ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

পাহাড় - প্রতীক মিত্র

 
ট্রেন মিস করাটা তখন আর কারো মাথায় নেই। চিন্তা একটাই। কত তাড়াতাড়ি পৌঁছনো যায়। বর না হয় রীতি রেওয়াজ মানে না। কনে মানে। পুরাদস্তুর মানে। লগ্ন-টগ্ন পেড়িয়ে গেলে বিয়ে  সে না পর্যন্ত করতে পারে। বর তাকে হাড়ে হাড়ে চেনে। দু’বছরের ঘনিষ্ঠতায় এইটুকু সে তার হবু অর্ধাঙ্গিনীকে ভালই চিনেছে। বর অনেক অনুরোধ করেছিল বিয়েটা যদি শহরতলী থেকেই করে ফেলা যায়। কনে শোনেনি। কনের বাড়ির লোক আরও একবগ্গা গোছের। বর বোঝানোর চেষ্টা করেছিল খরচাপাতি যাতে কমানো যায়। কনেপক্ষ দু’কানের সদ্ব্যবহার করে এক কান দিয়ে সে প্রস্তাব শুনে অন্য কান দিয়ে সেটা বের করে দিয়েছে। এবং এলাহি আয়োজন ততক্ষণে করে ফেলেছে গহীন অরণ্যের কোন রিসোর্টে। বর অগত্যা তার হাতেগোনা ক’জন লোককে  নিয়ে ট্রেন ধরতে গিয়ে গেল জ্যামে ফেঁসে। ব্যস। টাটা করতে করতে ট্রেন গেল পালিয়ে। কনে যখন সন্ধেবেলা শুনলো যে বর আর বরযাত্রী টাটা সুমো করে যাত্রা শিয়ালদাহ থেকে সবে শুরু করেছে সে ভাবলো বর নির্ঘাত স্বভাবোচিত কায়দায় মজা করেছে। কিন্তু বর যখন ভিডিও কল করে কনেকে সত্যিই বুঝিয়ে দিল যে সে গাড়িতে এবং যাত্রাপথের আশিভাগই বাকি কনের তখন ভিমরি খাওয়ার অবস্থা। সে তার হবু বরের সাথে রাস্তায় রেস্টুরেন্ট, সিনেমা ইত্যাদি অনেক জায়গায় গেলেও বর যে এমন চমক দেবে সেটা সে কোনোভাবেও নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারেনি। তারপর আর কি অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ শেষে কনে ফোন কেটে দিলে রাশভারী শ্বশুর ব্যারিটোন গলায় রাতের দিকে ঝামেলার গভীরে গিয়ে জট ছাড়াতে উদ্যোগী হলে খেই হারিয়ে ফেলে। ভাবে নির্ঘাত মনে মনে কোন কুক্ষণে যে মেয়ের এই মাকড়াটার সাথে আলাপ হয়েছিল। বিয়েকে কেউ এত ইয়ে মানে হালকাভাবে নিতে পারে? বিয়ে? যাজ্ঞে ওদের পথচলা চলতে থাকে। ওদের মানে বর, বরের দাদা, বরের দুই মেসো এক মামা আর এক কাকুর। ড্রাইভারের সারা রাত গাড়ি চালিয়ে একটু ঢুলুনি এবং বড় বাইরের একটু বেগ এসেছিল সেটাও কেটে যায় এদের একের সাথে অন্যের ঝগড়ায়। আর সেকি ঝগড়া! কেউ কারোকে ছেড়ে কথা বলছে না। ম্যানারস? ওসব এদের অভিধানে নেই। শেষমেশ বরের মাথা থেকে বিয়ের আসরে পৌঁছনোর ভুতটা নামলো সেবক বলে একটা জায়গায় পৌঁছে। বর এর আগে পাহাড় এত কাছ থেকে দ্যাখেনি। বরের দাদা দেখেছে। তবে সেও ভাইয়ের মুগ্ধ হওয়াতে বেশ মজা পাচ্ছিল। ভালো লাগছিল সবারই। ঝগড়ার সেই পরিবেশটাই আর যেন নেই। হাওয়ায় কেমন যেন ছুটি ছুটি ভাব।ওরা আদৌ বরযাত্রী তো নাকি পর্যটক? গাড়িকে একটা সুন্দর ব্রিজ পেরিয়ে একদিকে গেলে ডুয়ার্সে বিয়েবাড়ি অন্যদিকে যখন সিকিম ওরা তখন একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।এমনকি বরও।কিরে কি করবি? দাদা জিজ্ঞেস করলো।এই তালে সিকিম মেরে দিই চ। বিয়েতো রইলোই। ট্রেন মিস করার মতন বিয়েটাও মাথা থেকে ওদের বেরিয়ে যায়নি তো! পাহাড়। জঙ্গল! পাহাড়ি নদী! পৃথিবীটা কি অনায়াসেই এত সুন্দর হয়ে যায়! কিভাবে যে? কনের কতগুলো যে মিস কল ততক্ষণে হয়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই। কনে বরকে পই পই করে বারণ করেছিল পাহাড়ের দিকে বেশিক্ষণ না চাইতে! বর আর শুনলো কই? এখন কনেও বরের মাথা থেকে আউট না হয়ে যায়? ওদের মাথায় তখন ঘুরছে: ব্রিজের দু’দিকে দুটো রাস্তা। একদিকে সিকিম অন্যদিকে বিয়েবাড়ি। শেষ পেরেকটা মনে হচ্ছে পাহাড়ই পুঁতবে। বরের হবু শ্বশুর তার রাশের ভার ধরে রাখতে পারলে হয়!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ