ad

মাসিক ই-পত্রিকা ‘উৎস’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে(বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন)।
অনুগ্রহ করে পত্রিকার ইমেলে আর লেখা/ছবি পাঠাবেন না।

চিরসখা -অন্বেষা সিনহা


 

    ঠক্ ঠক্ ঠক্!

    ঠিক তিনটি আঘাত রুদ্ধ কবাটবক্ষে। শয়ন কক্ষের নিভু নিভু আলোকে দেখা গেল শব্দ শোনা মাত্র শয্যায় উঠে বসে পার্শ্বে নিদ্রায় অচেতন প্রিয়তমাকে এক পলক দেখে দ্রুতপদে দ্বার উন্মুক্ত করলেন দীর্ঘকায়,বলিষ্ঠ চেহারার পুরুষটি। তাঁর অনুমান সঠিক। এমন নিশুতি রাতে হস্তিনাপুর থেকে গুপ্তচর এসেছে বিশেষ সংবাদ নিয়ে। শ্রবণ করতে করতে কুঞ্চিত হয়ে উঠল কপালের রেখাগুলি। গুপ্তচরকে বিদায় দিয়ে  চিন্তা করলেন ঘুমন্ত অর্ধাঙ্গিনীর প্রতি কিয়ৎক্ষণ অবলোকন করে। নাহ্ ! আর বিলম্ব করা অনুচিত। দিবাকরের উদয়ের পূর্বেই সকল আয়োজন সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে। নচেৎ অনর্থ হতে বিলম্ব হবে না। দ্বাররক্ষীকে আদেশ করলেন দারুককে যত শীঘ্র সম্ভব প্রস্তুত হওয়ার জন্য।


 ×                        ×                      ×


    মধ্যাহ্নের আহার সবে সমাপ্ত হয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। পান্ডব ভ্রাতাদের পর নিজের আহার সম্পূর্ণ করে সবে অন্ন-ব্যঞ্জনপাত্রগুলি একস্থানে একত্র করছিলেন পাঞ্চালী। এমন সময় কোলাহল শুনে কুটিরের বাইরে এলেন।

  একি! এ যে কোপনস্বভাব, তেজস্বী মহাঋষি দুর্বাসা! একা নন তিনি; সশিষ্য!  

     জ্যেষ্ঠ পান্ডব অগ্রসর হয়ে যথাযথ সন্মানের সঙ্গে  অনুরোধ করলেন উপবেশনের জন্য। 

     -- "না! ধর্মপুত্র! পূর্বে নদীতে স্নান সমাপ্ত করে আসি। তারপর আমি সশিষ্য আহার করব। তোমরা ইত্যবসরে আমাদের আহারের আয়োজন প্রস্তুত করো।"

      বিনা মেঘে বজ্রপাত হলেও এত চমকাতেন না বোধকরি পঞ্চ পান্ডব ও পাঞ্চালী। সমস্ত আহার নিঃশেষ। এত অল্প সময়ে এত সংখ্যক মানুষের জন্য বিপুল আহার সামগ্রী আয়োজন করে রন্ধন সম্পূর্ণ করা যে অসম্ভব! কিন্তু এ কথা যে বলাও অসম্ভব। কে না জানে, ঋষি দুর্বাসার ক্রোধ? মুহূর্তে অভিশম্পাত দিয়ে ভস্ম করে দিতে এতটুকুও দ্বিধা করবেন না হয়তো। 

      মৃদু হাস্যরেখা ফুটে উঠল মুনির মুখে। হস্তিনাপুরের যুবরাজ দুর্যোধনের কাছ থেকে বেশ কিছুকাল সেবা গ্রহণ করেছেন তিনি। প্রভূত চেষ্টা করেও আপ্যায়নের কোন ত্রুটি বের করতে পারেননি তিনি। বিদায় বেলায় বর দিতে যখন তিনি বাধ্য, তখন দুর্যোধন এক অপ্রত্যাশিত আবেদন রাখলেন তাঁর কাছে। 

      -- "হে মুনিবর! আমার জ্ঞাতি ভ্রাতা পঞ্চ পান্ডব আজ বনবাসী। আমার অনুরোধ,আপনি সেই স্থলে উপস্থিত হয়ে তাঁদেরকে আপনাকে সেবা করার সুযোগ করে দিয়ে ধন্য করুন। তাঁদের আপনার আশীর্বচনের বড়ই দরকার। তাঁদের জন্য আমার চিত্ত সর্বদাই ব্যাকুল।"

       বিস্মিত হয়েছিলেন বৈকি প্রথমে ত্রিকালজ্ঞ ঋষিও। তবে যে তিনি শুনেছিলেন পান্ডব ভ্রাতাদের এই দুর্বিপাকের জন্য দায়ী যুবরাজ দুর্যোধনই! তবে কি এ মিথ্যা লোকাপবাদ! মুহূর্তেই ভ্রান্তি দূর হলো।

      -- "শুধু একটাই অনুরোধ। আপনি পান্ডব জায়া পাঞ্চালীর মধ্যাহ্নের ভোজন কালের পরই তথায় উপস্থিত হবেন।" হাস্যরেখায় ভরে ওঠে যুবরাজের মুখটি।

        অপরকে লাঞ্ছিত করে অভিশাপ প্রয়োগে কি যেন এক অপার্থিব সুখ অনুভব করেন ঋষি দুর্বাসা। হস্তিনাপুর-যুবরাজের অভিপ্রায় বুঝে তিনিও সম্মত হয়েছিলেন পান্ডব কুটীরে পদার্পণ করতে।

       -- "গতকালের একাদশীর উপবাস আজ ভঙ্গ করব তোমাদের নিকট পারণ করে; স্নান সম্পূর্ণ করে আসি জ্যেষ্ঠ পান্ডব!"


 ×                        ×                      ×


    স্নানাদি শেষ করে নদীতীরে উঠে বস্ত্র পরিবর্তন করতে করতে শুনতে পেলেন রথচক্রের শব্দ। এক্ষণে এই স্থানে! দুর্বাসা মুনি সচকিত হয়ে দেখলেন তাঁর সামনে রথ থেকে পীত উত্তরীয় ও পীত বস্ত্রধারী যিনি নেমে আসছেন, তিনি সমগ্র আর্যাবর্তের অত্যন্ত পরিচিত, এমনকি তাঁর রথের ধ্বজা ও সারথীকে চেনে না - এমনটাও বোধকরি কেউ নেই।

    -- "প্রণাম মহর্ষি! আপনি এই স্থলে,এই ক্ষণে?"

    বিস্ময় যেন ঝরে পড়ল আগন্তুকের চোখে-মুখে। 

    -- "হ্যাঁ, আমি। কিন্তু তুমি ... মানে ... আপনিও.... এই সময়?"

    আকস্মিক এই আগন্তুকের আগমন অপ্রস্তুত করে তোলে ঋষিকে।

     -- "আমি দ্বৈতবনে মাঝে মাঝেই আসি পান্ডবভ্রাতাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য।"

     কৌতুকের ছোঁয়া কি বাসুদেবের কন্ঠে? তাই যেন মনে হল দুর্বাসা মুনির।

     -- "গতকালের একাদশীর উপবাস আজ ভঙ্গ করব পান্ডবভ্রাতাদের নিকট পারণ করে। এই আমার অভিলাষ।" 

     এই ব্যক্তির উপস্থিতি কেন জানি এই মুহূর্তে এক অব্যক্ত অস্বস্তির কারণ।

     -- "ও! তবে তো পূর্ব থেকেই জ্ঞাত ছিলেন ওনারা আপনার এই অভিপ্রায় সম্পর্কে?"

     -- "না না! আমি তো প্রত্যুষে মনস্থির করলাম। আমাদের অভীপ্সা পান্ডব কুটিরে জানিয়েই নদীতে এসেছি।"

      -- "সে কি! তবে এত জনের এত আয়োজন এই  অল্প সময়ে কি করে সম্ভব করবেন ওঁনারা?"

      বাসুদেব আগের থেকে এখন অনেকটাই যেন গম্ভীর। অধরে যদিও হাসিটি এখনো মোছেনি।

      -- "আমি তার কি জানি বাসুদেব। অতিথি সেবা, ঋষির সম্মান কিভাবে করবেন তা তো আমার জানার কথা নয়।" 

      কিছুক্ষণ কি যেন চিন্তা করলেন সম্মুখস্থ ব্যক্তিটি। তারপর ইঙ্গিত করলেন সারথী দারুককে। কি যেন নির্দেশ দিতে রথ নিয়ে দারুক কোন এক অনির্দিষ্ট স্থানের উদ্দেশ্যে প্রস্থান করল।

      চক্ষু কুঞ্চিত করে দুর্বাসা মুনি সুদূর এক অতীতে বিচরণ করছিলেন। এই বাসুদেবেরই পিতৃস্বসা পৃথার সেবাপরায়ণতায় মুগ্ধ হয়ে আশীর্বাদ করে এক গুপ্ত মন্ত্র দান করেছিলেন  তিনি  একসময়।

      -- "পার্শ্ববর্তী এক জনবসতির অধিবাসীরা আমার পূর্ব পরিচিত। আমি আমার সারথীকে বলে আপনাদের আহারের দ্রুত আয়োজন সেখানে করছি। উপবাসে ক্লান্ত আপনারা। কালক্ষেপ করা উচিৎ নয়।"  

      সম্বিত ফিরল যেন দুর্বাসার। বাসুদেবকে মায়াবী মনে করেন অনেকেই। অন্তরের অন্তরতম সংবাদও যেন তাঁর কাছে অজ্ঞাত থাকেনা। কি অভিপ্রায় নিয়ে তিনি সশিষ্য এই স্থানে এসেছেন, বাসুদেব কি জ্ঞাত আছেন সেই বিষয়ে?   

       মনে মনে  হাসলেন বাসুদেবও, তাঁর সকল প্রস্তুতি যে সম্পূর্ণ। গুপ্তচরের মুখ থেকে দুর্যোধনের মনোবাসনা শ্রবণ করা মাত্র কালক্ষেপ করেননি বিন্দুমাত্র।দ্বারাবতীর রাজপুরীতে একটি কাকপক্ষী ডেকে ওঠার আগেই তিনি দ্বৈতবনের উদ্দেশ্যে প্রস্থান করেছেন। দেবী রুক্মিনীকেও জানিয়ে আসতে পারেননি তাঁর এই আচম্বিত অভিযানের কথা। 

      -- "কিন্তু আমি যে তাদের কথা দিয়েছি... তাঁরা  প্রস্তুত হয়ে আছেন.." (ক্রমশঃ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন ঋষি!)

      -- "আমি তাঁদের বুঝিয়ে বলব। আপনি আর অমত করবেন না।" (করজোড়ে স্মিত হাস্যে বললেও এ যেন আদেশের ভঙ্গিমা!)

      তীব্র ক্রোধাগ্নির তাপে যেন দগ্ধ হচ্ছেন দুর্বাসা। 

       -- "কিন্তু তাঁদের আগামী ভবিষ্যৎ যেন সুন্দর, সুগম হয়, আমি তার আশীর্বাদ দেব বলে মনস্থির করে এসেছিলাম বাসুদেব! এই ভাবে চলে গেলে তাদের সাথে অন্যায় করা হবে..." 

      -- "আমি আর পান্ডবরা- অভিন্ন মুনিবর! তাই আমায় আপনাদের সেবার সুযোগ করে আপনি আশীর্বাদ করুন ভাগ্যাহত পান্ডবদের। তাদের ধর্মের পথে চলার পথ যেন সহজ হয় আপনার আশীর্বাদে।"

       ক্রোধে আরক্ত হল ঋষির মুখটি। তাঁর অভিপ্রায় বুঝি ধরা পড়ে গেছে এই চতুর শিরোমণির কাছে!

       -- "কিন্তু...!" শেষ চেষ্টা করতে গেলেন ঋষি।

       -- "কিন্তু আপনাদের সেবা-যত্নে কোনরূপ ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে, পান্ডবভ্রাতাদের বা ওই জনবসতির অধিবাসীদের মার্জনা করবেন, হে ক্ষমাসুন্দর! ইচ্ছাকৃত হোক অথবা অনিচ্ছাকৃত, দন্ডযোগ্য অপরাধের উত্তরদায়িত্ব সকলও আমার। আপনার বিচার সেক্ষেত্রে আমার শিরোধার্য!"

         স্তম্ভিত হলেন তপঃসিদ্ধ ঋষিও। এ কি অনুনয়, বিনয় না আদেশ? লৌহকঠিন কন্ঠস্বরে আর কিছু মুহূর্তপূর্বের অনুনয়টুকু অপসৃত। সামনে দন্ডায়মান এই স্থিতধী পুরুষটিকে তিনি একবার বিনা অপরাধে অভিশাপ দিতে দ্বিধা করেননি। কিন্তু সেদিনের সেই দ্বারকাধীশ ছিলেন নির্বিকার; নিজের ওপর নেমে আসা সেই ভয়ংকর অভিশাপেও ছিলেন নির্লিপ্ত। আর আজকের বৃষ্ণিকুলের এই শ্রেষ্ঠ পুরুষটি যেন তাঁর প্রবল ব্যক্তিত্বের আড়ালে রক্ষা করতে চাইছেন পিতৃস্বসার পুত্রদের। যে কোন কিছু মুল্যের বিনিময়ে।

        -- "অপরের কৃত দুষ্কার্যের প্রায়শ্চিত্তের গুরুভার স্বীকার করতেও প্রস্তুত?" অনিমেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন বাসুদেবের প্রতি।

        -- "আপনজন বলে গ্রহণ করেছি যাদের, নিজেকে অভিন্ন জ্ঞান করি যাদের সাথে, তাঁদের কৃত সকল কর্মের ভার বহন করার উপযুক্ত ক্ষমতাও পরমেশ্বর যেন এই স্কন্ধতে দান করেন।" অদ্ভুত এক নির্লিপ্ত হাসি খেলে যায় আর্যাবর্তের শ্রেষ্ঠ পুরুষটির নয়নে-আননে।

         -- "আমার আশীর্বাদ বুঝি নিষ্প্রয়োজন দেবকীনন্দনের!"- স্থির চোখে বাসুদেবের দিকে তাকিয়ে বললেন দুর্বাসা।

         -- "আমাকে এই আশীর্বাদ করুন যেন আপন ধর্মপথ থেকে বিচ্যুত না হই।"- জোড়হস্তে মস্তক নত করলেন জনার্দন।

         আলোকদুত্যিসম্পন্ন এই পুরুষ সিংহের প্রতি মুগ্ধতার আবেশ যেন ছড়িয়ে পড়ল তাপস দুর্বাসার অন্তঃস্থলেও। দক্ষিণ হস্তখানি ঈষৎ তুললেন তপস্বী।

        -- "ধর্মের সংজ্ঞা  হও বাসুদেব।"


 ×                        ×                      ×


 আগামীকালের জন্য সংগৃহীত রন্ধন সামগ্রী নিয়ে যথাসম্ভব দ্রুততায় হস্ত সঞ্চালন করছিলেন পাঞ্চালী।  কিছুটা যেন বিলম্ব হচ্ছে সশিষ্য মুনির প্রত্যাবর্তনের। যদিও এই বিলম্ব যে মুনির ক্রোধাগ্নিতে ভস্ম হতে কিছু কালক্ষেপ ব্যতীত আর কিছু নয়- তা বুঝতে পারছেন সকলেই।

       -- "পাঞ্চালী!" 

       আরক্ত নয়নে কখন যে তৃতীয় পান্ডব এসে দাঁড়িয়েছেন, তা লক্ষ্য করেননি পাঞ্চালী। মধ্যম পান্ডব  রন্ধনকার্যে যথাসম্ভব সাহায্য করে যাচ্ছেন পাঞ্চালীকে। পঞ্চ পান্ডবের উদ্দেশ্যে নির্মিত পঞ্চচুল্লীতেও এত জন ব্যক্তির রন্ধন সম্পূর্ণ করা অসম্ভব জেনেও দুজনে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দুর্ভাগ্যপীড়িত এই জীবনে আর কতবার যে ভাগ্যবিধাতা পরীক্ষা নেবেন, তা জানেন না পাঞ্চালী। তবে এক্ষণে ফাল্গুনীকে দেখে আরেকজনের কথা  মনে এলো। হয়ত ফাল্গুনীর সাথে বাহ্যিক কিছুটা সাদৃশ্য থাকার দরুণ। অসামান্য ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, অলোকসামান্য "তিনি" উপস্থিত থাকলে সেইদিনের দ্যুতক্রীড়ার ফলাফল হয়তো ভিন্ন হতো। হতেই দিতেন না হয়তো সেই ছদ্মক্রীড়া। প্রতারিত হয়ে ইন্দ্রপ্রস্থের অতুল ঐশ্বর্য ত্যাগ করে পরম ক্ষত্রিয় বীর পঞ্চ স্বামী যে এই পর্ণকুটিরে আগমনের সংবাদ যদি তিনি অবগত হতেন, তবে এর কোন সমাধান করতেনই। কিন্তু এক্ষণে এ চিন্তা করাও আকাশকুসুম। শুধু প্রবল এক দীর্ঘশ্বাস গোপন করে পাঞ্চালী অস্ফুটে বললেন - "হে মধুসূদন!"

     যে কথা বলতে ফাল্গুনী কুটীরে প্রবেশ করেছিলেন তা চাপা রয়ে গেল সেই মুহূর্তেই বাহিরে রথচক্রের ঘর্ঘর  শব্দে। 

     এ কার কন্ঠস্বর! স্বপ্ন না বাস্তবেই "তাঁর" কন্ঠস্বর হৃদয়খানিতে এত প্রবল জলোচ্ছ্বাসের আলোড়ন তুলছে!

     ওই তো তিনি!! সদাহাস্যোজ্জ্বল মুখে রথ থেকে নেমে এসে জ্যেষ্ঠ পান্ডবভ্রাতাদ্বয়কে জোড়হস্তে ঈষৎ মস্তক নত করে প্রণাম জানিয়ে কনিষ্ঠ নকুল-সহদেবের শিরে নিজ করকমলদ্বয় স্থাপন করলেন আশীর্বাদের ভঙ্গিমায়-- সে তো তিনি ভিন্ন অপর কেউ হতেই পারে না। চিরকালের আবেগতাড়িত ফাল্গুনী তাঁর চরণ বন্দনা করতে উদ্যত হতেই সহাস্যে বলিষ্ঠ বাহুডোরে আপন সুবিস্তৃত বক্ষপটে দৃঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে বলে উঠলেন- "তোমার স্থান তো এখানে পার্থ!"

       যজ্ঞাগ্নির ন্যায় তেজোদ্দীপ্ত পাঞ্চালীর নয়নেও আজ কোথা থেকে বারিরাশি এসে চারিদিকের এই অসম্ভব দৃশ্যপট ঝাপসা করে দিল। শুধু শুনতে পেলেন সখার আকুতি- "জগৎ সংসারের সকল ক্ষুধা নিয়ে আজ তোমার দ্বারে আমি কৃষ্ণা! শাকান্ন কেন, একটি মাত্র অন্নদানা হলেও তা দান করে শীঘ্র আমার জঠরাগ্নিকে নির্বাপিত করো। আহা! কি রন্ধনের সুগন্ধি! সে কি ! আমার আগমনের বার্তা কে পূর্বেই তোমাদের অবগত করালো? ...


 ×                        ×                      ×


      বিলম্ব দেখে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার আদেশে নদীতীর থেকে কিছুক্ষণ আগেই সহদেব অনুসন্ধান করে এসেছেন; নাহ! অযুত শিষ্য সহ দুর্বাসা মুনি নেই সেখানে। তাঁরা কোথায় গেলেন তার উত্তর জানে শুধু বিস্তৃত তটিনী, পক্ষীকুল, পবনদেব আর অনন্ত অম্বর। কিন্তু তাঁরা নিশ্চুপ থেকে তাঁদের অন্তর্ধানের রহস্যময়তাকে নিবিড় করে তুলেছে। 

      শুধু এক পরম রহস্যের হাসি ছায়াখেলা করে যায় বাসুদেবের অধরে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ