তুমি বললে বিপ্লব,
আমি
দেখলাম বন্যাপ্লাবিত ধ্বংসস্তুপের
আঁধার
গহ্বর থেকে মাথা উঁচিয়েছে কিছু বুনো ফুলের চারা।
তুমি ডাক
দিলে বিদ্রোহ,
আমি
দেখলাম দাবদাহে খাক হয়ে যাওয়া পলাশতলির
মাঠ ঘাট
দিগন্ত জুড়ে শাখায় শাখায়
থোকা হয়ে
জ্বলছে বিদ্রোহের লাল রং।
তুমি
শস্ত্র ধরো দাবি মানানোর প্রতিবাদী অনশনে,
আমি দেখি
অবগুণ্ঠনাবৃতা কিছু অবয়ব হেঁটে চলেছে উষাভিমুখে ---
শীর্ণকায়
এক হাতে ধরা তাদের সন্তান,
অপর হাতে
প্রজ্জ্বলিত জ্ঞানের শিখা।
সমাজ
কিংবা পুরুষ, কারওর
অনুমতির
অপেক্ষা
রাখেনা বিশ্বসংসারের চৌকাঠে তাদের পদার্পণ।
তোমাদের
মুষ্টিবদ্ধ হাত উত্তোলিত হয় অধিকার বুঝে নেওয়ার আস্ফালনে,
আমি দেখি
আবর্জনার স্তুপে অপত্য দেহাবশেষ,
এই
পৃথিবীর আলো দেখার অধিকার তার কেড়ে নেওয়া হয়েছে ---
কেন? জবাব দাও।
মোমবাতি-জ্বলা
মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে তুমি চাইছো সুবিচার,
আমি দেখছি
তৃতীয়লিঙ্গ-মানুষ এক --- সমাজে
যার
সমানাধিকারের বিচার করে না কেউ,
আপন পরনের
কাপড় অর্ধেক ছিঁড়ে ঢেকেছে এক কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত দেহ,
রাতের
অমানুষেরা লোলুপতার চিহ্ন রেখে গিয়েছে কোমল শরীরটি জুড়ে;
তোমাদের
অবরোধ মিছিলের বিপরীতে ছুটছে মানুষটি সেই কিশোরীকে কোলে নিয়ে ---
একটু
চিকিৎসার আশায়, সুবিচারের
দাবিতে, একটা
প্রাণ বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
কৃষক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে ঘরে উনুন
জ্বলে না অথচ
দেশময়
আগুন জ্বলে ওঠে তোমাদের ভেদাভেদের ঠোকাঠুকিতে,
আমি
দেখেছি এক ত্যাগী মানুষ যিনি সীমারেখা ভুলে আসমুদ্রহিমাচল
হেঁটে
ফিরেছেন চেতনার গভীরে অদ্বৈত ভাবনার উন্মেষ ঘটাতে;
আমি
দেখেছি উজ্জ্বল নক্ষত্রসম এক মানব ধূমকেতুসম বেগে নিজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে
সাতসমুদ্রের
পাড়ে দাঁড়িয়ে আজানুলম্বিত দুই বাহু
প্রসারিত
করে সমগ্র মানবজাতিকে বেঁধেছিলেন
আত্মার
আত্মীয়তার সম্ভাষণে।
মানুষের
চেহারায় পোশাকে পতাকার রঙে তোমরা খুঁজে চলেছো ধর্ম,
আমি
দেখলাম ক্ষুধার্ত অনাথ শিশু এক --- মন্দির দিল তাকে একমুঠো ভোগান্ন,
কী গভীর
মমতায় সেই এক আঁজলা অন্ন সে ভাগ করে খেল
অপর
পাড়ায় সবুজ চাঁদোয়ার নীচে আশ্রিত গুটিকয় নিষ্পাপ মুখের সাথে।
এই
চাঁদোয়ায় যদি আগুন ধরে,
কোন্
ঈশ্বর আশ্রয় দেবেন তাদের?
ঐ পাড়ায়
যদি শুরু হয় ধ্বংসলীলা,
কোন্
ঈশ্বর মেটাবেন তাদের ক্ষুধার জ্বালা?
তুমি ছুটে
এলে, হাতে লকলক
করছে খোলা ইস্পাত,
কী চাও? --- বিপ্লব, বিদ্রোহ, নিজ অধিকার, সুবিচার,
নাকি
বাঁচাতে চাও ঠুনকো বিশ্বাসের ফানুসটাকে?
আমি আরও
একবার হাতে তুলে নিলাম খাপখোলা ক্ষুরধার কলম,
এসো দেখি, সময়ের চ্যালেঞ্জে টিকে থাকার লড়াইয়ে
বিজয়ী
হয় কে!
0 মন্তব্যসমূহ