
সেটা ছিল এক সাময়িক তীব্র আবেগের আধিপত্য।
অন্য সব ভুলে গিয়ে ঘুঘু পাখীটার মা হওয়া ঘিরে
ক’দিন কি পাগলামোটাই না করেছি আমি!
সোশ্যাল মিডিয়ায় রোজ ধারাবাহিক আপডেট শুদ্ধু!
হঠাৎই একদিন বারান্দায় বটের ঝুরির মতো বেড়ে উঠা
পুরনো এলোভেরার প্রায় উপেক্ষিত টবটায়
অধিকার কায়েম করা হবু মা-পাখীটার আগমন;
যার প্রতিটি সঞ্চালনে আমি নজর রেখেছিলাম
দিনেরাতে যখন তখন, প্রায় চব্বিশটা ঘন্টা।
ডিম পাড়া থেকে শুরু করে দুটো ছানার বেরিয়ে আসা,
মায়ের শরীরের উষ্ণতায় তাদের নিশ্চিন্তে বেড়ে উঠা-
যত্নমাখা অনুসন্ধিৎসু চোখে কি না দেখেছি আমি?
তারপর সন্তানদেরকে স্বাবলম্বনের অনবদ্য শিক্ষাদান-
ঠোঁটে ঠোঁটে চুম্বনে মাতৃস্নেহের সাথেই কি মেশানো ছিল
ডানা মেলে উড়বার একান্ত গোপন চাবিকাঠি?
জিম বা ময়দানের মতো কোন হাতেকলমের ট্রেনিং’-
কই, তা তো আমার নজরে আসেনি কখনো?
হঠাৎই ছানাদুটো কি সুন্দর উড়তেও শিখে গেল!
হ্যাঁ, দু’দিনের ব্যবধানে যদিও-
হয়তো বা জীবনীশক্তির সামান্য তারতম্যে!
না, নিষ্ঠুর বাস্তবতায় ফিরে সম্ভাব্য আবেগ প্রশমন-
সে সুযোগটা ওরা আমাকে দেয়নি;
বারান্দা জুড়ে ছড়ানো-ছিটানো কুচি কুচি খড়কুটো,
বিষ্ঠা আর পাখনার আরো বেশী ছড়ানোর আশঙ্কায়
ওদের তাড়ানোর ভাবনাটা মাথায় এলো কি না এলো,
তার আগেই আমার ক্ষণজন্মা আবেগকে বিদ্রূপ করে
ওরা নিজেরাই কখন নিঃশব্দে কোথায় চলে গেল!
একেই কি বলে আত্মমর্যাদা?
ইদানীং মানুষের মধ্যে যা প্রচণ্ডভাবে কমে গেছে?
তারপর আবেগমুক্ত কবি সস্ত্রীক গবেষণায় বসে।
আবিষ্কার হয় ‘আপদ’ থেকে স্থায়ীভাবে বাঁচার পথ।
স্থির হয়- দ্বিতীয়বার ওদের এহেন আক্রমণ ঠেকাতে
পরিত্যক্ত আলুর বস্তার জালে ঢেকে দাও ঐসব টব-
স্তব্ধ হবে বৃদ্ধ এলোভেরার আশ্রয়দানের ঔদ্ধত্যও!
তারও পরে চলে গেছে আরো কিছু দিন-
মনুষ্যবুদ্ধির কাছে হার মানা ছাপোষা পাখীর আকুলতা
এখনো বারান্দায় মাঝে মাঝে বিক্ষোভের রূপ নেয়-
গ্রিলের রেলিংয়ে ঝাপটা হয়ে প্রতিবাদ জানায়।
আর আমি যেন মাঝে মাঝেই ঐ পাখীদের ফাঁকে
সেদিন এই এলোভেরার নিরালায় জন্ম নেয়া,
এখন বড় হয়ে যাওয়া, ঐ দু’টো ছানাকেও দেখতে পাই-
যারা জন্মভিটের টানে জালটা ছিঁড়ে তাকে ছুঁতে চায়-
কিন্তু ব্যর্থ হয়ে, তাড়া খেয়ে, বারবার বাধ্য হয়
ঐ বাধাহীন আকাশেই উড়ে ফিরে যেতে- হয়তো বা
দেশবাড়ীর ভিটেছাড়া আমাদেরই পূর্বজদের মতো!
0 মন্তব্যসমূহ