এখন তিনি অনেকটাই মুটিয়ে গেছেন,
চুল অর্ধেকের বেশি পাকা, হাঁটুতে বাত,
মঞ্চে উঠতে গেলে সাহায্য লাগে দুজন।
তবে কথা বলার কায়দা কানুন ভোলেননি-
চন্দন পুড়লে সৌরভ বের হয় যেমন,
টায়ার বা প্লাস্টিক পুড়লে দুর্গন্ধ ...
যেমন বর্জিত এম.এল.এ. মঞ্চে উঠে বলল-
এখানের সব রাস্তা করে দিয়েছি আমি,
কলেজের একটা বিল্ডিং, দুটো স্কুল,
কে করে দিয়েছিল শুনি অটো ও টটোর রোড স্যাংশান? আর ইউনিয়ন সেও তো আমার হাতে ...
সামনের সারিতে নেতাদের ভিড়ে এক বৃদ্ধ
মাথা নিচু করে বক্তৃতা শুনছিলেন, আর
বর্ষার মাধবী লতার মতো ঘাড় নাড়ছিলেন।
তিনি হঠাৎ উঠে বললেন- ভাঙা মাটির বাড়িটা
তেতলা করলি রাতারাতি, মঠের বাদায় বিঘে বিঘে
জমি কিনে ঘিরে রেখেছিস তা বেশ কয়েকটা,
বাড়ির কেউ বাকি ছিল না চাকরি পেতে, কেবল
ঘরের পেছনে খুড়তুতো ভাইটা ছাড়া- ইমারত
গড়েছিস পাঁচ হাত তার ভেতরে ঢুকিয়ে, আর
চাকরি দিবি বলে পতিতের বিধবা মেয়েটার...
পাশ থেকে কয়েক জন ছুটে এল, বৃদ্ধকে
উঁচিয়ে নিয়ে চলে গেল কোথায় কে জানে!
আপত বিস্ময় কাটিয়ে নত অনুরাগীর দল বলল
- বলুন, বলুন, মহাভারতের ইতিহাস না শুনলে
আমাদের ঘুম ঢোবানো চোখ পৃথিবী দেখবে না।
স্তাবকের দল ঠিক কী বলছে,বলতে, না নেমে যেতে!
বুঝতে কিছুটা সময় ব্যয় হয়ে গেল বয়স্ক বক্তার।
চারদিক থেকে চিৎকার আর না না অঙ্গ ভঙ্গি
বুঝতে সময় গেল, কেননা বৃদ্ধের কথা গুলো
লাট্টুর মতো ঘুরছে- বাকি সব জানে নাকি!
শশকের শহরে আনাচে কানাচে কতগুলো ফ্লাট
বেদখল করে দেহ ব্যবসা চালাচ্ছে প্রেয়সীরা,
পুলিশ ধরলে আগে হুড়কো দেবে ঘরের মালিকের।
দুটো বস্তি এখন সম্পূর্ণ বিরোধীদের দখলে-
জল, কারেন্ট,ট্যাক্স কিছুই দিতে হত না সরকারকে।
সেকালের সেই ধারা অকৃত্রিম বয়ে চলেছে একালে।
নেতাদের ভোগে কম পড়লে বোম পড়ে বৃষ্টির মতো,
যদি আগুন ধরে যায়! অনেকেই জানে মালিক কে!
- বন্ধুগণ, বেশি কথা বলব না, শুধু বলব- সেবা,
সেবার বিকল্প এ জগতে কিছু নেই, নিঃস্বার্থে,
আমাকে দেখুন সারাজীবন মানুষের পাশে
মানুষের সঙ্গে মানুষের জন্য থেকে গেলাম।
তাঁর পৌত্র একটি ধর্ষণ ও দুটি মার্ডার কেসে
ফেঁসে এখন জনসেবায় মঞ্চের পরিচিত মুখ।
সে এসে পরম যত্নে পিতামহ ধৃতরাষ্ট্রকে
সযত্নে নামিয়ে নিয়ে গেল অতিথি সেবায়।
এবার ভোটে পৌত্র জন আশীর্বাদ নেবে
তার আয়োজনেই অনেক আগে মঞ্চ উঠেছে গড়ে।
গণ্য মাণ্য স্মরণে কুখ্যাতদের সম্বর্ধনা রটে,
মিডিয়ায় মিডিয়ায় ছবি ছোটাছুটি করে,
বাঁধানো দাঙ্গা থামিয়ে পৌত্র পৌত্রিরা
কালো ছবি রঙিন করে নেয়- রাস্তার মোড়ে মোড়ে
স্টেশনে, বাস স্ট্যান্ডে, অটোতে, টোটোতে,বাজারে
হোডিংএ হোডিংএ অপরাধী সব দেবতা হয়ে যায়।
স্বচ্ছতার নামে বিরোধী নাশ স্বেচ্ছাচারিতা
সাদা পোশাক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে ক্ষমতা লোলুপ-
এক একটা আস্ত মানব-খাদক গণতান্ত্রিক পশু।
এইভাবে নরকের পর নরক, পাপের পর পাপ,
চলতে চলতে একদিন পবিত্র পৃথিবী প্রকাশ পাবেই-
দেবতারা বসবেন যে যার আসনে, মানব শোষণে।
সুতরাং বৃদ্ধটার খোঁজ নেওয়ার কোনো দরকার নেই
ওটা একটা রূপকথা,রাক্ষস খোক্কস মারার গল্প।
বৃদ্ধটা না হয় দেওয়ালে ক্যালেন্ডার হয়ে আছড়াবে,
না হয় ধুলো জমা মেঘনাদ বধ কাব্য হয়ে রয়ে যাবে!
আপাত সুন্দরী বৌ কি আবদার করল দেখা যাক,
বলা যায় না পরহাত প্রেমিকা হতে বা কতক্ষণ!
0 মন্তব্যসমূহ