগে সব ছেলেদেরই অমন একটু আধটু থাকে। ওসব সংসারের জোয়াল কাঁধে চাপলে কোথায় মিলিয়ে যায়।” 
মিমি জানে, বাবা-মা দুজনারই দুজনার প্রতি অসম্ভব টান। দুজনের তুমুল ঝগড়া, খাওয়া বন্ধ, কথা বন্ধ হতে দেখেছে মিমি, আবার কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই দেখেছে, বাবা মায়ের মাথা টিপে দিচ্ছে, নয়তো কফি বানিয়ে আনছে মায়ের জন্য। 
কাজের মহিলাটা উড়িয়া, নাম রানী। কিন্তু বাংলা বোঝে। ব্যবহারও খুব নম্র। ও এসে ঘর টর পরিষ্কার করে মাকে রান্নাঘরে সবজি কেটে, মশলা বেটে সব গুছিয়ে দিল। এই হোমের কেয়ারটেকার বালেশ্বর। সে রানীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বলল, “ওর নামে কোন কমপ্লেন আসে না। আমাকে তো সব সময় পাবেন না। যা দরকার হয় ওকে বলবেন। বাজার টাজার লাগলেও ও করে দেবে। টাকাপয়সা যা দেওয়ার লাস্টে আমাকে দিয়ে যাবেন। আমিই ওকে দিয়ে দেব। আপনাদের যাওয়ার আগে আমি আসব চাবি নিতে।” 
আজ দ্বিতীয় দিন। আজ সকালে পুজো দিয়েছে মা। খুব খুশি। পাণ্ডা থাকায় কোন অসুবিধা হয়নি। কলকাতার আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য খাজা, ছানাপোড়া আর ছানা-মুড়কি নেওয়া হল। সারা সন্ধ্যা ওরা বীচে। উদ্দাম সামুদ্রিক হাওয়া, হরেক ফেরিওয়ালা হাতে শঙ্খ, মোতি মালা, ঝিনুকের তৈরি নানারকম সৌখিন জিনিস নিয়ে ঘুরছে। শঙ্খের আওয়াজ, ট্যুরিস্টদের আনন্দের হৈ হৈ সব মিলে যেন একটা মেলা বসেছে। বাবা দুটো চেয়ার ঘণ্টায় দশ টাকা রেটে ভাড়া নিয়েছে। একটা ছাতার নিচে দুজন বসেছে। মিমি ওদের থেকে একটু আলাদা হয়ে ঢেউ দেখছে। ওরা ভাবছে, মিমি দেশ ছেড়ে, তাদের ছেড়ে অনেকটা দূরে চলে যাবে, তাই মানসিক একটা বোঝাপড়া চলছে। কিন্তু মিমি তো আগামীর কথা ভাবতেই পারছে না। বিতান এখনও তার মন জুড়ে। বন্ধুত্বের চৌকাঠ পেরিয়ে কখন যেন দুজনেই অনেকখানি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল, বুঝতে পারেনি। বিতানের সঙ্গে তার এই নতুন রোমান্সের খবর কেউ জানে না। লোকে বলে নারী আর পুরুষের কাছাকাছি আসা ঘি আর আগুনের মতো। জ্বলে উঠতে সময় লাগে না। যৌবনের প্রবল আবেগে ভেসে গিয়ে যেদিন প্রথম শারীরিক সম্পর্ক হয়, সেই দিনই মিমি বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। কারণ সে অয়নের বাগদত্তা। বিতান কথা দিয়েছিল, কোনদিন কোনরকম দাবী করবে না, করেওনি। কিন্তু, মনের মধ্যে যে কী হচ্ছে, সেকথা কাকে বলবে? সমুদ্রের ওই উত্তাল ঢেউ কী চিনতে পারছে মিমির বুকের ঝড়?   
 
একটা জোরালো পুরুষ কণ্ঠ শুনে মিমি পিছনে তাকিয়ে দেখল একটা পরিবার বাবা আর মায়ের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিয়েছে। মা ডাকছে, “এই মিমি, এদিকে আয়। এই দ্যাখ, তোর একটা মামা হয়। প্রণাম কর।” মিমি অবাক হয়, কাল পিসি, আজ মামা, হল কী? সমুদ্র কত পুরনো দিন ফিরিয়ে দিচ্ছে। মিমি গুটিগুটি এগিয়ে এল নতুন মামাকে দেখতে। লোকটা লম্বা চওড়া দশাসই চেহারার। প্রাণখোলা হাসি। পাশে তার গিন্নি, মাকে এক হাতে জড়িয়ে রেখেছেন সেই মহিলা, “তোমার কথা ওর মুখে কত যে শুনেছি। খুব ইচ্ছা ছিল দেখার। দ্যাখো কেমন দেখা হয়ে গেল?” সেই মামাকে দেখে মায়ের মুখে হাজার পাওয়ারের বাল্ব জ্বলে উঠেছে। পুলু দা পুলু দা করে কত গল্প করছে মা। মিমির মাকে একটু একটু অচেনা লাগে। তাহলে কি মায়ের সঙ্গে এই পুলু-বাবুর ইন্টু মিন্টু ছিল? কিন্তু বাবার চোখে কোন হিংসা, রাগ, বিরক্তি কিছুই নেই। বরং পুলু-বাবুর সঙ্গে বাবাও গল্প জুড়ে দিয়েছে। ওরা তিরিশ বছর আমেরিকায় সেটলড। ওদের এক ছেলে এক মেয়ে। দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। পুত্রবধু আমেরিকান। সবাই চাকরি করে। ছুটিছাটা কম। ওরা এসেছে কোন আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে। ওরা একসঙ্গে খেতে যায় একটা রেস্টুরেন্টে। অনেক রাত্রে হোমে ফিরেও মা থেকে থেকে তার পুলুদার স্মৃতিচারণ করে চলল, কী রকম মারকুটে ছিল, কত ভাল ফুটবল খেলত, পাড়ার সবার বিপদে আপদে পাশে থাকত, ও যখন বিদেশে চাকরি নিয়ে চলে গেল, মাসিমা কত কেঁদেছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। 

মিমির ঘুম আসে না, অনেক রাত্রি পর্যন্ত সে ভাবে, “তবে কি আমিও পারব সব ভুলে নতুন মানুষকে ভালবাসতে? অয়নের প্রতি কি আমি অন্যায় করছি? হে জগন্নাথ, আমার পাপ ক্ষমা করো!” 
আজ ওরা ফিরে যাবে। রানী ওর মেয়েকে নিয়ে এসেছে আজ। বলল, “কাঁদছিল, ঘরে রেখে আসতে পারিনি!” মেয়েটা ফুটফুটে, চার বছর বয়স। কচি কচি দুখানি পায়ে রূপোর মল পরিয়েছে। মায়ের কোলে পা নাচাচ্ছিল। মিমি ওর পা দুটো ধরে নিজের গালে লাগায়। অবাক হয়ে দেখে, বাচ্চাটার দুই পায়ে ছটা করে মোট বারোটা আঙুল। ওর চোখে বিস্ময় দেখে রানী বলল, “হাঁ দিদি। মেয়ে আমার হয়েছে পায়ের দিক দিয়ে, জানো? সব বাচ্চার মাথা আগে বের হয়, কারণ পেটের ভিতর উলটো হয়ে থাকে। আমার মেয়ের মাথা প্রসবের আগে ঘুরে গিয়েছিল। ডাক্তাররা সিজার করবে ভেবেছিল। পরে অনেক কষ্টে সিজার না করেই বের করেছে।”

বালেশ্বর চলে এসেছে। ওদের জিনিসপত্র সব গোছানো হয়ে গেছে। এখন এই তিন দিনের চার্জ ও অন্যান্য খরচ হিসেব করে আর সেইসঙ্গে রানীর পারিশ্রমিকের টাকাও বালেশ্বরের হাতে দিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়বে। বালেশ্বর এসেই রানীর কোল থেকে ওর মেয়েকে নিয়ে প্রচুর আদর করতে আরম্ভ করে দিল। বাচ্চাটাও ওর কোলে খুব মজায় আছে, খিলখিল করে হাসছে। মা রানীর হাতে কিছু টাকা বখশিস দিতে গেলে ও জিভ কেটে সরে গেল। বালেশ্বরকে দেখিয়ে বললো, “ওকে দিলেই হবে।” মা আবার বলে, “তাহলে রানীর টাকাটা তুমি দিয়ে দাও বালেশ্বর, মেয়ে নিয়ে বাড়ি চলে যাক। রাত হয়েছে।” বালেশ্বর বাচ্চাটাকে আদর করতে করতে আড় চোখে রানীর দিকে চেয়ে বলে, “ও এখন যাবে কি? এখন ওর অনেক কাজ। বিছানার চাদর ফাদর চেঞ্জ করে ফ্রেশ চাদর পাতবে, ঘর ঝাড়ু দেবে, তারপর তো বাড়ি যাবে।” মিমি লক্ষ্য করে, রানীর ঘোমটা টানা মাথা বুকে ঠেকেছে, ঘোমটার ফাঁক থেকে দেখা যাচ্ছে তার লজ্জা-রাঙা গাল, ঘেমে ওঠা কপাল। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে সে এককোণে জড়োসরো হয়ে। হঠাৎ মিমির চোখ চলে যায় বালেশ্বরের গোদা গোদা কালো পায়ের দিকে। দুই পায়ের কড়ে আঙুলের গায়ে চাঁপা কলার মতো পুরুষ্টু একটি করে অতিরিক্ত কড়ে আঙুল। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ