বাংলা চলচ্চিত্রে এর আগে ‘নির্বাক’ তৈরি হয়নি -রাজদীপ বিশ্বাস

পটভূমি আলোচনা ও ব্যাখ্যা: নির্বাক, বাংলা সিনেমা জগতের একটি অন্যতম ড্রামা, আর্টিস্টিক, এনথোলজিক্যাল ফিল্ম, যেখানে মোট চার ধরনের ছোটো গল্পকাহিনী দেখানো হয়েছে; প্রতিটি গল্পই একে অপরের সাথে আন্তঃসংযুক্ত এবং গল্পগুলোর সাবপ্লট হলো মানুষের আবেগ কিংবা বলা যায় মানবিক উচ্ছাস। মুভিটির চারটি ছোটো ছোটো গল্পেই রয়েছে চার ধরনের ভালোবাসার কাহিনী, কিন্তু সেগুলো সব ভিন্ন ভিন্ন ধরনের; গল্পগুলোতে দেখা যায় কেউ একজন এমন এক মানসিক রোগে পীড়িত যে কিনা নিজেকেই নিজে ভালোবাসে, এছাড়া আছে ভিন্ন ভিন্ন জীবের মধ্যে প্রেমের উচ্ছাস, ত্রিকোণ প্রেম, অমর প্রেম যেগুলো খুবই অপ্রত্যাশিত, কাল্পনিক, বিশৃঙ্খল, অপ্রতিভ। কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যবশত হওয়া সত্ত্বেও পরিণতি একটাই এবং সেটা হলো ‘মৃত্যু’ ।

মাস্টারপিস এলিমেন্টস: এখানে মুভিটির নামের মতোই মুভিটি যে কাউকে নির্বাক করে দিতে পারে, এতো সুন্দর গল্পকাহিনী, বিষয়ধারণা, লেখনীপ্রতিভা । গল্পকাহিনীটি কাল্পনিক হওয়া সত্ত্বেও মুভিটির বেশিরভাগ দৃশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ যেগুলো একজন সাধারণ মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং এই ধরনের লেখা বুঝতে পারলে সত্যিই যে কাউকে মুগ্ধ করে দিতে পারে। মুভিটিতে বিশেষ কিছু দৃশ্যে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রেমের কাহিনী এত্তো সুন্দর, নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে সত্যিইতা অভাবনীয় এবং এই গল্পের লেখক সৃজিত মুখার্জী-এর অসাধারণ লেখনী প্রতিভার কথা জানা যায় । তাছাড়া রয়েছে তার মাধুর্যপূর্ণ পরিচালনা । খুবই নিখুঁত , দুর্দান্তভাবে তিনি পরিচালনা করেছেন এই মুভিটিতে , সাথে প্রতিটি গল্পে তিনি ভিন্ন প্রকারে শুট করেছেন , তাৎপর্যপূর্ণ নির্দিষ্ট

বর্ণ ব্যবহার করেছেন , যেটি একজন প্রতিভাবান পরিচালকের পরিচয় । অন্যদিকে অভিনয়ে সুস্মিতা সেন , যীশু সেনগুপ্ত , খুবই ভালো কাজ করেছেন কিন্তু বিশেষ করে অঞ্জন দত্ত এবং ঋত্বিক চক্রবর্তী - এই দুইজন এমন বিস্ময়কর অভিনয় করেছেন , যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । সব মিলিয়ে মুভিটি অবশ্যয় একটি মাস্টারপিস মুভির বিশিষ্ট উদাহরণ ।

পজিটিভ ও নেগেটিভ দিক: মুভিটির মোটামুটি সব কিছুই অসাধারণ, দুর্দান্ত সেহেতু সেরকম বিশেষ কোনো নেগেটিভ দিক নেই; তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুভিটির স্ক্রিনপ্লে একটু ধীরগতির বলে মনে হয়।

সিদ্ধান্ত: ‘নির্বাক’ সম্পূর্ণরূপে একটি আর্টিস্টিক ফিল্ম, দর্শকদের নিজ দায়িত্বে চলচ্চিত্রটি খুবই ধৈর্য সহকারে দেখতে হবে। কিন্তু এক কথায় এটি অসাধারণ। 

আমার কাছে ফিল্মটির রেটিং - ৪.৭ / ৫

বি: দ্র:- ‘নির্বাক’ একটি কাল্ট মুভি অর্থাৎ চলচ্চিত্রটি যখন মুক্তি পেয়েছিল তখন খুব বাজে প্রতিক্রিয়া পেলেও পরবর্তীতে এই মুভির বিষয়ধারণা দর্শকরা বুঝতে পারে এবং মুভিটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। খুব আত্মউৎসর্গের সাথে তৈরি করা সিনেমা যেগুলি তাদের মুক্তির সময়কাল পেরিয়ে পরবর্তী সময়কালে বিখ্যাত হয়ে ওঠে এবং সেটির মাহাত্ম্য দর্শকরা বুঝতে পারে, সেগুলোকেই কাল্ট মুভি বলা হয় ।