ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

চেতনাহীন -মহম্মদ মহসীন খান

 'আমার ফর্দটা একটু তাড়াতাড়ি ছেড়ে দাও মামুদ ভাই', তাড়া দিলো হাবলু। মামুদ ভাইয়ের বড় মুদিখানা দোকান। চলেও বেশ ভালো। হাবলু গ্রামের বাজারে ছোট একটা চায়ের দোকানের মালিক। সাপ্তাহিক সমস্ত মাল মামুদ ভাইয়ের কাছেই নেয়। হাবলু জিজ্ঞাসা করল, “মামুদ ভাই শুনলাম নাকি তুমি আবার বাবা হতে যাচ্ছ?”

“আর বলো না হাবলু, আসলে তোমার বৌদির খুব ইচ্ছা আর একটা পুত্র সন্তানের। তার জোরাজুরিতেই আরেকটা নিতে হলো ভাই।” একগাল হেসে মামুদ ভাই জবাব দিলো। 

“তা ঠিক, তবে এই বয়সে না নিলেই পারতে। তোমার ছেলেমেয়েদের বয়সও তো কম হল না।” কিছুটা সিরিয়াস ভাবেই বলল হাবলু। 

“আসলে ভাই দিনকাল যা পড়েছে ছেলে-মেয়েদের কোন ভরসা নেই। ছেলে যদি একটাই হয় আর বুড়ো বয়সে না দেখে, কোথায় যাব? তাই ভাবলাম যদি আর একটা ছেলে থাকে তাহলে নিদেনপক্ষে তার কাছে তো আশ্রয়টা পাব।” যুক্তিবাদীর মত মাথা নেড়ে জবাব দিলো মামুদ ভাই। 

এমন সময় দোকানের সামনে মামুদ ভাইয়ের আব্বা, পাকা চুলের অশীতিপর গফুর সাহেব এসে দাঁড়ালেন। পাড়ার সবাই ওনাকে গফুর হাজী বলেই ডাকেন। একসময় শিক্ষকতা করতেন। অবসর নিয়েছেন প্রায় দু'দশক হলো। উনার পাঁচ সন্তানের মধ্যে চার ছেলে এক মেয়ে। মামুদ ভাই উনার বড় ছেলে। লাঠিতে ভর দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে আধা  অভিমান আধা অভিযোগের সুরে বললেন, “আমার সুগারের ওষুধ শেষ হয়েছে তিন দিন হলো, ওষুধটা আনিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে দে না বাবা!”

হাবলুর ফর্দের মাল দিতে দিতে মামুদ ভাই কিছুটা বিরক্তির স্বরে বললে, “চোখের সামনে শুধু আমাকেই দেখতে পাও? জানোই তো সারাদিন দোকানে ব্যস্ত থাকি। তোমার আরও তো তিন-তিনটে ছেলে আছে, তাদেরকে বলতে পারো না?”

“তারাও যে একই কথা বলে বাবা!” অসহায়ের মত উত্তর দিলেন গফুর সাহেব। 

এদিকে হাবলু কি যেন একটা ভাবতে-ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে যায়। মামুদ ভাইয়ের তাড়া খেয়ে সম্বিত ফিরে পায়। তারপর ফর্দের মাল বুঝে নিয়ে টাকা মিটিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ