.jpg)
লি খুব জোরে হাঁটছে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এই গলিটা পেরোতে হবে। আর দেড়
কিলোমিটার মতো গেলেই বড় রাস্তায় পৌঁছে যাবে। তারপর আর কোনও ভয় নেই। আজ
শিক্ষক দিবস, তাই হই-হুল্লোড় করতে গিয়ে টিউশন ব্যাচ থেকে বেরোতে দেরি হয়ে
গেছে। এদিকে গলিটাও ভালো নয়, তারপর আবার একা। সন্ধে হলেই গলির মোড়ে বখাটে
ছেলেদের মদের আসর বসে, তার সঙ্গে চলে পথচলতি মেয়েদের উদ্দেশ্যে অশালীন
অঙ্গভঙ্গি। কখনও কখনও নেশার ঘোরে মেয়েদের হাত ধরে টানাটানি করার অভিযোগও
উঠেছে। তাই পারতপক্ষে মেয়ে-বউরা সন্ধ্যার পর গলিটাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা
করে। কিন্তু মৌলির উপায় নেই, ওকে এই পথ দিয়েই যেতে হবে।
ঠাকুরের নাম জপতে জপতে আরও জোরে পা চালাল মৌলি। কিন্তু
শেষরক্ষা হল না। গলির মোড়ের কাছে এসে দেখল বখাটে ছেলেগুলো বসে জুয়া খেলছে।
ছেলেগুলোকে দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে যাবার সময় হঠাৎ গলার কাছে টান অনুভব করল।
ভয়ে ভয়ে ঘাড় ঘোরালো, দেখল ছেলেগুলোর মধ্যে যে নেতা গোছের তার এক হাতে ওর
ওড়নার শেষ প্রান্ত এবং অপর হাতে মদের বোতল ধরা, মুখে বিশ্রী হাসি, চোখে
কামাতুর দৃষ্টি। মৌলির মুখটা ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, গলা শুকিয়ে গেছে,
হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। আশেপাশেও কেউ নেই যে সাহায্য চাইবে। অগত্যা হাতজোড়
করে অনেক কষ্টে বলল, "দোহাই আপনার, আমাকে ছেড়ে দিন, যেতে দিন আমাকে, আমি
আপনার বোনের মতো।"
"কিরে, ঘুমের ঘোরে তখন থেকে কী সব বলছিস? কাকে ছেড়ে
দিতে বলছিস? কে তোকে ধরে রেখেছে, যেতে দিচ্ছেনা?"-- মায়ের ডাকে ধরমরিয়ে উঠে
বসল মৌলি। চারপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখল, সে তো নিজের ঘরেই আছে। তার মানে
এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল মৌলি। কিন্তু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল--
এবার ক্যারাটেটা শিখতেই হবে। আজ যেটা স্বপ্ন কাল সেটা সত্যি হতেই পারে। সেই
মুহূর্তে সাহায্যের জন্য কাউকে পাশে নাও পেতে পারে। তাই নিজের রক্ষার দায়িত্ব
নিজেকেই নিতে হবে। আর ঠিক তখনই জানালার পাশের দেওয়ালের কালচে টিকটিকিটা
তিনবার টিক্ টিক্ টিক্ করে উঠল।
0 মন্তব্যসমূহ