কে তুমি? -বিজুরিকা চক্রবর্তী

প্রাসাদসম মহল সে এক বিরাট! 

সারি সারি ঘর সাজানো যে পর পর, 

কুন্ঠায় ভরে প্রথম দরজা খুলি-

বুক দুরুদুরু কি দেখি অতঃপর?! 

চোখ ঝলসায় জৌলুস দেখে তার- 

দেখি নক্ষত্রেরা রয়েছে আকাশ চুমি, 

নগণ্য লাগে নিজেকে বারংবার, 

তারা প্রশ্ন ছোড়ে আমায়, "কে তুমি?"

বেরিয়ে আসি সে ঘর ছেড়ে তখনই

যাই পরের ঘরে উৎসুক মন নিয়ে-

দেখি হিংস্র মুখে কারা যেন বসে সেথা

ঢলা ঢলি করে মত্ত হয়ে গিয়ে! 

আমায় দেখে কুটিল হাসি হাসে, 

বলে, "আপদ বালাই কারা সব আসে শুনি?

বলি সাহস আছে যে এসেছ এইখানে?! 

আগে বল দেখি হে, কে তুমি?"

পালিয়ে আসি প্রাণ নিয়ে এক প্রকার ;

এরপর যাই পরের ঘরের দিকে, 

দরজা ঠেলতে মিষ্টি মধুর আওয়াজ-

থতমত খাই, শুনি কোনখান থেকে?! 

দেখি সে ঘরের পরিবেশ বড় অদ্ভুত-

সবাই শুধু মিষ্টি খায় আর হাসে! 

আমায় দেখে চমকে তারা বলে, 

"কে তুমি? হাসা হাসি আর মিষ্টি খাওয়া আসে?"

অবাক হয়ে সেখান থেকেও বের হই, 

পরের ঘরে ঢুকবো বলে ভাবি, 

সেই ঘরটার পাল্লাটা বেশ ভারী-

নিজের মনকে প্রশ্ন করি, 'যাবি?'

তাও খুলে দিই ভারি দরজার পাল্লা-

আর মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকি আমি! 

দল দল পশু বিচরণ করে ভিতর-

বিবেক বলে, "নিষ্পাপ এরা, কে তুমি?!"

এইভাবে যাই এ ঘর থেকে সে ঘর, 

একের পর এক সব জায়গায় প্রশ্ন, 

অস্তিত্ব সংকট সর্বত্র-

ধৈর্য ভেঙে মন হয় অসহিষ্ণু। 

সর্বশেষের ঘরটায় যাই এইবার ;

দুই পাল্লা খুলে দেই এক ঝটকায়-

স্তম্ভিত হই ভিতরের সেই দৃশ্যে! 

সারি সারি শব শোয়ানো রয়েছে চিতায়-

প্রতিধ্বনি বারবার ফিরে আসে-

কানে চাপা দিই! তবু কেন আমি শুনি?! 

মন্ত্রের মতো কারা ফিসফিস করে? 

বারবার বলে, "বলে যাও কে তুমি?"

না স্বপ্ন আমার এখানেই শেষ নয়, 

আরো একটু তখনও যে ছিলো বাকি-

কানটা চেপে পালিয়ে আসতে গিয়ে

বিশাল সে এক আয়নার মুখোমুখি! 

বলি, 

"এই যে দেখো আকাশ ছুঁই নি আমি, 

হিংস্র হওয়াও শেখা হয়নি আমার, 

অতিরিক্ত মিষ্টিতে পায় বমি, 

পরিমিতিবোধ বজায় রেখেছি খাওয়ার, 

অকারণে হাসতে লাগে যে দ্বিধা, 

মন ও আমার পুরো নিষ্পাপ নয়, 

শতায়ু কামনা একান্ত স্পর্ধা, 

স্বপ্ন দেখিনা করব বিশ্বজয়

তবে, 

নশ্বর দেহ বিলীন হয়ে গেলেও-

যদি থেকে যাই আমি কারোর চেতনাতে-

তবে হে পৃথিবী এ ক্ষুদ্রের পরিচয়-

উত্তর হয়ে আসবে- আমি সে "।।