সা
ত সকালে উঠে পরমা ধান সেদ্ধ করছে। ঘরের স্বামী পাড়ি দিয়েছে ভিন
রাজ্যে। একা থাকে না। বাড়িতে মেয়ে অনামিকা, কোলের ছেলে
গৌরাঙ্গ আর শাশুড়ি ষষ্ঠীবালা। বুড়ি সকাল থেকে উঠে বৌমার ধানসিদ্ধ
চুল্লিতে চিটা ধান পতুল খড়ের যোগান দিচ্ছে। ধানের হাঁড়ি নামানো
উঠানোর কাজটা পরমা করছে, কারণ ভারি জিনিস বলে। শাশুড়ি হালকা কাজই
করে।
ছেলে কেশব উচ্চশিক্ষিত হয়েও রাজ্যে
না থেকে বাধ্য হয়েছে কেরালায় বেসরকারি সংস্থায় পানীয় জলের কারখানায়
অস্থায়ী সাধারণ শ্রমিকের কাজ করতে। সে এবার ভোট দিতে আসেনি কারণ
আসা যাওয়ায় অনেক অর্থ ব্যয় হবে। যে অর্থ কিছুদিন পরে মেয়ের বিয়েতে
অথবা সংসারে খরচ হতে পারে।
অনামিকা মাধ্যমিকে পড়ে। ঘর
গৃহস্থালি কাজের মধ্যে থেকে তাকে পড়াশোনা করতে হয়। তাই সকালে উঠে
প্রত্যেক দিনের মত পড়তে বসেছে।
কেশবের স্বপ্ন ছিল দিগন্ত
ভরা সোনালী আলোর সান্নিধ্যে বেঁচে থাকার। বয়স অতিক্রান্ত হয়েছে চাকরি
আর পাবে না। শৈশব থেকে মেধাবী। চাকরির পরীক্ষায় পাশ করেছে। মেধা
তালিকায় নামও আছে। সরকারের খামখামখেয়ালিতে জীবনের লক্ষ্য থেকে দিকভ্রষ্ট
হয়েছে।
গতকাল ভোটের রেজাল্ট
বেরিয়েছে। শাসকপক্ষের নির্বাচিত প্রতিনিধি বলে গেল, কালকে থেকে কলে জল
নিতে যাবে না। ভোট দেয়নি কেশব। যখন পঞ্চায়েত সদস্য বলে যায় তখন
অনামিকা স্কুলে ছিল। ফলে সে জানেনা। মা ঠাকুমাও বলেনি। প্রত্যেক দিনের মত
স্কুল থেকে ফিরে মায়ের ফরমায়েশি বরাদ্দ কাজের মধ্যে দুই কলসী পানীয় জল
টিউবওয়েল থেকে আনা। পঞ্চায়েত সদস্য দূরে লোক মোতায়েন
রেখেছিল লক্ষ্য করতে কেশবের বাড়ির কেউ জল আনতে যায় কিনা। অনামিকা
পরপর দু 'কলসি জল এনে রাস্তায় "কুলতা" এবং "বউবাসন্তী খেলে। অপেক্ষায় থাকে
রেবতী, কৃষ্ণা, মহুয়া, মন্দিরা । যাইহোক সদস্যের পারিষদরা
দেখেছে জল নিতে।
যারা দেখেছিল তারা এবং
পঞ্চায়েত সদস্য এলো ওই দিন রাত্রি দশটার পর। প্রত্যেকের হাতে ব্যাগভর্তি বাংলা
মদ , গাঁজা, বোমা। ব্যাগ থেকে ওইগুলি বের করেই খাটের তলায়
যত্রতত্র রাখল।
ষোলো -সতের জন
লোক মা -মেয়েসহ বৃদ্ধাকে কৈফিয়ত তলব -অকথ্য নির্যাতন -মারধর- অবশেষে ধর্ষণ করে
ঘরের কড়ী কাঠে গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে দিয়ে চলে
যায়। নির্মম অত্যাচারের প্রমাণ তলপেট থেকে রক্ত ঝরছে। একটু পরে পুলিশ
আসল। সঙ্গে মদ্যপ পঞ্চায়েত সদস্যসহ ওরা। সদস্য মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
বলল, বড়বাবু আমাদেরই খাচ্ছেন ! একটা শিক্ষিত লোকের ঘরে এত মদ- বোমা-
গাঁজা কেন থাকে? ভাবুন -কারণটা ভাবুন। এই কথাটা সকালে বলে গেলুম।
তারপর এভাবে আত্মহত্যা বংশশুদ্ধ করবে কেউ কি ভেবেছিলাম?
---- বডি থেকে এত রক্ত ঝরছে কেন? বড়বাবু বলল ।
----- সেটা জেনে লাভ নেই। আমরা জেনেও কী করব? পোস্ট মর্টেমে বোঝা যাবে। আমি তো
রয়েছি সহযোগিতা করার জন্য।
0 মন্তব্যসমূহ