ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

সাতটি বুনো ধান ও প্রাচীন এক খেলা – নিবারসপ্তক - পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

 


  • বই: নীবারসপ্তক
  • লেখক: কৌশিক মজুমদার
  • প্রকাশনী: বুক ফার্ম
  • প্রকাশকালঅগাস্ট, ২০২১
  • প্রচ্ছদ  – কামিল দাস
  • অলংকরণরাহুল ঘোষ
  • পৃষ্ঠা১৯৯


রমণপাষ্টি”  এক রহস্যময় খেলা, বিচিত্র তার নিয়ম, মৃত্যুর দূত যেন। ফ্রিম্যাসন ভাতৃসংঘযাঁদের সর্বক্ষনের চেষ্টা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে নিজেদের অদ্ভুত মতাদর্শে চালনা করা এবং তার জন্য তাঁরা যে কোনো অপরাধ করতেও পিছপা হয় না। খুন হচ্ছেহাতের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই রহস্যজনকভাবে হাতের ছাপ বদলে যাচ্ছে।

সূর্যতামসী’ বইয়ের আখ্যান শেষ যেখানে হয়েছিল, সেইখান থেকেই এই কাহিনীর সূত্রপাত। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকের কলকাতায় ঘটে চলে একের পর এক হত্যা। অত্যন্ত জটিল মনস্তাত্বিক কুটিলতায় হত্যাকারী বা হত্যাকারীরা নৃশংসভাবে ছিন্নভিন্ন করতে থাকে এমনকিছু মানুষকে যারা কোনো না কোনোভাবে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। কি সেই যুক্তসূত্র? দারোগা প্রিয়নাথ, গোয়েন্দা তারিণী,জাদুকর গণপতি এবং বিশ্ববিখ্যাত গোয়েন্দাটি সেই রহস্যের জটিল জালকে ছিন্ন করার বদলে আটকে পড়েন নানাভাবে। ঘটনার ঘনঘটাই জড়িয়ে পড়েন এক হতভাগ্য নাট্যকার, যিনি মূলত বটতলার বই লিখে পরিচিতি পেয়েছিলেন কিন্তু এক ব্যতিক্রমী নাটক লেখার মধ্য দিয়ে সমাজের বিশিষ্টজনেদের নজরে পড়ে যান। কে সেই নাট্যকার? বিশিষ্ঠ সেই মানুষদের সাথে তাঁর যোগসূত্রই বা কি? কেন হঠাৎ সম্পুর্ন অজ্ঞাত কারণে সেই নাট্যকারকে এক ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হল?
একশ বছর পর সেই হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হতে থাকলে শখের গোয়েন্দা তুর্বসু রহস্যের জাল ছিন্ন করার চেষ্টায় আবিষ্কার করে এক সম্পুর্ন অজানা অচেনা জগতের। যে জগতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন তাঁর পূর্বপুরুষের। জানতে পারে একটি বিশেষ শব্দ- নিবারসপ্তক। কি অর্থ এই শব্দের? কোথা থেকে উৎপত্তি এই শব্দের? অর্থ খুঁজতে গিয়ে অতীত থেকে উত্থান হয় এক গাঢ় অন্ধকারময় জগতের।


এই কাহিনীও আগের খণ্ডের ন্যায় দুটি পৃথক সময়কালে বহমান। দুটি পৃথক কালের সময়কে ধরার জন্য ভাষা থেকে শুরু করে অপর সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ, সমাজ, মানবজীবনকে জীবন্ত করার এক অসাধারণ পারদর্শীতা দেখিয়েছেন লেখক।পুরনো কলকাতা আছে, চীনা পাড়া আছে, পুরনো চুঁচুড়া, পুরনো হাওড়া স্টেশন সবই আছে।উঠে এসেছে ফ্রিম্যাসন,গুপ্তসংঘ, রূপান্তরকামী বা বৃহন্নলা সমাজের অন্ধগলির বিভীষিকাময় প্রথা থেকে শুরু করে পতিতাপল্লীর নৃশংসতা। বিশেষ করে সেই যুগের পতিতাপল্লীতে শ্বেতাঙ্গ বারাঙ্গনা,তাঁদের সন্তানদের জীবন এবং অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সমাজের প্রতি সেই যুগের সমাজের সব স্তরের মানুষদের চরম বিদ্বেষমূলক আচরণ সম্পর্কিত নিখুঁত বর্ণনা পড়লে পাঠক শিহরিত হয়ে উঠতে বাধ্য।


তারিণী-গণপতি-দারোগা প্রিয়নাথ-সাইগারসন সাহেব-লখন-তুর্বসু-ঊর্ণা-দেবাশিস গুহ ছাড়াও এই উপন্যাসে নতুন চরিত্র হিসেবে আগমন ঘটেছে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়,সিনেমা জগতের মহারথী হীরালাল সেন,অমৃতলাল বসু,  নাট্যকার শৈলচরণ শ্যান্যাল, 'দারোগার দপ্তর'-এর প্রকাশক অরুণবাবু,প্রসন্নকুমার দত্ত এবং দেশি-বিদেশি বেশ 'জন সাহেব-সুবো মানুষসহ রানী ভিক্টরিয়ারও।

প্রফেসর মরিয়ার্টির সাথে রাইকেনবার্গ ফলস্ ডুয়েলের পর মরিয়ার্টির অনুচরদের হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য শার্লক হোমস্কে বেশ কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে হয়েছিল যদি আমরা জানতে পারি এই সময়টিতে শার্লক হোমস্ছিলেন আমাদের এই বাংলায় এবং সেইসময়ের লালবাজারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে তিনি রহস্যানুসন্ধানে ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রত্যন্ত বাংলার চন্দননগর-চুঁচূড়া থেকে কলকাতা- কেমন লাগবে আমাদের ? গায়ে শিহরণ জাগবে তো? একইভাবে বিশ্ববিখ্যাত মাইক্রফটের উপস্থিতিও আমরা পাই এই রহস্য কাহিনীতে। এতসব বৈচিত্র‍্যময় চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটাতে গিয়ে কিংবা অতীত বর্তমানের মধ্যে একের পর এক যোগসূত্র স্থাপন করতে গিয়ে লেখক অসাধারণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। বইয়ের প্রচ্ছদ-অলংকরণ-বাঁধাই নিয়ে  প্রশ্ন তুলবার কোনো অবকাশই নেই।সেইসঙ্গে,উপরি পাওনা হিসেবে জুটেছে প্রাচীনত্বের গন্ধ মাখানো রতিবিলাস তৈলের বিজ্ঞাপন।সেইযুগের বিজ্ঞাপনের ভাষা ও চমক সম্পর্কে পাঠকের পরিচয়ও ঘটে।


শুধু অল্প কয়েকটি জিনিস যা পাঠক হিসাবে একটু খারাপ লাগা তৈরি করে, তা হল

·         গল্পের প্রকৃত দৈর্ঘ্যকে বিস্তৃতি দেওয়ার জন্য বা অন্য কোনো কারণে বৃহন্নলা সমাজ, ফ্রিম্যাসন সহ অন্যান্য বেশ কিছু বিষয়ে গবেষণালব্ধ অত্যধিক তথ্য যোগ করার ফলে গল্পের গতি শ্লথ হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা বেশ বিরক্তিজনক।

·         গল্পের রহস্য জমাট বেঁধে দেওয়ার পরে প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই রহস্য উন্মোচন না করা।পাঠককে অসীম কৌতূহলে হাঁকপাঁক করতে দিতে থাকা।

·         রহস্য উন্মোচন না করার উদ্দেশ্য সম্ভবত  বইটির তৃতীয় খণ্ডের প্রতি পাঠকের বিপুল চাহিদা তৈরি করা। এই তৃতীয় খণ্ডের আগমন নির্গমনের পথ প্রশস্ত করার জন্যই প্রকৃত কাহিনী বেশিদূর অগ্রসর হয়নি।

·         বিরক্তি চরমে উঠে যায় যখন গল্পের চরম বিন্দুতে পৌঁছে অনেকটা ক্লিফহ্যাঙ্গার স্টাইলে লেখক হঠাৎ জানান সমাপ্তি তৃতীয় খণ্ডে বলা হবে। শেষ বাক্যটি পড়ে পাঠক কেমন যেন হতভম্ব হয়ে যাবেনরুদ্ধশ্বাসে যেখানে রহস্যের সমাধানের দিকে এগিয়ে চলা হচ্ছিল তা বাধাপ্রাপ্ত হলে স্বভাবতই হতাশা ও বিরক্তি জন্মায়।অতএব অপেক্ষায় বসে থাকতে বাধ্য হন পরবর্তী প্রায় এক বছর রহস্যের শেষ কোথায় তা জানার জন্য। শুধুমাত্র আরেকটি খন্ড প্রকাশের জন্য টেনে হিঁচড়ে এই বইকে মাত্র ১৯৯ পৃষ্ঠায় আটকে রেখে দেওয়ার চেষ্টা লেখকের প্রতি পাঠক হিসাবে বেশ হতাশা সৃষ্টি করে বৈকি। কিন্তু কালের চাহিদা হয়ত এটাইতাই কাহিনীর গতি মাঝ পথেই থেমে যায়। অবশেষে কিছুদিন আগে লেখক স্বয়ং পরবর্তী খণ্ডের নাম ঘোষণা করেছেন এবং বইয়ের প্রচ্ছদ প্রকাশ করেছেন। দিয়ে দিলাম।  ( এটা দেখে সিনেমার পোস্টার রিলিজের কথা মনে পড়ল। বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী বা ওই যে বললাম কালের চাহিদা।  যাইহোক )

অতঃকিম ??? পাঠক  থাকুন প্রতীক্ষায়।







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ