ধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হতেই দাশবাবু তার ছেলে ভোলাকে, তার মুদি দোকানে এনে বসালেন। কারন ভোলার বোধবুদ্ধি, বিবেচনার উপর তার আস্থা কিঞ্চিৎ কম ছিল। অবশ্য কেবল দাশবাবু নন, অনেকেই ভোলাকে মাথা মোটা বলে ডাকে, কেউ আবার আহাম্মকও বলে। তাই দাশবাবুর ইচ্ছে, অযথা লেখাপড়াতে সময় নষ্ট না করে ভোলা যাতে কম বয়স থেকেই কারবারে মন দেয়। অন্যদিকে পড়াশোনার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে ভোলাও মনের আনন্দে দোকানদারিতে মন দিল। ক্রমশ ভোলা দোকানদারিতে হাত পাকাতে থাকে। দাশবাবুর দুশ্চিন্তাও কমে। এভাবে কয়েক বছর কেটে যায়।
সময়ের নিয়মে তরুণ ভোলা এখন নবযুবক। শরীর মন সব দিক দিয়েই যেন ডানা মেলছে সে। তার মনের মধ্যে এখন রঙিন প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়। ক্রমশ রোমান্টিক হয়ে উঠছে ভোলা। দাশবাবুর দোকানের ঠিক উল্টো দিকে একটা ট্রাভেলিং এজেন্সীর অফিস। কাকলী নামের এক কম বয়সী মহিলা সেখানে কাজ করে। ভোলার সমবয়সী। বেশির ভাগ সময়ে কাকলী একাই অফিস সামলায়। কাস্টমার এলে একটা চওড়া হাসি উপহার দিয়ে সে অভ্যর্থনা জানায়। যাকে বলে কান এঁটো করা হাসি। রাস্তার উল্টোদিকে নিজের জায়গাতে বসে ভোলা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কাস্টমারদের টপকে কাকলীর সেই হাসি মদন বান রূপে ভোলার হৃদয় বিদীর্ণ করে। ভোলা ভাবে কাকলী তার দিকে তাকিয়ে আছে, আর তার জন্যই হাসছে। বলতে গেলে এই হাসি দেখে ভোলার বাহ্যজ্ঞান লোপ পায়। তখন তার মন শ্বেতশুভ্র বলাকা হয়ে নীল আকাশে উড়ে যায়। কিছু পরে কোনো খদ্দেরের ডাকে তার সম্বিত ফেরে। কাকলীকে বেশ মনে ধরেছে ভোলার। কত কিছুই সে কল্পনা করে কাকলীকে নিয়ে। কিন্তু প্রেম নিবেদন করতে পারছে না। মানে সাহসে কুলোচ্ছে না। মনে মনে ছটফট করছে সে।
সন্ধ্যার পর দাশবাবু দোকানে থাকেন না। তখন পাড়ার কমল, সমীর, রাজুরা এসে আড্ডা দেয় দোকানের সামনে পেতে রাখা বেঞ্চে বসে। খদ্দের না থাকলে ভোলাও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। একদিন সে কমলদের খুলে বললো তার মনের কথা। কি করবে তার পরামর্শ চাইলো। সবাইয়ের একমত, একতরফা মনে মনে প্রেম হয় না। আর এক্ষেত্রে অন্যরা কেবল পরামর্শ দিতে পারে, কিন্তু ভোলাকেই নিজের মোর্চা সামলাতে হবে।
ভোলাকে উৎসাহ দিয়ে সমীর বলে, "কত প্রেমিক প্রেমের জন্য প্রাণ দিয়ে দিল। তুই এইটুকু সাহস দেখাতে পারবি না?"
"একটু বুঝিয়ে দাওতো, ঠিক কি করবো?", উৎসাহী ভোলা প্রশ্ন করে।
"একেবারে পুরুষ সিংহের মত সোজা কাকলীর অফিসে যাবি। অমিতাভ, বিনোদ খান্নার মত জামার তিনটে বোতাম খোলা রাখবি। কাকলীর সামনে দুহাত ছড়িয়ে বলবি - আই লা...", উত্তর দেয় সমীর।
"না,না, জামার বোতাম খোলার দরকার নেই। বিরিয়ানির হাঁড়ির মত ভোলার ভুঁড়িটা প্রেমে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। বরং ঢিলে পাঞ্জাবি পরে যাবি। ভুঁড়িটা গার্ড হবে।" সতর্ক করলো কমল।
অবশেষে সকলের পরামর্শ, উৎসাহে অসম্ভব কঠিন কাজটা করার জন্য মনে মনে প্রস্তুত হল ভোলা। সোজা গেল কাকলীর অফিসে। প্রথমে কাস্টমার ভেবে কাকলী তাকে হাসি মুখে স্বাগত জানায়। সুমিষ্ট ব্যবহারে তাকে বিহ্বল করে। কিন্তু ভোলা তার মনের কথা বলতেই, কাকলী সরাসরি না বলে দেয়।
মনের দুঃখে ভোলা ফিরে এলেও, সমীরের উদ্যোগে জরুরী মিটিং ডাকা হয়। মিটিং শুরুর আগে সবাই ভোলাকে 'চিয়ার আপ' বলে স্বাগত জানায়। ভোলাও মনে কিছুটা জোর পায়।
যেহেতু সমীর মিটিং ডেকেছে, তাই সে বলতে শুরু করে, "প্রোপোজাল পেলে কোনো মেয়েই প্রথমে রাজি হয় না। অতএব ঘাবড়ানোর বা হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ধীরে ধীরে তাকে কনভিন্স করতে হবে, লাইনে আনতে হবে। ভোলাকে এখন বুলডগের টেনাসিটি নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। অনেক ধৈর্য ধরতে হবে। তবেই সাফল্য আসবে।"
"তাহলে এখন করণীয় কি?" প্রশ্ন করে রাজু।
"একটাই পথ, কাল ভ্যালেন্টাইনস ডে। কালকের দিনটাকে ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে ভোলার হিল্লে হয়ে যাবে।" পরামর্শ দেয় সমীর।
"বল দাদা কি করতে হবে? আমি এখন অকুতোভয় হয়ে গেছি।" উৎসাহী ভোলা প্রশ্ন করে।
"যা বলছি মন দিয়ে শোন। একদম তালগোল পাকাবি না। আজ একটা লাল গোলাপের বড় সাইজের বুকের অর্ডার দে। পাঁচ ছ'শো টাকার মত খরচ হবে। কাল সকালে ঐ বুকেটা নিয়ে কাকলীর অফিসে যাবি। বুকেটা দিয়ে, কাকলীকে নিয়ে ডেটিংয়ে যাবি। কাকলী প্রথমে বাধা দেবে। না না করবে। কিছুতেই রাজি হবে না। ঘাবড়াবি না। এখানেই তোকে বুদ্ধি প্রয়োগ করে, সব জাল কেটে, সিনেমার মাচো হিরোর মত প্রেমের যুদ্ধ জয় করতে হবে।" রাজু বুঝিয়ে দেয়।
রাজু থামতে সমীর বলে, "কাকলি যত, না না করবে, বুঝবি ও মনে মনে তত হ্যাঁ হ্যাঁ বলছে। ওপরে ওপরে যত রাগ দেখাতে থাকবে, জানবি তত সে তোর কাছে আসতে চাইছে, ভালোবাসতে চাইছে। এক কথায় যত চটবে, তত পটবে।"
"দাদা আমি কাকলীকে নিয়ে একটা প্রেমের গান লিখেছি। সেটা কি কাল গাইবো?" আবার প্রশ্ন ভোলার।
"না,না, উরে বাপরে? একদম নয়। সে এক ভয়ঙ্কর গান। আমি শুনেছি। ঐ গান কাকলী শুনলে স্বয়ং কামদেব, রতিদেবীও এই প্রেম বাঁচাতে পারবে না। ওসব গান মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। শুধু কথার জালে জড়িয়ে ফেল।" আতঙ্কিত কমল বলে ওঠে।
"কিন্তু সেদিনতো অত করে বললাম। তাও রাজি হলো না। বরং অপমান করে তাড়িয়ে দিল। এবার তাহলে কি বলবো?" অধৈর্য ভোলা প্রশ্ন করে।
"যে কথা মেয়েরা শুনতে চায়। শুনতে ভালোবাসে, শুনলে ইমপ্রেস হয়। সেই কথাই বলবি। বলবি - কাকলী কি অপূর্ব তুমি! সোনার প্রতিমার মত তোমার রূপ! কি মোহিনী তোমার হাসি! তুমি হাসলে মুক্ত ঝরে। সদ্য ফোটা টুকটুকে লাল গোলাপের মত তোমার ঠোঁট!...।" রাজু বলতে থাকে।
রাজুকে থামিয়ে ভোলা আবার বলে, "কিন্তু দাদা এত কথাতো মনে থাকবে না। কাকলীর সামনে গেলে এমনিতেই আমার সবকিছু গুলিয়ে যায়। তার ওপর এতোগুলো কথা!"
"লিখেনে, সারা রাত ধরে মুখস্থ করবি।" কমল পরামর্শ দেয়।
আবার রাজু বলতে থাকে। ভোলা লিখতে থাকে। বলে, "সারা রাত ধরে মুখস্থ করবো।"
"মুখস্থ করবি, ঠিক আছে। তবে যদি ভুলে যাস, বোকার মত চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবি না। যা মুখে আসবে বলবি। আসল কথা হল স্মার্টনেস দেখিয়ে কাকলীকে ইমপ্রেস করতে হবে।" সমীর বলে।
আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে। চুলে শ্যাম্পু, মুখে পাউডার ঘষে, রণসাজে সজ্জিত হয়ে ভোলা চলেছে কাকলীর অফিসে। যেতে যেতে মনে মনে সে আওড়াতে থাকে, "ঝকঝকে দাঁত, গোলাপের মত লাল টুকটুকে ঠোঁট। ঝকঝকে দাঁত, গোলাপের মত লাল টুকটুকে ঠোঁট...।" বারে বারে আওড়ে চলে ভোলা। ভোলা জানে একটু ভুল হলেই তীরে এসে তরী ডুববে। এব্যাপারে কিছুটা টেনশনে আছে সে।
"কাকলী আই লাভ ইউ। আমি এসে গেছি তোমার জন্য লাল গোলাপ নিয়ে। চলো আজ আমরা প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়াই।"
"কে আপনি? সকাল বেলায় কি যা তা বকছেন! যান এখান থেকে।" ভোলাকে দেখেই বেশ রেগে গেছে কাকলী।
কাকলী রাগছে, তার মানে ওষুধে কাজ হচ্ছে। উৎসাহিত বোধ করে ভোলা। সে বলে, "কাকলী, আমরা জনম জনমের প্রেমিক প্রেমিকা। তোমার মনমোহিনী হাসি আমাকে পাগল করে দিয়েছে, আমাকে দিওয়ানা করে দিয়েছে, আমাকে প্রেমিক করে দিয়েছে।" মুখস্থ করা কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে যেতে থাকে সে, "কি মিষ্টি তোমার হাসি। কি ঝকঝকে তোমার দাঁত। শিশিরে ভেজা গোলাপের পাপড়ির মত লাল টুকটুকে তোমার মাড়ি।"
থমকে যায় ভোলা। বুঝতে পারে একটা গোলমাল হয়ে গেছে। কাকলীকে রাগতে দেখে, অতি উৎসাহে ভোলা মুখস্থ করা কথাগুলো ভুলে গেছে। কিন্তু সমীর বলেছে থামলে চলবে না। চালিয়ে যেতে হবে। টেনাসিটি দেখাতে হবে। নিজের স্টাইলে চালিয়ে যায় সে। বলে, "তুমি অনন্যা। তাই তুমি হাসলে শুধু মুক্ত ঝরে না, তার সঙ্গে লাল চুনি, খয়েরি গোমেদও ঝরে। আমাকে দুরে সরিয়ে দিও না। তোমার এই মাড়ি বের করা হাসি দেখতে না পেলে আমি বাঁচবো না! তোমাকে নিয়ে আমি একটা গান লিখেছি। ভবিষ্যতে আরো গান লিখব। আমাদের প্রেমের গান, ভালোবাসার গান, কাছে আসার গান। কেবল তুমি আমার কাছে থাকো, ভালোবাসো! আজ প্রেমের দিন। আজ আমাদের কি কাজ করা মানায়? ওঠো ওঠো, অফিস বন্ধ করো।"
"কি মুশকিল! আপনি কি সকাল বেলাতেই নেশা করেছেন?"
"হ্যাঁ, নেশাইতো। তোমার প্রেমের নেশা।"
কাকলী আরো রাগছে! মনের আনন্দে ভোলাও প্রেম জোয়ারে ভাসছে। গলা তুলে কাকলী চিৎকার করছে, "আপনি একটা স্ক্রাউন্ডরেল! একটা চরিত্রহীন লম্পট! মেয়েদের বিরক্ত করাই আপনার নেশা।"
"কি বলছো তুমি! সেদিন যখন তোমার অফিসে এলাম, তুমি আমার হাত ধরে তোমার অফিসের ভেতরে আনলে। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলে। তারপর বললে - আই লাভ ইউ।"
"আমি আপনার হাত ধরেছি? চুমু খেয়েছি? আই লাভ ইউ বলেছি? আপনি কিন্তু এবারে মাত্রা ছাড়াচ্ছেন! এবার আমি চিৎকার করে লোক ডাকবো।"
"বোকা মেয়ে! আবেগের বসে কি বলেছো, কি করেছো, সব ভুলে গেছো! হয় হয় এটাই হয়। সত্যিকারের প্রেমে পড়লে মেয়েরা সব ভুলে যায়। কেবল প্রেমিকের মুখটা মনে থাকে। তোমারও তাই হয়েছে। তুমি কবে কি করেছো, কি বলেছো সব ভুলে গেছো। কেবল নিদ্রায় জাগরণে আমার কথা ভাবছো। মনে মনে আমাকে ডাকছো। তাইতো তোমার ডাকে সাড়া দিতে আমি ছুটে এসেছি। তুমি ডেকেছো তাই এসেছি। তোমার ডাকে সাড়া না দিয়ে আমি পারি? তুমি যখন কাস্টোমারদের দিকে তাকিয়ে হাসো, মনে মনে ভাবো আমার জন্য হাসছো। রাতে যখন বালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমোও, ভাবো আমাকে জড়িয়ে ধরে আছো। ঠিক কিনা বলো? এই জন্যই লোকে বলে - প্রেমে পাগল। তুমি আমার পাগল প্রেমী। তুমি আমার পাগল প্রেমি..কা।"
কথা বলতে বলতে হঠাৎ ভোলা তার ছাপ্পান্ন ইঞ্চি কোমর দোলাতে দোলাতে, মাথা নাড়াতে নাড়াতে গান গেয়ে ওঠে,
-"তু পাগল প্রেমী আওয়ারা,
দিল তেরি মহাব্বত কা মারা...।"
গান গাইতে গাইতে ভোলা হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। দুহাত কাকলীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, "এই দেখো আমার বাঁ গালে কি বড় একটা জড়ুল। এটার ওপরেই তুমি চুমু খেয়েছিলে। একবার জড়ুলটা দেখো। একবার দেখলেই রাজা দুষ্মন্তের মত তোমার সব মনে পড়ে যাবে।"
কাকলীকে চমকাতে চমকাতে কথা চালিয়ে যায় ভোলা। পাল্লা দিয়ে কাকলীর রাগ বাড়তে থাকে। রাগে কাঁপতে থাকা কাকলী হিতাহিত জানশূন্য হয়ে ভোলার গালের জড়ুলের ওপর সপাটে চড় মেরে বসে। চড় খেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় ভোলা। সে ভাবে, চড় মেরেছে! তার মানে কাকলী রাগের চরম পর্যায়ে চলে গেছে। অর্থাৎ প্রেমের চরম পর্যায় আসন্ন! মুখস্থ টুখস্থ সব ভুলে তার মনে তখন একটা কথাই ভাসছে, সমীরের সেই অমোঘ বাণী - 'যত চটবে, তত পটবে'। অতএব আরো রাগাতে হবে কাকলীকে। রাগিয়ে উন্মাদ করে দিতে হবে। কাকলীর আরো কাছে আসে ভোলা। আরো ঘনিষ্ঠ হতে চায়। আরো বেয়াদবি করে। আবার একটা চড়, সেই সঙ্গে চিৎকার। শুরু হয়েছে লোক জড়ো হতে। একাধিক হাতের চড় চাপাটি পড়তে থাকে ভোলার ওপরে। অবশেষে রণে ভঙ্গ দিয়ে কাকলীর অফিস ছাড়লো ভোলা।
ব্যাপারটা নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়েছে। কাকলী চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। সমীররা আর ভোলার দোকানের ধারে কাছে আসে না।
প্রেমে ব্যর্থ ভোলার আর জগৎ সংসারে মন নেই। সর্বদাই উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। কি যেন ভাবে! মাঝে মাঝে তার মোবাইল ফোনটাকে নিয়ে নাড়া চাড়া করে। একদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা বিজ্ঞাপন তার চোখে পড়লো।
"লেখা আহ্বান - স্বনামধন্য কৌতুক শিল্পী স্বজন কুমার এবার নায়কের ভুমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। নায়িকা নবাগতা স্বজনী কুমারী। স্বজন কুমার এক বিরল প্রতিভার অধিকারী। দর্শকদের হাসানোর জন্য তার লিখিত স্ক্রিপ্টের প্রয়োজন হয়না। তার প্রতিটা কথায় দর্শকরা হাসে, উপভোগ করে। দর্শকদের মনে কৌতুক শিল্পী হিসেবে তার একটা বিশেষ ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। সেই ভাবমূর্তি অনুযায়ী লেখা গান আহ্বান করা হচ্ছে। পুরস্কার এক লক্ষ টাকা।"
বিজ্ঞাপন পড়ে ভোলা ভাবলো, সেওতো একদিন একটা গান লিখেছিলো। প্রেমের গান, ভালোবাসার গান, মন দেওয়া নেওয়ার গান, প্রেমের জোয়ারে ভেসে যাওয়ার গান। কিন্তু যার কথা ভেবে লিখেছিলো, সেতো আর সেই গান শুনলো না। গানের মর্মও বুঝলো না। সাত পাঁচ ভেবে, গানটা টাইপ করে পাঠিয়ে দিলো বিজ্ঞাপনদাতার ইমেলে।
কয়েক মাস পরে ভোলা দেখলো তার মোবাইল ফোনে একটা ভিডিও ক্লিপিংস এসেছে। সঙ্গে ছোটো মন্তব্য, "সুধী, কয়েকশো গান আমরা পেয়েছিলাম। তারমধ্যে আপনার লেখা গান আমাদের সর্বোত্তম মনে হয়েছে। ভিডিওতে দেখুন নায়ক তথা কমেডিয়ান স্বজন কুমারের মুখে আপনার লেখা গান। আপনার ব্যাঙ্ক ডিটেলস পাঠান। পুরস্কারের অর্থ পাঠানো হবে। মহরতে আপনার উপস্থিতি একান্ত কাম্য।"
আঙুলের ছোঁয়ায় ভিডিও চালু করে ভোলা দেখলো, নায়ক স্বজন কুমার জঙ্গল, পাহাড়ে ঘেরা একটা মাঠে, মাথার ওপর তার জ্যাকেটটা ঘোরাতে ঘোরাতে নাচছেন এবং গাইছেন,
"আড়ি আড়ি আড়ি।
আড়ি আড়ি আড়ি ।
আজ থেকে তোমার সঙ্গে,
আড়ি আড়ি আড়ি।"
অন্যদিকে নূপুরের ছমছম শব্দ তুলে, একটা গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে নায়িকা স্বজনী কুমারী সুমিষ্ট গলায় প্রশ্ন করেন, "কেন?"
জ্যাকেটটা ঘোরাতে ঘোরাতে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলেন নায়ক। বেলুনের মত উড়তে উড়তে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে গেল জ্যাকেটটা। এবার নায়ক হাতে তুলে নিলেন একটা ডাপলি। ডাপলি বাজাতে বাজাতে গাইতে শুরু করলেন,
"আড়ি আড়ি আড়ি।
আড়ি আড়ি আড়ি ।
হাসতে গেলে বেবি তোমার
বেরিয়ে যায় মাড়ি।"
কপট রাগ দেখিয়ে নায়িকাও গেয়ে ওঠেন,
"আড়ি আড়ি আড়ি।"
নায়ক গলা মেলান,
"মাড়ি মাড়ি মাড়ি।"
নায়ক নায়িকা দুজনেই উদ্দাম নাচছেন এবং গাইছেন।
"আড়ি আড়ি।"
"মাড়ি মাড়ি।"
"আড়ি।"
"মাড়ি।"
"আড়ি।"
"মাড়ি।"
রঙিন আলোর ঝলকানির সাথে নায়ক নায়িকার কন্ঠ সঙ্গীত, নায়কের ডাপলির বোল, নায়িকার নূপুরের ঝংকার এক স্বর্গীয় সুর তরঙ্গের সৃষ্টি করে। শুনতে শুনতে সুরের সাগরে ভেসে যেতে থাকে আগামী দিনের প্রখ্যাত গীতিকার শ্রীমান ভোলা।
0 মন্তব্যসমূহ