ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

এলাহাবাদ ভ্রমণ -কল্যাণী রায়



একবার হঠাৎ করেই ঠিক হলো কাশী ও এলাহাবাদ যাওয়ার (বর্তমানে যারা যথাক্রমে বারাণসী ও প্রয়াগরাজ হিসেবে পরিচিত)। কোনভাবে সবকিছু তৈরি করে আমরা রওনা হলাম কাশীর উদ্দেশ্যে। কাশী পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল। হোটেল ঠিক করাই ছিল। হোটেল পৌঁছে সেদিন ফ্রেশ হয়ে একটু গঙ্গা তীরে বেড়াতে বেরোলাম। একটি ঘাটে বসে গঙ্গার বয়ে যাওয়া দেখতে লাগলাম। মন প্রশান্তিতে ভরে গেল। সত্যিই এ যে কি প্রশান্তি তা বলে বোঝানো সম্ভব কিনা জানিনা। পরের দিন স্নান সেরে বিশ্বনাথ মন্দিরে পুজো দিলাম ও একটা গাড়ি ভাড়া করে বেনারসের অন্য ঘাটগুলি, রাধা কৃষ্ণের মন্দির সব ঘুরে দেখলাম । পরদিন ছিল আমাদের এলাহাবাদ ভ্রমণ। খুব সকাল সকাল আমরা রওনা হলাম এলাহাবাদ এর উদ্দেশ্যে। ভারতের উত্তরপ্রদেশে এলাহাবাদে গঙ্গা-যমুনা সরস্বতী নদীর মিলন স্থলটি হিন্দু ধর্ম অনুগামীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। প্রতি ১২ বছর পর পর এখানে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধীর দেহভস্ম এখানে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।


আমরা এলাহাবাদ ত্রিবেণী সঙ্গমে পৌঁছে ঘাটে গেলাম। সেখানে সারি সারি নৌকো বাঁধা। আমরা একটা নৌকায় চড়ে বসলাম। বলা হয়নি- আমরা বলতে আমি, আমার স্বামী, আমার দুই কন্যা সন্তান ও আমার ননদ, নন্দাই ও তার দুই সন্তান। নৌকায় চড়ে সঙ্গমস্থলে পৌছালাম। এখানে সরস্বতী অন্তঃসলিলা, গঙ্গা ও যমুনাকে একদম আলাদাভাবে বোঝা যায়। গঙ্গা স্বচ্ছ আর যমুনার জল কালো। বলা হয় সরস্বতী মিলিত হয়েছে যমুনার তলা দিয়ে। যেন তিন বোনের মিলনস্থল। ওখানে স্নান করার ব্যবস্থা আছে। আমরা স্নান করলাম। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল ত্রিবেণীতে স্নান করার। তারপর ফেরার পালা। এবার যাওয়ার পালা এলাহাবাদ ফোর্ট।

সম্রাট আকবর ১৫৮৩  খ্রিস্টাব্দে এই ফোর্টটি নির্মাণ করেন বলা হয়। আকবরের তৈরি সমস্ত ফোর্টের মধ্যে এই ফোর্টটি সবচেয়ে বড়। গঙ্গা যমুনা তীরে ফোর্টটি অবস্থিত। আকবর সর্বধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই ফোর্টের ভিতর একটা মন্দির আছে যার নাম পাতালপুরি মন্দির। এরপর আমরা এলাম আনন্দ ভবন যেখানে গান্ধী পরিবারের সমস্ত জিনিস সংগ্রহ করা আছে। এর পাশে আছে খুসরু বাগ। খুসরু বাগ তৈরি করেন আকবরের ছেলে জাহাঙ্গীর। তারপরে রয়েছে চন্দ্রশেখর পার্ক। আরো অনেক কিছু দেখার  আছে। কিন্তু  আমাদের  সময় কম, তাই রওনা হলাম চুনার দুর্গের উদ্দেশ্যে। ফেরার পথে এলাম চুনার দুর্গে। বেলে পাথরের এই দুর্গ কে বানিয়েছেন তা জানা যায়নি। তবে রাজা হর্ষবর্ধনের আমলেই চুনার দুর্গের নাম জানাজানি হয়। গঙ্গার দিকে উঁচু পাথরের দেয়াল ভেতরে একটা পাথুরে কুয়ো। সেখানে বাদশার আমলে সৈন্যরা জল খেতে আসতো। এ কুয়োতে এখন জল নেই; সারা কুয়োময় এখন বাদুরের বাস। একটু এগোলে দেখা মিলল বন্দিশালার। এখানে সবকিছু মিলিয়ে এমন নির্জনতা যে, আপনি হারিয়ে যাবেন প্রাচীন ইতিহাসে। চুনা দুর্গের ছাদে উঠলে দেখা যায় পুরো দুর্গটাকে ঘিরে রেখেছে গঙ্গা। এখান থেকে কারুর পালানোর সাধ্য নেই। শোনা যায় আকবর এই জায়গাটাকে খুব পছন্দ করতেন- দেশের রক্ষার জন্য। জলপথ দিয়ে কেউ স্থলে আসতে পারবে না। আমাদের পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধে হয়ে গিয়েছিল। চুনার দুর্গ থেকে দেখলাম সূর্যাস্ত। এত অপূর্ব যে সূর্যাস্ত হতে পারে, না দেখলে তা বিশ্বাস করা যায় না; কখনো ভোলা যায় না চুনার দুর্গকে। চুনার দুর্গে একবার গেলে মনে হয় বারে বারে যাই। আবার যাবার ইচ্ছে রইল।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ