কালজয়ী চলচ্চিত্র দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন - রাজদীপ বিশ্বাস

 

এই লেখাটি এপ্রিল ২০২১ সংখ্যার প্রকাশিত হয়েছে। 

পটভূমি আলোচনা ও ব্যাখ্যা: "দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন"১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ড্রামা, ক্রাইম জেনারের আমেরিকান ফিল্ম। কাহিনীতে বন্ধুত্বের মূল্য, সোশ্যাল ইস্যু হিসেবে আত্মহত্যা, ষড়যন্ত্র, জীবন উপলব্ধি, আত্মমুক্তি প্রভৃতি বিশেষ কিছু সাবপল্ট দেখা যায়; আর রয়েছে কর্ম, যার উপস্থিতি সর্বত্র। মুভিটির প্রধান থিমগুলি হলো- ১.আত্মোপলব্ধি ও জীবন শিক্ষা, ২ ড্রামা, ক্রাইম।

   কাহিনী শুরু হয় একটি কোর্টের দৃশ্য দিয়ে, যেখানে কাহিনীর প্রধান চরিত্র অ্যান্ডি একটি হত্যার অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হন যদিও তার মতে সে নির্দোষ এবং ঘটনাক্রমে তাকে যাবৎজীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়। এরপরেই শুরু হয় গল্পের নতুন মোড় এবং চলতে থাকে একটা আলাদা বাস্তবিক কাহিনী যেখানে আমরা জেল জীবনের কঠিন বাস্তবতার পরিচয় পায়। কারাগারজীবনে একজন কয়েদির কেমন পরিস্থিতি হয় সেটা অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গিতে লক্ষ্য করা যায়। শুরুর দিকে মনে হতে পারে যে স্ক্রিনপ্লে একটু স্লো চলছে কিন্তু কাহিনী যত এগোতে থাকে, দর্শকরা কাহিনী এবং ফিল্মের দৃশ্যগুলোর মধ্যে যেনো হারিয়ে যেতে থাকে। কাহিনীটা এতটা শৈল্পিক বুদ্ধিমত্তার সাথে তৈরি করা হয়েছে যা দর্শকদের মনকে দারুনভাবে গল্পের সাথে বেঁধে রাখে। এখানে  আমরা দেখতে পাই বন্ধুত্ব, একজন আদর্শ মানুষের দয়ালুতা, ভদ্রতা, লোকেদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মান প্রদান, নিঃস্বার্থে অন্যদের সাহায্য করা ও তার মধ্যেই নিজের খুশি খুঁজে নেওয়া এইরকম বেশ কিছু শিক্ষণীয় ব্যাপার। এরপরে একটা পর্যায়ে একটি আত্মহত্যার ঘটনা দেখা যায় এবং আমার খুব সহহজেই সেটা অনুভব করতে পারি যে পরিবেশ, পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে সামাজিক চাপে মানুষের মানসিকতায় তা তীব্র প্রভাব সৃষ্টি করে, এমনকি মানসিকতার পরিবর্তনও ঘটায়; যার ফলে মানুষের মনে ঋণাত্মক চিন্তাধারার সৃষ্টি হয় এবং এর দরুন মানুষ কিছু ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করে ফেলে। এই ঘটনাটি  আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের বিরাট বড়ো শিক্ষা প্রদান করে। অবশেষে ফিল্মের এন্ডিং-এ আমরা যে সমস্ত ঘটনা দেখত পাই ত দেখে সত্যিই ভাষায় বোঝানো যাবে না। আমরা এন্ডিং দেখে জীবন উপলদ্ধি করার কথা শিখতে পারি, মানবজীবনে ধৈর্য্যশীলতার গুরুত্ব বুঝতে পারি, বন্ধুত্বের মূল্য যে অপরিসীম সেটা বুঝতে পারি, তাছাড়া কর্মের পরিণতি তো রয়েছেই সমস্ত জায়গায়, সমস্ত ক্ষেত্রে। 

মাস্টারপিস এলিমেন্টস: চলচ্চিত্রটি একটি কালজয়ী সৃষ্টি। কিন্তু বিশেষভাবে পর্যালোচনা করলে  একটি দৃশ্য চোখে পড়বে যেখানে অ্যান্ডি, জেলখানার পুলিশ-প্রধানের ঘরে ঢুকে ঘরের দরজা বন্ধ করে পুরনো দিনের মিউজিক প্লেয়ারে একটি ইংলিশ গান চালিয়েছে এবং সেই গানটি প্রচার বাক্সে্র মাধ্যমে জেলের অন্য কয়েদিদেরও শোনাচ্ছে  যেটি অবশ্যই একটি মন ভালো করে দেওয়া দৃশ্য। এই দৃশ্যের তাৎপর্য হলো যদি তোমার কাছে সীমিত পরিমাণ সুখ অথবা আনন্দ থাকে তবে সেটাকেও সবার সাথে ভাগ করে নাও। এখানে পরিচালক অসাধারণ একটি বার্তা প্রেরণ করছেন। এরপর, চিত্রনাট্যটিতে যেহেতু তার কাহিনীর সাথে জুড়ে থাকতে বাধ্য করে, সেহেতু  এটির ক্লাইম্যাক্সে প্রধান চরিত্র, 'অ্যান্ডি'-এর বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার মুহুর্তটি এতটাই মন ছুঁয়ে যায় যে আমাদেরও মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ওই সময়টাতে খুব সন্তুষ্ট, পরিতৃপ্তি অনুভূত হয়; সেক্ষেত্রে এটিকে শতাব্দীর "মোস্ট স্যাটিসফাইড মুভি" বলা যেতেই পারে। এর থেকেই পরিচালক ফ্রাঙ্ক দারাবন্ট-র আবেগ, অসামান্য প্রতিভা, অক্লান্ত পরিশ্রমের পরিচয় সহজেই পাওয়া যায়। মুভিটি এক কথায় অবিশ্বাসনীয়, চমৎকার। 

 

পজিটিভ ও নেগেটিভ দিক: এটির প্রায় সমস্ত কিছুই পজিটিভ, সব কিছুই খুব সুন্দরভাবে সময় নিয়ে এবং পরিশ্রমের সাথে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু নেগেটিভ দিক বলতে প্রথমদিকে স্ক্রিনপ্লে একটু স্লো মনে হতে পারে অনেকের। তাছাড়া  ডিরেকশন, অ্যাক্টিং, কস্টিউম ডিজাইন, রাইটিং এই সব কিছুতেই দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন অনবদ্ধ। অ্যাক্টিয়ের ক্ষেত্রে প্রধান চরিত্রে অ্যাক্টর টিম রবিনস্ এবং দ্বিতীয় প্রধান চরিত্রে অ্যাক্টর মরগান ফ্রিম্যান অবিশ্বাস্য অভিনয় করেছেন। তাদের অভিনয় এতটাই প্রভাবশালী যে দর্শকদের সেটা খুব বাস্তবিক মনে হয়, মন ছুঁয়ে যায়; এছাড়া অন্যান্য সাইড রোলের চরিত্র,  নেগেটিভ রোলের চরিত্রগুলোর ক্ষেত্রেও অ্যাক্টররা খুব ভালো কাজ করেছেন। 

 

সিদ্ধান্ত: চলচ্চিত্রটি সত্যিই অসাধারণ, একটা মাস্টারপিস ক্রিয়েশন। শুরুর দিকে একটু ধৈর্য্য নিয়ে দেখলে আস্তে আস্তে এটি ভালো লাগতে শুরু হবে এবং কখন যে দেখতে দেখতে কাহিনীর মধ্যে ঢুকে পড়বেন, তা বোঝাও যাবে না, এতটাই সুন্দর একটি চিত্রনাট্য। 

 

   আমার কাছে মুভিটির রেটিং - ৪.৮ / ৫