ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

প্রেম যমুনা - সুমনা সাহা

 

নীলা জেগে আছে। ঘুমাবে কী করে? শ্যাম যে এখনো আসেনি! ও শ্যামের প্রতীক্ষায় রোজই এমন জেগে থাকে অনেকক্ষণ। এ-বয়সে ঘুমও কি চট করে আসে? ঐ, খুট করে তালা খোলার শব্দ। শ্যাম এল। এখন জামাকাপড় ছাড়বে, হাতমুখ ধোবে। সেই বিকেলে রান্নার মাসির রেঁধে রেখে যায়। ঠাণ্ডা কড়কড়ে ভাত-ডাল-সবজি— ঢাকা সরিয়ে তাই খাবে। তারপর সময় নিয়ে দাঁত মাজবে। সব সেরে রেডিওতে মৃদু সুরে ৬০-এর দশকের গান শুনতে শুনতে ধূমপান করবে। নীলা ওর সিগারেটের কড়া গন্ধ মনের বন্ধ ঘরে আকাশ করে ভাসিয়ে দেয়, সেই আকাশের নিচে টাঙিয়ে দেয় তার যত বস্তাপচা দুঃখের ভেজা কাপড়। মুকেশের ‘জানে কাহাঁ গয়ে ও দিন’-এর দর্দভরি আওয়াজে নীলার চোখের কোন বেয়ে দুঃখ নিংড়ানো জল পড়ে। শ্যামের আকাশ সেসব শুকিয়ে দেয়। তারপর শ্যাম এসে শুয়ে পড়ে নীলার একেবারে পাশটিতে। পাশাপাশি দুটো তো ফ্ল্যাট, মাঝে পাতলা একফালি পাঁচ ইঞ্চির দেওয়াল!

নীলার শ্যাম আসলে সামসুর। বৌ ছেড়ে চলে গেছে কবে। একমাত্র ছেলেটাকেও নিয়ে গেছে। ছেলেটাকে ভর্তি করেছে এই এলাকার স্কুলে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এই খবর জোগার করেছে সামসুর। এ পাড়ায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আসা তো সেই কারণেই। এক আধবার দূর থেকে ছেলেকে দেখে আসে। কোর্ট ছেলেকে কাছে পাওয়ার অনুমতি দেয়নি। পাছে তার পাশবিক প্রবৃত্তি কচি মনে ছাপ ফেলে। এতসব তথ্য নীলাকে দিয়েছে শ্যামের রান্নার মাসি পূর্ণিমা। আরও বলেছে, “এমন ভালমানুষ আমি দুটো দেখিনি। নিশ্চয় জজসাহেবের ভুল হয়েছে। আমরা পাঁচ বাড়ি কাজ করি, মানুষ চিনি।”
 
নীলা মানুষ চেনে না। কি করে চিনবে? মানুষটার সঙ্গে ভাল করে চেনা হওয়ার আগেই তো সরে পড়ল। কোলন ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজ ছিল। আঁচ পেয়েই বিরাট অঙ্কের ইনস্যুরেন্স করে রেখেছিল। তাহলে বিয়ে করল কেন? একথা নীলা কতবার ভেবেছে। এখন মনে হয়, মানুষটা প্রাণপণে তার বংশ রক্ষা করতে চেয়েছিল। তা আর হল না। নীলার গা থেকে নতুন বৌয়ের গন্ধটাও মুছল না, মানুষটা মরে গেল। তিন কূলে তার কেউ ছিল না। নীলারও তো থাকার মধ্যে ছিল এক বিধবা মাসি, সেও আর নেই। রইল কেবল মাথা গোঁজার এই ঠাঁই আর ইনস্যুরেন্স-এর মোটা টাকা। এম আই এস-এর টাকায় একটা পেট দিব্যি চলে যায়। আগে ঘুম আসত না। শ্যাম আসার পর থেকে ও বিছানাটা টেনে একেবারে দেওয়ালে সাঁটিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি ঘুমায়। নীলা আর শ্যাম। মাঝে যমুনা, থুরি, দেওয়াল। থাকলই বা, কান পাতলে নিঃশ্বাসের শব্দও শোনা যায়। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ