ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

ভাড়াটিয়া ছেলে - কিরণ ঘোষ

দেখতে দেখতে সাত -সাতটা বছর কাটিয়ে দিল শিবু, সন্ধ‍্যা মাসির বাড়িতে। শিবু সন্ধ্যামাসির বাড়িতে ভাড়া থাকে। দুইতলা বাড়ির নীচের দক্ষিণ দুয়ারী কোণের ঘরটা ৮০০ টাকা মাসিক দিয়ে শিবুর ঘর ভাড়া নেওয়া। বর্তমানে গোটা বাড়িতেই তাকে অধিকার দিয়েছে মাসি; তবে শিবু একা মানুষ- ঐ ঘরটাই তার দখলে। শিবু একটা কারখানায় কাজ করে মাসে ৯০০০ টাকা বেতন পায়। অনায়াসে চলে যায়। একা খেতে আর ক' পয়সা? বিয়েটিয়ে করেনি। বয়স ও বেড়েছে, বিয়ে না করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একা জীবনই সুখের জীবন শিবু মনে করে। এদিকে সন্ধ‍্যামাসি বাড়ির মালিক; ওরফে সন্ধ‍্যাপ্রিয়া গাঙ্গুলি। বয়স সত্তর টপকেছে। বহু বছর আগেই স্বামী গত হয়েছেন। এক মেয়ে চাকরীর সুবাদে বিদেশে থাকে। আর্কিটেক্ট। মাকে বহুবার বিদেশে নিয়ে চলে যেতে চেয়েছে। মা যায়নি। ওটা যে উনার স্বামী সংসার ! গ্রামের এ স্মৃতি ছেড়ে উনি যাবেন না- অনেক মায়া। এইভাবেই কাটিয়ে দিয়েছেন বহু বছর। শেষ জীবনটাও এখানেই কাটাতে চান। মেয়ে আগে বছরে দুবার আসত। 15 দিন করে থাকতো। গত 1 বছর আসেনি। এবার দূর্গা পুজোয় আসবে। তারও অনেক দায়িত্ব। ছেলের পড়াশোনা।  স্বামী চাকরি হারিয়েছে-  সাথে সংসারের দায়িত্ব। এসবেই আবদ্ধ। আসবার টাইম পায় না। তাছাড়া ছেলের এরকম গ্রাম‍্য মশার উপদ্রবের জায়গা একদমই পছন্দ না। সন্ধ‍্যামাসি সামান্য পেনশন পায়, তাই হয়ে যায়। তবে ওষুধ খরচটা বেড়েছে। কত ওষুধ খেতে হয়! বয়স হচ্ছে। ভুল ওষুধ খেয়ে সে কী শরীর খারাপ! তারপর থেকে শিবু টাইম মেনে সন্ধ‍্যামাসিকে ওষুধ দিয়ে যায়। শুধু কি তাই? কাপড় কাচা বাজার করা সব দায়িত্বই শিবুর। শিবুর মা থাকলেও তো করতে হতো! উনি সন্ধ‍্যামাসিকে মায়ের মতো ভেবে সমস্ত কাজই করে দেন। এমনকি কাজের ছুটি নিয়ে মাসিকে ডাক্তারখানা অব্দিও নিয়ে গেছেন। মাসিও সকালে শিবুকে ডেকে দেওয়া, ওর বিছানা গুছিয়ে দেওয়া ইত্যাদি করে দেন। সন্ধ‍্যামাসি কিংবা শিবু কেউই কখনো একাকিত্ব অনুভব করে না। শিবু যেন সন্ধ‍্যামাসির নিজের সন্তানের বাড়া। ওদিকে শিবুও মাসির মধ‍্যে যেন মাকে খুঁজে পান। ভালোই কাটছে সময়।

এদিকে সন্ধ্যামাসিও খুবই উৎসাহী হয়ে উঠছে। সামনেই দুর্গা পুজো। মেয়ে আসবে। এবার পুজোয় শিবু মাসির জন‍্য একটা শাড়ি কিনেছে। মাসিও মেয়ে নাতি জামাইয়ের পাশাপাশি শিবুকেও দিয়েছে।

দূর্গাপুজোর দিন শিবুই মাসির মেয়েকে স্টেশন থেকে নিয়ে এলেন। এই করে পুজো বেশ আনন্দে কাটল। একাদশীর দিন সন্ধ্যায় সন্ধ‍্যাদেবীর আবার শরীর খারাপ করল। শিবু ডাক্তার ডেকে আনল। ডাক্তার বললেন ওনার শরীরের কন্ডিশন ততটা ভালো না। চিন্তা ভাবনা যত কম করবেন ততই ওনার জন‍্য মঙ্গল। এদিকে সন্ধ‍্যামাসির মেয়ের তো খুব মন খারাপ। তাই উনি অনেক ভাবনা চিন্তা করে পরদিনই জমি বিক্রির জন‍্য পোস্টার ঝোলালেন কেননা মার কিছু হয়ে গেলে এই সম্পত্তির কী হবে। মা থাকতে থাকতেই সব ব‍্যবস্থা করে নেবেন। পথের মোড়ে পোস্টার দেখে শিবু উনার মেয়েকে অনেক কথা বললেন যেন বাড়িটা না বিক্রি করেন কিন্তু উনার মেয়ে শিবুর কথা না শুনেই জমির দামাদামি শুরু করে দেন মায়ের অজান্তেই। ওদিকে সন্ধ‍্যাদেবীর জামাই ও নাতি অধীর আগ্রহী হয়ে ওঠে বিদেশে ফেরত যাবার জন‍্য। এদিকে জমির দাম ঠিক হয়ে যায়। সন্ধ‍্যাদেবী এই ঘটনা শোনা মাত্রই দুঃখে একেবারে ভেঙে পড়েন। বাড়িটা ছিল উনার মেয়ের নামেই। আসলে বাবার  অনেক আদরের মেয়ে কিনা! মেয়েই তো সব, এই মেয়েই তো বাবা মার অহংকার, গর্ব! তাই মেয়ের হাতে মা ও বাড়ির দায়িত্ব তুলে দিয়ে বাবা বিদায় নেন। এদিকে মেয়ে মায়ের কথার কোনো মূল‍্য না দিয়েই বাড়ি বিক্রির দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেন। শিবুকেও নতুন ঘর দেখার জন‍্য বলে দেন।

এভাবে আরও এগিয়ে আসে সেই দিন। একদিন শিবু ছাদ থেকে নামার সময় কাকে যেন কথা বলতে শোনে ফোনে। কথাগুলো শুনে খুব অবাক হয়। জমি বিক্রি হয়। অসুস্থ মাকে নিয়ে চলে যাওয়ার দিন কনফার্ম। শিবুকে  উনাদের স্টেশন অব্দি দিয়ে আসবার জন‍্য বলেন সন্ধ‍্যাদেবীর মেয়ে। এদিকে সন্ধ‍্যাদেবী খাওয়া দাওয়া না করে দুঃখে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সন্ধ্যামাসির হাত ধরে পিঠে কিছু ব‍্যাগ নিয়ে ভিড় স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল শিবু। মাসির চোখ জলে টপটপ করছে। মাসির মেয়েরা আগে আগে যাচ্ছে। খুব ভিড়। স্টেশন। একসময় সন্ধ্যাদেবীর মেয়ে পিছন ঘুরে মাকে ডাকতে যান। কিন্তু একি? হঠাৎই ভিড়ে কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে শিবু ও তার মা!

আসলে সেদিন শিবু সন্ধ্যামাসির মেয়েকে কোনো এক ওল্ডেজ হোমের ম‍্যানেজারের সাথে কথা বলতে শুনেছিল। মেয়ের বিদেশের বাড়িতে ঘরের সংখ‍্যা খুব কম। মায়ের সেখানে জায়গা সংকুলান হবে না; তাই উনাকে নিয়ে মেয়ের ছিল এই অমানবিক ও স্বার্থপর পরিকল্পনা। কিন্তু মায়ের নিছক এক ভাড়াটিয়া ছেলে যে ঐ পরিকল্পনা এভাবে ভেস্তে দেবে, তা সে আঁচও করতে পারেনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ