সাহিত্য রচনা উহা আবার কি জিনিস ? খায় না মাথায় লয় ? বিশেষ করিয়া আমরা। যারা বিজ্ঞানের ছাত্র বা ছাত্রী তাদের কাছে সাহিত্য রচনা কল্পনা ব্যতীত অন্য কিছু নহে। কিন্তু পারিপার্শ্বিক দিকে বিভিন্ন ঘটনা ঘটিতেছে। তাইই সেই কল্পনাময় জিনিসটিকে বাস্তবে আনার চেষ্টা করিতেছি। যদিও এ লেখা ভুল ভ্রান্তি তে ভরা। তবুও আজ কলমটি না ধরিয়া পারিলাম না কারন আমার যা ক্ষমতা তাহা হইতে লক্ষগুন বেশি ক্ষমতা কলমের।
সে আজ বহুদিন আগের কথা যখন ইংরেজ দল এই দেশটাকে ভাঙ্গিয়া চলিয়া গেল। আর তার বছর ২৪ পর, যখন বাংলাদেশে হিন্দুদের ধর্ম আর জীবন বাঁচানো প্রায় অনিশ্চিত হইয়া পড়িল। ঠিক তখন ২৫ বছরের যুবক ঘনশ্যাম মিস্ত্রি ধর্ম আর জীবন বাঁচানোর লিগা, ঘর বাড়ি ছাড়িয়া স্ত্রী রাধা ও পুত্র রাধেশ্যামকে লইয়া এদেশে পলাইয়া আসিল। এদেশে আসিয়া সে শ্রীরামপুর এর নিকট একটি চটকলে কাজ করিতে লাগিল। সময়ের প্রবাহে ধীরে ধীরে রাধেশ্যাম বড় হইল তারপর সেও চটকলে কাজ করিতে লাগিল। ঘনশ্যামের প্রতি ভাগ্যদেবতা বোধকরি প্রসন্ন ছিলেন তাই হয়ত পুত্রের বিবাহ ও দুই বৎসরের নাতি লব কে দেখিয়া যাইতে পারিয়া ছিলেন। বুড়ো মারা যাওয়ার এক বৎসর এর মাথায় বুড়ি ও রওনা দিলেন পরলোক স্বামীর সেবা করিতে।সব ঠিকঠাকই চলিতে ছিল। রাধেশ্যাম চটকলে কাজ করিত বাড়িতে স্ত্রী, পুত্র আর পোষা বিড়াল মিনি এই নিয়া তাদের ছোট্ট সংসারের দিনগুলি ভালােই কাটিতে ছিল। কিন্তু সুখ যে তার কপালে নাই ইহা সম্পর্কে সে অবগত ছিল না। যখন চিন হইতে করোনা ভাইরাস ছড়াইলো আর ভারতবর্ষে লকডাউন শুরু হইল তখন রাধেশ্যাম এর কাজ বন্ধ হইয়া গেল। বাড়িতে ৪ বৎসরের ছোট্ট পুত্রের লইগা জমানো টাকা আর সরকার কর্তৃক নাম মাত্র সাহায্য দিয়া কোন রকম করিয়া চলিতে লাগিল। রাধেশ্যাম আশা করিয়া ছিল লকডাউন ২-৩ মাস পর উঠিয়া যাইবে আর তারপর সে আবার কাজে যাইবে। কিন্তু
তার আশা, আশা হইয়াই রইয়া গেল। এদিকে জমানো টাকাও প্রায় ফুরাইয়া আসিল তবুও লকডাউন শেষ হয়না। আরও ২-৩ মাস পর লকডাউন উঠিল। এই দুই মাস তাহাদের যে কেমন করিয়া দিন গুলি কটিয়াছে তা কেবল তাহারাই জানে। দিন একবেলা খাবার কখনও বা তাও জুটিত না। তাহাদের এক একটা মুহূর্ত কয়েকটা বৎসরের মতো লাগিত। রাধেশ্যাম ভাবিয়াছিল লকডাউন ওঠবার পর সে প্রচুর কাজ করিবে। আর স্ত্রী, পুত্রের এর মুখে তিনবেলা অন্ন তুলিয়া দিবে। কিন্তু তাহা আর হইল না চটকল হইতে বহু শ্রমিক ছাটাই হইল, আর তাহাদের মধ্যে একজন হইল রাধেশ্যাম। সময়টা শীতকাল রাধেশ্যাম দুই দিন যাবত কাজের সন্ধানে ঘুরিতেছিল। রাত্তিরে রাধেশ্যাম বাড়ি ফিরিয়া দেখে পুত্রের ভীষণ জ্বর বাড়িয়াছে।গত দুইদিন ধরিয়া তার জ্বর। ঠিকমত না খাইলে কারই বা কয়দিন শরীর ভালো থাকে। দুইদিন যাবত তারা কিচ্ছুটি খায় নায়। পোষা বিড়াল মিনিটাও না খাইতে পাইয়ে গতকাল মারা গিয়াছে। তাহাদের দুইদিন যাবত কিচ্ছু জোটেনি, তো মিনির কি করিয়া জোটে। এইদিকে পুত্রের ভীষণ জ্বর কিন্তু ঘরে একটিও পয়সা নাই। গতকাল পাশের বাড়ি হইতে কিছুটা ভাত পুত্রকে খাওয়াইয়া ছিলাম কিন্তু আজ আর পাবে কোথায়। বোধকরি এখন বুকের রক্ত ছাড়া তাহাদের কাছে কিছু নাই, পুত্রকে খাওয়ানোর মতো। রাত্তিরে প্রবল জ্বর আসিল। তারা তখন প্রানপনে ভগবান কে ডাকিতে লাগিল। কিন্তু মহেশ্বতা দেবীর ' ভাত ' গল্পের মতো ভগবান বোধকরি কাথামুড়ি দিয়ে ঘুমাইতেছেন। ভোর হইলে তারা মৃত পুত্রকে লইয়া শশ্মানের দিকে যাইতে থাকে। কিন্তু একটিও পয়সা নেই তাই পোলাকে কোলে লইয়া ১০ কিমি পথ হাটিয়া হাটিয়া যাইতে লাগিল। তারা তিনদিন কিচ্ছুটি খায় নাই। ক্ষুধা,তৃষ্ণা নিয়ে তারা চলিতে লাগিল। কিন্তু তারা শশ্মান অবধি পৌঁছাইতে পারিল না তার আগেই যমের পেয়াদা তাদেরকে লইয়া গেল।
এইখানি শুধু আমার দেখা একটা রাধেশ্যাম। একরকম লাখ লাখ রাধেশ্যাম আজ লকডাউন, এরপর নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করিয়া পরলোকের দিকে চলিতেছে।
0 মন্তব্যসমূহ