ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

কুমোরটুলির ইতিহাস - পিনাকী সরকার

কুমোরটুলির ইতিহাস

বাঙালির দুর্গাপূজা আসন্ন। ভোরে পারলে আশ্বিনের শারদপ্রাতে তাই ঘুরে আসা যাক যেখান থেকে মায়ের প্রতিমার সূচনাকুমোরটুলি।

 

 শোভাবাজার সুতানুটিতে অবস্থিত কুমোরটুলি। ১৭ শতকের গোড়ার থেকে কুমোরটুলির স্থাপন শুরু হয়েছিল। যখন কৃষ্ণনগর থেকে কুমোররা এসে বসবাস করতে শুরু করেছিল কলকাতায়।

 

প্রথম দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল ১৬০৬ সালে। অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র দুর্গাপূজার প্রচলন করেন। পরে নবদ্বীপ, শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর থেকে কুমোররা ভালো আয়ের আসায় এই কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। এরপর ১৭৫৭ সালে শোভাবাজার রাজবাড়ির রাজা নবকৃষ্ণ দেব কলকাতায় দুর্গাপূজা শুরু করেন। তখনকার দিনে কুমোররা জানত না যে সিংহ কি রকম দেখতে হয়। তাই রাজা নবকৃষ্ণ দেবের বাড়ির দুর্গা প্রতিমায় সিংহের জায়গায় ঘোড়ার রূপ দেওয়া হয়। সেটির প্রচলন আজ অব্দি অব্যাহত।

 

পলাশির যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ব্রিটিশরা বিভিন্ন লোকের কাজকর্মের জন্য বিভিন্ন জায়গা নির্ধারণ করেন- যেমন সুরিপাড়া (সুরা বিক্রেতাদের জন্য), ছুতোরপাড়া (কাঠের মিস্ত্রির জন্য); তেমনি কুমোরটুলি (কুমোরদের জন্য)।

 

রাজা নবকৃষ্ণ দেবের সময় থেকেই শুরু হয় বাবুদের দুর্গাপুজো। সেই সময়ে ঠাকুর দালানে দুর্গাপূজা হতো এবং কার পুজো বেশি ভাল সেই নিয়ে সবার মধ্যে চর্চাও হতো। এরপর শুরু হয় বারোয়ারি পুজো এবং তারপরে সার্বজনীন দুর্গোৎসব।

 

প্রথম সার্বজনীন দুর্গোৎসব ১৯১০ সালে বলরাম বসু ঘাট রোডে হয়।

কুমোরটুলির কর্মশালাগুলো আয়তক্ষেত্রাকার আকৃতির, দেওয়াল ইট দিয়ে তৈরি, টিনের ছাদ সাপোর্ট করা আছে বাঁশ দিয়ে এবং মেঝে সিমেন্টের। রথযাত্রার দিন গণেশ এবং লক্ষ্মী পুজো দিয়েই গাঁরাল কাঠামো পুজো শুরু হয়। প্রথমে কাঠের একটি কাঠামো তৈরি করা হয়, তারপর বাঁশের ফ্রেমের উপর খড় এবং সুতলি দিয়ে প্রতিমার আকার দেওয়া হয়।

 

প্রতিমা বানাতে প্রধানত দুরকমের মাটির ব্যবহার করা হয়- এঁটেল মাটি ও বেলে মাটি। এঁটেল মাটি দিয়ে মূর্তি গড়া হয় এবং তারপরে বেলে মাটি দিয়ে সেই মূর্তিগুলোকে পালিশ করা হয়। গঙ্গা থেকেই প্রধানত মাটি আনা হয়; তবুও উলুবেড়িয়া থেকেই মাটি আনা পছন্দ করেন কুমোরটুলির কুমোররা।

 

দুর্গা প্রতিমা প্রধানত একচালা ডিজাইনে তৈরি করা হয়। কিন্তু ১৯৩৭/৩৮ সালে একবার কুমোরটুলির  বারোয়ারি পুজোয় আগুন লাগার কারণে কুমোরটুলিতে দোচালা ডিজাইন এর সূত্রপাত ঘটান গোপেশ্বর পাল।

 

কুমোরটুলির ইতিহাস

সাধারণত পুরুষেরাই প্রতিমা তৈরি করেন কিন্তু ১৯৯০ থেকে মালা পাল ও চায়না পাল এই দুজন  শুরু করেন দুর্গা প্রতিমা গড়া। এমনকি মালা পালকে ন্যাশনাল হ্যান্ডিক্রাফটস এন্ড হ্যান্ডলুম মিউজিয়াম, নিউ দিল্লী থেকেও এক্সিবিশনের সময় ডাকা হয়। তার প্রতিমা জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, ইউএসএ সব জায়গাতেই রপ্তানি করা হয়। প্রধানত জুলাই থেকে জানুয়ারি /ফেব্রুয়ারি অবধি কাজ চলতে থাকে এবং বেশিরভাগ অর্ডার আগস্ট /সেপ্টেম্বরেই আসে। ১২০০০ প্রতিমা প্রতিবছর তৈরি করা হয়। কমপক্ষে ৯০ টি দেশ থেকে এই কুমোরটুলিতে ঠাকুর প্রতিমার অগ্রিম আসে। বিশেষত ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, আমেরিকা এইসব দেশ থেকেই বায়না এসে থাকে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হয় অনলাইনে দুর্গা প্রতিমা বিক্রয়।

 

এই কুমোরটুলিতেই অবস্থিত মা ঢাকেশ্বরীর মন্দির। দেবী দুর্গাকে কলকাতায় ১৯৪৭ সালে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে আনা হয়। এই মূর্তি দেড় ফুট লম্বা এবং দেবী দুর্গার মতো তিনিও সিংহবাহিনী। লোকের মুখে শোনা যায় যে  মহারাজ বিজয় সেনের স্ত্রী লাঙ্গলবন্দ থেকে ফিরবার সময় একটি পুত্রের জন্ম দেন, যার নাম রাখা হয় বল্লাল সেন। এই বল্লাল সেনই ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

 

পারলে ঘুরেই আসবেন এই ঐতিহ্যবাহী কুমোরটুলি থেকে। মেট্রো এবং বাসে দুভাবেই কুমোরটুলিতে পৌঁছতে পারেন। এখানে গিয়ে নিজেরাই এক অদ্ভুত মুগ্ধতা উপলব্ধি করবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ