আমার নিবিড় বিদ্যমানতাকে আড়ালে রেখে অতিরিক্ত শোভা কি অর্জন করেছ তুমি?
অবশ্য তোমাকেই বা কোন দোষে দুষি,
আমাকে উপেক্ষা করেছেন আমার সৃষ্টিকর্তা পিতামাতা স্বয়ং।
মহর্ষি তাঁর সাতকান্ড উপাখ্যানের ছত্রে ছত্রে বর্ণনা করে গেলেন আমার ভ্রাতাদের বীরত্ব আর আমাকে রেখে গেলেন লোক চক্ষুর অন্তরালে।
আমি আজও জানলাম না এ দ্বিচারিতার কারণ।
ইতিহাস! আমার সহোদর চতুষ্টয়ের জীবনে আমার ভূমিকা কি এতই নগণ্য?
তুমি অস্বীকার করতে পার ইতিহাস, তোমার পুরুষোত্তম, পূজ্যপুরুষের সৃষ্টিতে আমার অবদান?
সূর্যবংশীয় রাজপরিবারে কন্যা আমি।
স্নিগ্ধা, উজ্জ্বল দীপ্তিময়ী শ্যামবর্ণা তন্বী যুবতীর দীঘল অক্ষিযুগলের দর্পণে ভারতবর্ষের যেকোনো বীর রাজপুরুষের ধরা দেওয়া অসম্ভব ছিল না।
তবুও রাজ্যের কল্যাণে, প্রজাবর্গের হিতার্থে আমার জীবন সমর্পিত হল সর্বত্যাগী ঋষির চরণে।
রাজৈশ্বর্য্যের বৈভবে আজন্মলালিত আমি হলাম তপোবনচারিণী।
কেউ জানতে চাইল না ঋষিপত্নীর জীবনের প্রতি আমি কতখানি অনুরক্ত!
আমার ভ্রাতৃবধূ জানকী, ঊর্মিলার ত্যাগ সর্বজনবিদিত।
সেই তুলনায় আমার ক্ষুদ্র ত্যাগের প্রয়াস যে সমাজের চোখে মূল্যহীন হবে, তাতে সন্দেহ কোথায়!
ইতিহাস, তুমি আমাকে ঈর্ষাপরায়ণ নারীর আখ্যা দিতেই পার,
বিশ্বাস করো ঈর্ষা নয়, এ আমার জন্মজন্মান্তরের আক্ষেপ।
আমি কি পারতাম না প্রেমময়ী কন্যা হতে, স্নেহময়ী ভগিনী হতে?
আমার প্রতি মহর্ষির এই ঔদাসীন্যের কারণেই মহাকাব্য আমাকে ব্রাত্য করে রাখল, অস্বীকার করল আমার নারীসত্ত্বাকে।
মহীয়সী ভারতের হে মহান ইতিহাস,
হে ঋষিশ্রেষ্ঠ মহাকবি বাল্মিকী,
আমি রাজনন্দিনী শান্তা।
রাজরক্তের বীরত্বের নিরিখে কোনো অংশে আমি ক্ষীণ নই।
আমি মহাতেজা,তেজস্বিনী নারী
আমার অস্তিত্বের বিনিময়ে রেখে গেলাম রঘুবংশের অমর কীর্তির বিবরণ।
0 মন্তব্যসমূহ