ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

উড়ো ঝড় - সর্বাণী পাল


এই গল্পটি জুন ২০২১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। 

কৃষ্ণনগর মোটামুটি বেশ ব্যাস্ত শহর। সকাল হলেই যে যার কাজে চলে যায়,বাড়ি বাড়ি জিনিসপত্র বিক্রির ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে ব্যাবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি  চাকুরে সবাইকে এই ব্যাস্ত শহরের পরিমণ্ডলে দেখা যায়। সেই কৃষ্ণনগর থেকে অদূরে কোনো এক গ্রাম পাঁচমুড়াতলা। গ্রামের মানুষগুলো কেও কেও স্বচ্ছলপরিবারের, কেও কেও বা মধ্যবিত্ত আবার কেও দু-মুঠো অন্ন জোগাড় করতে হাড় ভাঙ্গা খাটনি করে। দেশে দেশে তখন মারাত্মক অসুখ লেগেছে, বাদ যাইনি এখানকার গ্রাম শহরও। শহর থেকে গ্রাম-গ্রামান্তরে মানুষের আনাগোনায় বাড়ছে ছোঁয়াচে অসুখ। যার দাপটে মারা যাচ্ছে বহু মানুষ। চারিদিকে স্বজন হারানো বেদনাহত মানুষের কান্না ইতিমধ্যে গ্রাস করছে দেশটাকে। সংক্রমণ ঠেকাতে একাধিকবার লকডাউন  ঘোষণা করছে সরকার। যার বলি হচ্ছে সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। যাদের ক্রমাগত যজ্ঞে আহুতি দেওয়া হচ্ছে করোনা নামক ক্ষুদ্র জীবাণু বধের উদ্দেশ্যে। এসবের মধ্যেও জীবন থেমে নেই ,যে যার নিজের কাজ করে চলেছি আমরা।

            রাত প্রায় আটটা; টিউশনি পড়িয়ে বাড়ি ফিরছি এমন সময় একজন পিছন থেকে ডেকে বলল,"দেবাশিষ আর দেবাশীষের বৌয়ের তাহলে করোনা হল?" একটু চুপ করে থেকে বললাম,"তা খবরটা আপনাকে কে দিলো?" তিনি এ কথার জবাব না দিয়ে বললেন,"কোথা থেকে যে এসব রোগ বাগ ঘরে নিয়ে আসে এরা, এবার সুস্থ গ্রামটাকে অসুস্থ করে ছাড়বে।"গুণধরবাবুর বেশ স্বচ্ছল পরিবার,কর্মসূত্রে তিনি সরকারি চাকুরে। আমি তার কথা শুনে একটুও অবাক হয়নি কারণ এ গ্রামের মানুষগুলো প্রায় এরকমই কারও ঘরে একটা ছোট্ট গ্লাস পড়ার আওয়াজও পাড়াময় করে তোলে। গুণধরবাবুও এর বিপরীত নয়, তাই চা এর দোকানের আড্ডা থেকে আমাকে দেখেই চট করে বেড়িয়ে এসেছে খবর শোনার জন্য। মন মেজাজটা সেদিন ভাল ছিল না; তাই শুধু বললাম, "আপনি যেটা শুনেছেন ভুল শুনেছেন।" তারপর কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তার আগেই তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, "রাত হয়ে গেছে কাকু, আজ বাড়ি চলে যাই কাল থেকে তো আবার লকডাউন একেবারে অনেকদিনের বাজার করে আপনিও বাড়ি চলে যান, নয়তো আগেরবার দেখলেন তো কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেবে।" কথা বাড়ালাম না আর জোড় পায়ে হেঁটে বাড়ি চলে আসলাম।

           রাতে খাবার খেয়ে বই পড়ার অভ্যাস মনটা ভাল নেই তাই শুয়ে পরবো ভাবছিলাম এমন সময় উফ্ আবার শুরু হল! থেকে থেকে ইট,বাটি, ঘটি ছোঁড়ার, কাচ ভাঙ্গার, আওয়াজ  ক্রমে বাড়তে লাগলো। অসহ্য মনে হল আমার, বিছানা থেকে উঠতে যাব বাইরে থেকে শম্পা কাকিমার গলা  শুনতে পেলাম।"বাইরে বেরিয়ে আয় বড় অঘটন ঘটে গেছে।"

"উফ্ মাথা ফেটে তো রক্ত পড়ছে! কীভাবে হল এসব? কাকিমা বলল, "সে সব  রাখ আগে চল ওনাকে শম্ভু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, উনি অন্তত ব্যাণ্ডেজটা করে দিক।"

"কিন্তু শম্ভু ডাক্তার কি দেখবে  ওনাকে!জানোয়তো কেমন ছুই ছুই করছে সবাই,

কিছু লোকজন তো এনার এখানে থাকাটাই পছন্দ করছেনা, রাত বিরেত এভাবে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় ওনাকে! পাড়ার অনেকে ক্ষিপ্ত কেও খাবার জলটুকুও দেয়না ওনাকে পাছে রোগ তাদের  স্পর্শ করে।" রক্ত দেখতে পারিনা ছোটো থেকেই, নিজেকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করলাম। বাড়িতে আপাতত আজ কেও নেই, কর্মসূত্রে বাবা কলকাতা,অতিমারির মধ্যেও! সরকারি-বেসরকারি চাকুরে নয়, তাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম চলে না পেট চালাতে গায়ে খেটে কাজ করতে হয় কারণ মধ্যবিত্ত। একটু ইতস্তত করে বললাম, আচ্ছা চলো যাওয়া যাক। জেঠিমা কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম শম্ভু ডাক্তারের কাছে।

         রাত অনেকটা হয়ে গেছে কাকিমাকে বললাম,"তুমি এবারে বাড়ি ফিরে যাও তোমার ছেলেটা ছোটো, বাকিটা আমি সামলে নেবো। ও হ্যাঁ, কিছু খেয়েছে জেঠিমা?" "এ অবস্থায় খাওয়া আসেরে?" কাকিমা বলল,"যাকগে আমি বাড়ি যাই,একটু দেখে রাখিস ওনাকে, আর দেখ কিছু খাওয়াতে পারিস নাকি আমার কথা তো শুনলো না।"  কাকীমা বাড়ি চলে গেল। আমি জেঠিমাকে বললাম, "ঘরে চলো জেঠিমা,আজ আর তোমার একা বাড়ি থাকতে হবেনা আমার বাড়িতে থাকো আজ।" উনি খুব রুক্ষভাবে বললেন, "সরে যা। আমার কেও নেই- আমার কেও না।" কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না, আসলে উনি এরকম মানুষ না!যদিও আমি পাড়ার মেয়ে, একটা সময় কখনো লাউ এর ডাটা কখনও বা জিওল মাছের ঝোল দিয়ে ভাত মেখে পরম স্নেহে আমায় খায়িয়ে দিয়েছেন। মধ্যবিত্ত হলেও বেশ সুখী পরিবারের ছিল ওনার। একটি মাত্র ছেলে ওনার, তবে এরকম পরিস্থিতিতে অতিমারির কারনে লকডাউন লেগে থাকায় গত কয়েকমাস ওনাদের কোন কাজ ছিল না। প্রায় রাতের বেলা দেখতাম বারান্দায় কার্নিশের কাছে মানিক দাদা পায়চারি করত, হয়তো নিজের ট্রেস কমানোর জন্য।জেঠিমা বলতো চিন্তা করিসনা বাবা, সব ঠিক হয়ে যাবে রেশনের চাল দিয়ে চলছে তো কটাদিন পর লকডাউন উঠলে ঠিক কাজ পেয়ে যাবি। তোর বাবারও শরীর ভালোনা তোকে চিন্তা করতে দেখলে উনি সহ্য করতে পারে না রে।

        টাকা পয়সার অভাবে মানিকদা বেশিদূর পড়তে পারেনি তবে যেটুকু পড়েছে সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করত। তাকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেও দেখেছি, এরই মাঝে এতবড়ো অঘটন ঘটে গেল অতিরিক্ত চিন্তা তাকে মৃত্যুর দিক ঠেলে দিলো। আট দিন আগে মাঝরাতে হঠাৎ হার্ট ফেইল করে চির ঘুমের দেশে পাড়ি দেয় মানিক দাদা।

            এসব ভাবতে ভাবতে মোটামুটি ভোর সাড়ে তিনটে বেজে যায়। গরম কাল তাই আর শুয়ে থাকতে মন চাইল না, জেঠিমাকে দেখলাম দেওয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। সকালের দিকে ফোনটা বেজে উঠল,ধরেই হতবাক হয়ে গেলাম। হাসপাতাল থেকে ফোন, জ্যাঠামশায় আর নেই! কি করবো -জেঠিমাকে কীভাবে খবরটা দেবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শুধু মনে হছিল জেঠিমার তিন কূলে আর কেও রইল না।ভাবতে ভাবতে ঘরে এসে দেখলাম জেঠিমা ঘরে নেই হয়তো আমায় ফোনে কথা বলতে শুনে নিয়েছিল।অনেক খোঁজাখুজির পর যখন জেঠিমা কে পাওয়া গেলোনা তখন একরকম বাধ্য হয়ে পাড়ার দু চারজন মাথা কে বললাম।কোন লাভ তো হল না বরং উল্টে শুনতে হল দেখোগে  ছেলে আর স্বামীর শোকে মহিলাও পটল তুলল কিনা। আবার চায়ের দোকানে জ্ঞানী বিজ্ঞ লোকগুলো বলল এসব আরকি 'ভগবানের মার', অর্ধেক লোক থাকবেনা দেশে। আবার তাদের মধ্যে কেও কেও বলল আসলে চারিদিকে এতো পাপ অনাচার মানুষের আর ধর্মে  সইছে না। দেখতে পারছনা রোজই শুনি কোথাও চুরি,কোথাও ডাকাতি,কোথাও খুন, কোথাও ধর্ষণ হয়েই চলেছে।পাপ পাপ সব পাপ তাই সকলকে অনাচারের ধীরে ধীরে শাস্তি দিচ্ছেন ভগবান।    আমি চলে এলাম সেখান থেকে।

              মনে মনে শুধু বললাম পাপ মেনে নিলাম, কিন্তু এই অপকর্মগুলো করছে কারা? জ্ঞান তো ভালো দিয়ে গেল এরা,এই জ্ঞানী লোকগুলোর কথা ধরা যাক। এরা  বেশ বড় স্বচ্ছল ঘরের দালানকোঠা তৈরি করতে বড়ো বড়ো গাছ নিমেষেই কেটে ফেলল এমনকী  মাঝে মাঝেই শুনি বাড়ি ঝামেলা হচ্ছে, না কি নিয়ে পাশের বাড়ির এক মহিলার সাথে এক ঘরে ধরা পড়েছে। যদি নিজস্ব মতামত দিই তবে বলতে হয়, বেশ রাজার হালে এদের দিন কেটে যাচ্ছে, ভাতেও মরতে হচ্ছে না আবার শরীরেও তাজা। আবার এরাই যখন বেগার খাটা মানুষদের নিজেদের বাড়িতে কাজে ডাকে তখন একটু অসাবধান হলেই ওই গরীব মানুষগুলোকে ঠকিয়ে তাঁদের রোজগারে থাবা বসাতেও এদের বিবেকে বাঁধেনা। তবে সবাই যে এরকম প্রকৃতির তা নয়,আমাদের দেশে কতিপয় এরকম লোকের কারণে সকলকে এসব মন্তব্যের স্বীকার হতে হয়। দর্শন শাস্ত্রে যেমন আছে 'সব কাক ই কালো', এটা অনেকটা সেরকম। তবে আমার মনে হয় মাঝে মাঝে, ভগবানের আদালতে কি শুধু নিরপরাধী কে শাস্তি দিয়ে অপরাধী গুলো কে সুযোগ দেওয়া হয়? যদিও শুনেছি 'মরণেই নাকি মুক্তি' তা বলে সময়ের আগেই? একটা সংসার ভাসিয়ে দিয়ে? এইতো মাস ছয়েক আগের ঘটনা মেদিনীপুরের কোনো এক গ্রামে এক তরুণীকে গোটাচারেক লোক মিলে গণধর্ষণ করলো তাও আবার এক মহিলার সাহায্যে তখন এই ভগবানের মার কোথায় ছিল? পুরুষগুলো সেদিন নরম ফুল দেখে নরপিশাচ হয়েছিলো, কিন্তু ওই মহিলা তার কি হয়েছিলো ওর নিজের মেয়ের মুখ মনে পড়েনি তখন? তবে 'ভগবানের মার' কি জিনিস হল? পাপ যারা করল শাস্তি তো তাদের হওয়া উচিত তাইনা কেন কোনো নিরীহ গোবেচারা শাস্তি পায় তবে যদিও আমার ব্যাক্তিগত মতামত এসব।

 মাস তিনেক কেটে গেল জেঠিমার কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না, আমিও আশা প্রায় ছেড়ে দিলাম। হাসপাতাল থেকে দুটি দেহ সৎকারের জন্য পঁচিশ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিলো, জেঠিমার তখন শোচনীয় অবস্থা কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেটা বোঝেনি।লাশগুলো তাই অমানবিকভাবে গঙ্গায় ফেলে দেওয়া  হয়েছিলো চোখের সামনে একটা পরিবার কে শেষ হয়ে যেতে দেখলাম। ওদের শূন্য ঘরের দিক তাকানো যায়না আর। মনে হয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওটা একটা কালো অন্ধকার ভরা ইতিহাস হয়ে গেছে। সূর্য চন্দ্র সব একই থাকল,মানুষ মানুষের কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেল কিন্তু এই ভেঙে যাওয়া পরিবারটা যেন অতলে তলিয়ে গেল।

 এই ঘটনার অনেকদিন কেটে গেছে অতিমারির কবল থেকে আজ প্রায় সবাই মুক্ত। গ্রাম,শহর হয়েছে আবার আগের মতো, আগের মতোই সবকিছু স্বাভাবিক। রাস্তাঘাটে ভিড়; রেস্তরাঁ, সিনেমাহল, স্কুল, কলেজ, অফিস-কাছারি সবাই ব্যাস্ত।এরকম একদিন ইউনিভার্সিটি যাবো তাই ট্রেন ধরবো বলে কৃষ্ণনগর স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি।এমন সময় দেখলাম একটা এলোমেলো চুল, রুক্ষ মুখ,বয়সের বলিরেখার চেয়ে ক্ষুধা ও অনিদ্রা চিন্তার ছাপ স্পষ্ট তার শরীর আর মুখে, এমন এক মহিলা আমার সামনে ঘুরাঘুরি করছে। দেখে চেনার উপায় নেই। "কে?" জিজ্ঞেস করলাম। কারণ মহিলাটি আমায় অনেক্ষন ধরে ঘুরে ঘুরে দেখছিল। কোনো উত্তর না দিয়ে সে যেন কি বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, দেখে মনে হল যেন মানসিক ভারসাম্যহীন। সে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, "আমি মা!সন্তানহীনা একটা মা! আমি বিধবা, পাগল আমি, না না, নি:সন্তান ছিলাম না! জানিস আমার স্বামী ছিল, সন্তান ছিল, একটা সুখী পরিবার ছিল! কিন্তু তা যে 'তাসের ঘর' তোদের জ্যান্ত দেবতা আমার সব কেড়ে নিংড়ে খেলো। তোরা যে দেবতার ফুল বেলপাতা দিয়ে পুজো দিস ওই দেবতাই বেলের কাঁটা হয়ে গেছে! আর এখন আমার শরীরের নরম মাংস ভেদ করে আমার রক্ত ছিনিয়ে নিলো,সেখানে এখন দগদগে ঘা।"

         এক মুহুর্তের জন্য আমার পাড়ার মানিক দাদার মায়ের কথা মনে হল। সে সময় এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ছিল তখন কারও কারও সামান্ন জ্বর কেও লোকে করোনা বলে চালাচ্ছিল।ছোটো থেকেই শুনি কিছু ক্ষেত্রে মনের জোড় শরীরের জোড় কে ধরে রাখে কিন্তু সেই জোড় যেন মনের ভিতরে 'পাথর ফাটা' কান্না চেপে রাখার কারণ না হয়। "তোর কী করোনা হয়েছে? অনেক লোক কিন্তু করোনা তে মারা যাচ্ছে, আমাদের থেকে একটু দূরে দূরেই থাকিস।" পাড়ার দু-চারটা লোকের এসব কথাগুলো ভিতরে ভিতরে মানিক দা কে বিষাক্ত সাপের মতো বিষ দাঁত বসাচ্ছিল। "একেই কাজ ছিল না লকডাউনে, তার ওপর এই রোগ যদি সত্যি থাবা বসিয়ে থাকে আমার ওপর তাহলে আমি যদি আমি মারা যায় বাবা মার কি হবে? কে দেখবে ওদের?" ভাবতে ভাবতেই সেদিন মানিকদা তার বাবার কোলে ঢোলে পড়েছিল সেদিন জ্যাঠামশায় তার সারাজীবনের ক্ষুদ্র সঞ্চয় বার করে দিয়েছিল। না, চিকিৎসার জন্য নয়।একমাত্র ছেলের শ্রাদ্ধের জন্য।তাঁকে ছেলের জন্য এক ফোঁটা চোখের জল ফেলতে কেও দেখেনি,সেদিন তাঁর মনের ভিতর হয়ে যাওয়া জলচ্ছাসে পাড় ভাঙার শব্দ কেও শোনেনি, কারণ এই লোকটি হয়তো জানত মানিক হারিয়ে যায়নি, মানিক আসবে এগার দিনের মাথায়, আসবে তাঁকে নিতে।

 

এরই মধ্যে ট্রেন চলে এসেছে এবার যেতে হবে।ট্রেনে উঠে  ওই দিশেহারা মহিলাটিকে আর স্টেশনচত্বরে দেখতে পেলাম না। মিনিট দশেক পর ট্রেন ছেড়ে দিলো। তবে আমার আজ ভগবানকে কিছু বলতে ইচ্ছে করল একটা দীর্ঘ নি:শ্বাস ফেলে মনে মনে বললাম,"একমুখী ঈশ্বর! ভয় হয় কোনোদিন এই নিরীহ মড়া মানুষগুলো উঠে দাঁড়িয়ে বলবে না তো শাস্তি কি শুধু নির্দোষদের দিয়ে দোষীদের সুযোগ দিতে চান ঈশ্বর? ধর্ষিতা শাস্তি পায় তার শরীর দিয়ে কারণ সে ধর্ষিত হয়। ধর্ষকের কাছে থেকে কোনোরকম প্রাণে বাঁচলেও, সমাজ তাকে রেহাই দেয় না আবার গরীব শাস্তি পায় লকডাউনে কাজ হারিয়ে চিন্তায় যে পরিবার পরিজনদের কি খাওয়াবে,তাদের হাহাকার 'ভাত চায় ভাত',একটু স্বস্তি চায়! একটা রোগ যখন বুঝিয়ে দেয় সামাজিক দুরত্ব সহ প্রয়োজনে মানুষ মানুষকে  কেটে খেতেও পারে তখন 'পাথুরে ঈশ্বর' তা চোখ বন্ধ করে দেখে।।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ