ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

চিত্রকলার বিস্ময়শিশু - এডমণ্ড থমাস ক্লিন্ট -পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কেরালার কোচি শহরে ১৯ শে মে ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহন করে চিত্রকলার জগতে ভারত তথা পৃথিবীর অন্যতম বিস্ময়শিশু এডমণ্ড থমাস ক্লিন্ট। পিতা মুল্লাপারামবিল থমাস জোসেফ ও মা চিন্নাম্মা জোসেফ। মাত্র ৭ বছরের জীবনে এই বিস্ময়শিশু এঁকে গেছে প্রায় ২৫০০ চিত্র, যা চিত্রকলার জগতে এখনও বিরল কৃতিত্ব।

বাবা ও মায়ের সাথে এডমণ্ড 

বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা ক্লিন্ট ইস্টউডের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। মাত্র ২৫২২ দিনের আয়ুতে আঁকা প্রায় ২৫০০ ছবি এখনও দেশ ও বিদেশের চিত্রকলা বিষয়ের বহু গবেষকের বিস্ময় উদ্রেক করে চলেছে। মাত্র ২ বছর বয়েস থেকে তার আঁকা শুরু। আশেপাশের জীবনকে সে যে ভাবে দেখেছে তাই ফুটিয়ে তুলেছে তার ছবিতে।

বালিকাদের ফুল তোলা।

ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে বাইবেল ও অন্যান্য হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী শোনার অভ্যাস ছিল তার। মা ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমিক - তাঁর গল্প জুড়ে থাকত পশু-পাখী, গাছপালা ইত্যাদি। এডমণ্ডের ছবিতে এই সমস্ত চরিত্ররা বারবার ফুটে উঠেছে। গবেষকরা মনে করেন ছোটবেলার শোনা গল্পই সে তার কল্পনার সাহায্যে ফুটিয়ে তুলত। এতটাই প্রখর কল্পনা শক্তির অধিকারী ছিল।

রাবণ

তার বাবার বন্ধু চিত্রশিল্পী জি . মোহানান প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসতেন এবং তার সামনে বসে ছবি আঁকতেন। শিশু বয়েস থেকে এই সান্নিধ্য তাকে আঁকতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।চিত্রকলার বিভিন্ন মাধ্যম যেমন পেন্সিল স্কেচ, জল রং, তেল রং, মোম রং প্রভৃতিতে সে এঁকে গেছে অগুন্তি ছবি। অত্যন্ত সহজ সরল রেখার টানে আঁকা তার আঁকাগুলি। বিভিন্ন উৎসবের ছবি এঁকেছে অবলীলায়।

থাইয়াম উৎসব 

মাত্র ৫ বছর বয়েসে তার প্রতিভা সকলের নজরে আসে যখন অনূর্ধ্ব ১৮ বয়সের একটি চিত্রকলা প্রদর্শনীতে সে প্রথম হয়। বাড়ির দেওয়ালে রঙিন চক দিয়ে আঁকা শুরু করে। বাড়ির সব দেওয়াল প্রায় ভর্তি হয়ে যেতে থাকে তার আঁকা দিয়ে। কিন্তু জন্ম থেকে কিডনির এক বিরল রোগে আক্রান্ত এডমণ্ড চকের ধুলোয় অসুস্থ হতে থাকে। সারা শরীর ফুলে যেতে থাকে তার। তাকে চকের বদলে দেওয়া হয় রং পেন্সিল ও ছবি বানানোর বিভিন্ন সরঞ্জাম। এরপর ইতিহাস রচনা হয়।

অঙ্কন প্রতিযোগিতায় এডমণ্ড

অসুস্থতার জন্য সর্বদা শারীরিক যন্ত্রনায় কাতর, ফুলে থাকা পেট ও পা নিয়ে চলাফেরায় অসুবিধাও তাকে আঁকাআঁকি থেকে বিরত করতে পারেনি। যে বয়েসে শিশুদের একস্থানে বসিয়ে রাখা কঠিন হয় সেই বয়েসে এডমণ্ড অধীর অধ্যবসায়ে এঁকে চলেছিল। পাঁচ বছর বয়েসে তাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়। শিক্ষক- শিক্ষিকাবৃন্দও অবাক হয়ে যান তার প্রতিভা দেখে।

বাঘ ও শাবক

খুব অল্প বয়েসেই এডমণ্ডের পশু-পাখীর দৈহিক ভাষা বোঝার ক্ষমতা হয়েছিল। ৮০র দশকে যখন ভারতের রাস্তায় অ্যাম্বাসাডার ও ফিয়েট গাড়ি ছাড়া অন্য কিছু প্রায় দেখা যেত না সেই সময় এডমণ্ড রাস্তায় ছোট আকারের গাড়ির ছবি তৈরি করেছিল। যা প্রায় ৩০ বছর পর ভারতের রাস্তায় দেখতে পাওয়া যায়। ১৫ই এপ্রিল ১৯৮৩ সালে মাত্র ৬ বছর ১১ মাস বয়সে এডমণ্ড পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে নিরুদ্দেশের পথে যাত্রা করে। পেছনে ফেলে যায় এক অপূর্ব রঙিন ছবির জগতকে।

বিদায়বেলায় মাকে বলে যায় -

"কিচ্ছু ভেবো না মা… আমি হয়ত হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ব…. আমি হয়ত তোমার ডাকে জাগবো না …. কিন্তু তুমি চিন্তা করবে না,দুঃখ করবে না, কাঁদবে না। জানবে আমি শুধুই ঘুমাচ্ছি।"


এডমণ্ড থমাস ক্লিন্ট- এর আঁকা কিছু ছবি।

বাঁশবনে সূর্যাস্ত

স্থানীয় নৌকা বাইচ উৎসবের নৌকা

কেরালার বিখ্যাত পুরাম উৎসব

কথাকলি

গ্রামের মন্দির


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ